ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টানা ৪৮ দিন পর অবশেষে দেশ বন্যামুক্ত হলো

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ১৩ আগস্ট ২০২০

টানা ৪৮ দিন পর অবশেষে দেশ বন্যামুক্ত হলো

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টানা ৪৮ দিন পর অবশেষে বন্যামুক্ত হলো দেশ। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, মঙ্গলবার দেশের চার জেলায় বন্যার পানি ছিল। বুধবার এ জেলাগুলো থেকেও পানি নেমে গেছে। ফলে দেশের সব জেলাই এখন বন্যামুক্ত। যদিও কোন কোন নদীর পানি এখন বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর কিছু কিছু নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। কিন্তু এতে নতুন করে বন্যার প্রভাব পড়বে না। দু’একদিনের মধ্যে সব নদীর পানিও বিপদসীমার নিচে চলে আসবে। তবে বন্যামুক্ত হলেও দেশের উত্তরের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের সুরমা কুশিয়ারা নদীর পানি আবার বাড়ছে। তবে এর ফলে বন্যার অবনতির আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, কিছু কিছু নদীর পানি বাড়লে দু’এক দিনের মধ্যে তা আবারও কমতে শুরু করবে। ফলে এই মাসে নতুন করে বন্যার কোন আশঙ্কা নেই। তবে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে বন্যার আশঙ্কা এখনই উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। ওই সময়ে দেশে আবারও বন্যা দেখা দিতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রকৃতিতে এখন চলছে বাংলা শ্রাবণ মাস। দু’একদিনের মধ্যে ভাদ্রমাস শুরু হবে। ঋতু বৈচিত্র্যের ধরন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বন্যার আশঙ্কা থাকে। ওই সময়ে দেশে মৌসুমির বায়ুর প্রভাবে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের রেকর্ড রয়েছে। আবহাওয়া অফিসের হিসাব অনুযায়ী, ২০০৪ সালে সেপ্টেম্বরের সারাদেশে একটানা সাত ভয়াবহ বৃষ্টিপাত হয়। এর ফলে প্রায় সারাদেশে বন্যা দেখা দেয়। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, আগস্টে নতুন করে আর বন্যার আশঙ্কা নেই। তবে এবার সেপ্টেম্বরের বন্যার সম্ভাবনাকে এখনই উড়িয়ে দেয়া যায় না। এবার সেপ্টেম্বর মাসেও আরেক দফা বন্যা দেখা দিতে পারে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মধ্য ভাদ্রের বন্যার কথা উল্লেখ করে তা মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী তিনদিনের মধ্যে দেশে ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, আগামী তিনদিন পর মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হয়ে ওঠার কারণে সারাদেশে ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। টানা তিনদিন ভারি বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও আগস্টে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হতে পারে। তিনি বলেন, দেশে স্বাভাবিক বন্যার সময় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। ওই সময় ভারি বৃষ্টির কারণে বন্যার সৃষ্টি হতে পারে। তবে এখনি বলা যাচ্ছে না সেপ্টেম্বরে ভারি বৃষ্টিপাত হবে কিনা। গত ২৬ জুন দেশে প্রথম দফায় বন্যার প্রকোপ শুরু হয়। টানা ৪৮ দিন বন্যার স্থায়িত্ব শেষে দেশ থেকে বন্যা বিদায় নিয়েছে বুধবার। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, মঙ্গলবারও দেশের চার জেলায় বন্যার পানি ছিল। বুধবার সেসব জেলা থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। এখন দেশের কোথাও বন্যা নেই। তবে নদী তীরবর্তী এলাকায় এখনও উপচেপড়া পানি থাকলে এতে বন্যার কোন প্রভাব নেই। বন্যামুক্ত হওয়ার কারণে লোকজন পানিবন্দীদশা থেকে মুক্ত হয়েছে। ফিরে গেছে নিজ বসতভিটায়। শুরু করেছে নতুন করে বাঁচার সংগ্রাম। তবে বন্যামুক্ত হলে নদ-নদীতে আরও এক দফা পানি বাড়তে শুরু করেছে। পাউবো জানায়, সুরমা ও কুশিয়ারার পর সিলেটের সীমান্ত নদ-নদীর পানিও বাড়ছে। সিলেট অঞ্চলের দুই প্রধান নদী সুরমা ও কুশিয়ারার উৎসমুখেও পানি বাড়ছে। উজানে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টির কারণে ব্রহ্মপুত্র-যুমনা ও সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে। তবে পানি বাড়লে এতে ফের বন্যার কোন প্রভাব পড়বে না। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, বর্তমানে পাঁচটি নদীর ছয় পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বিপদসীমার ওপরে পানি থাকলেও বন্যা আক্রান্ত জেলা না থাকায় বলা যায়, বুধবার থেকে বিদায় নিয়েছে বন্যা। এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আরেক দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামীকাল ১৪ আগস্টের পর কুড়িগ্রামের চিলমারী, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, গাইবান্ধার ফুলছড়ি, সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলা ও কাজীপুর, জামালপুরের বাহাদুরাবাদ, টাঙ্গাইলের এলাসিন এবং মানিকগঞ্জের আরিচা পয়েন্টে পানি বাড়তে পারে। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি বাড়ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি কমছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উজান মেঘনা অববাহিকার সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা সিটি কর্পোরেশন সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। অন্যদিকে দেশে বিভিন্ন স্থানে এবং উজানেও ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য বৃষ্টি হয়েছে নাকুয়াগাঁওয়ে ১৬৮, গাইবান্ধায় ১১০, কক্সবাজারে ৮০, লরেরগড়ে ১৩৫, মহেশখোলায় ৮৪, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭৫, লাটুতে ১১৩, চিলমারীতে ৮২ ও টেকনাফে ৬০ মিলিমিটার। অন্যদিকে উজানে অর্থাৎ বাংলাদেশ সংলগ্ন ভারতীয় অংশের ধুবড়িতে ১২১ ও চেরাপুঞ্জিতে ৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এ বছর ৩৩ জেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। বন্যাকবলিত জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ। বন্যাকবলিত উপজেলার সংখ্যা ১৬৫টি এবং ইউনিয়নের সংখ্যা এক হাজার ৮৬টি। আর পানিবন্দী পরিবার সংখ্যা নয় লাখ ৭৪ হাজার ৩১৩টি এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোক সংখ্যা ৫৪ লাখ ৫১ হাজার ৫৮৬ জন। বন্যায় এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৪১ জন। ইতোমধ্যেই এসব জেলা থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। এ মাসে নতুন করে এসব জেলায় বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে সেপ্টেম্বরের আরও এক দফায় বন্যার শঙ্কা এখনি উড়িয়ে দিচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড।
×