ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ছিন্ন বীণায় নতুন তার

প্রকাশিত: ২১:৩৬, ১৩ আগস্ট ২০২০

ছিন্ন বীণায় নতুন তার

‘তোল ছিন্ন বীণা বাঁধো নতুন তারে/ ভরে নাও সুর গাও জীবনেরই জয়গান’ আশা ভোঁসলের গাওয়া এই গানটি হতাশা নিরাশার মধ্যেও আমাদের আশা যোগায়। এই গানের দ্বিতীয় অন্তরা আমাদের আরও ভাবিয়ে তুলেছে, ‘চলাই জীবন থেমে যাওয়াই মরণ/ ভেবে নাও তুমি কাকে করবে বরণ।’ কোভিড-১৯ রোগের কারণে জীবন এখন থেমে গেছে, মৃত্যু ভয়ে কেউ কেউ স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী, কেউবা চাকরি হারিয়ে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে, কেউ কেউ হতাশায় নিরাশায় দিন কাটাচ্ছে। মসজিদ, গির্জা, মন্দির, প্যাগোডায় উপাসকদের উপস্থিতি কম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী শূন্য। গির্জায় বিয়ে দেয়া, দীক্ষা¯œান, হস্তার্পণ, খ্রিস্টপ্রসাদ সংস্কার প্রদান, ধর্মশিক্ষা কোনটাই নেই। এবারের খ্রীস্টানদের ইস্টার সানডে ছিল উৎসবহীন। ভাটিকানের সেন্ট পিটারস্ স্কয়ার ছিল শূন্য, গির্জায় খ্রিস্টভক্ত ছিল না। অথচ একদিন এই গির্জা ছিল লোকদের উপস্থিতিতে মুখরিত। সম্মিলিত প্রার্থনা সঙ্গীতে ছিল স্বর্গীয় পরিবেশ। আজ সবই ইতিহাস। গির্জায় প্রতিদিনের মতো নিয়মানুযায়ী ঘণ্টা বাজে কিন্তু বাইরে থেকে কোন খ্রিস্টভক্ত আসে না। পুরোহিতেরা খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করছে আর অনলাইনে সম্প্রচারিত হচ্ছে। ঘরে বসে খ্রিস্টভক্তেরা প্রার্থনা করছে। যে গির্জাগুলো এতদিন ছিল খ্রিস্টভক্তে পরিপূর্ণ ছিল এখন শূন্যতা বিরাজ করছে। যারা এতদিন ঘণ্টার ডাক উপেক্ষা করেছে, গির্জায় আসার প্রয়োজনীয় উপলব্ধি করেনি, তারা আজ গির্জায় আসার জন্য ছটফট করছে। আর আমরা পুরোহিতরা যাদের এতদিন কাছে পেয়েও মূল্য দিইনি, তাদের উপস্থিতি গুরুত্ব দিইনি, আমরা তাদের প্রয়োজনীয়তা এখন উপলব্ধি করছি। হিন্দুদের জন্মাষ্টমী, বুদ্ধদের বৌদ্ধ পূর্ণিমা ও মুসলিমদের ঈদ ছিল নিরানন্দ ও উৎসবহীন। মক্কায় হজ পালন ছিল সীমিত, লোক সংখ্যা ছিল খুবই কম। মুজিববর্ষ পালন, পহেলা বৈশাখ উৎসব, বর্ষা বন্দনা কোনটাই উৎসবমুখর পরিবেশে হয়নি। করোনাভাইরাসে আমাদের জীবনবীণার তারগুলো ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আমাদের সেই ছিন্ন বীণা নতুন করে বাঁধতে হবে, সুর তুলতে হবে। জীবনের বীণায় ছন্দ ফিরিয়ে আনতে হবে। আর তাই কেউ কেউ মৃত্যুভয় তুচ্ছ করে সংগ্রাম করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করছে। আগের মতো কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সচেতন লোকেরা চলাফেরা ও কাজকর্ম করে যাচ্ছে। শ্রমজীবী লোকেরা অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্কুল-কলেজগুলোতে অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে। কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনায় আগ্রহী ও ব্যস্ত হয়ে উঠছে। এমনি করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। চারদিকে এত শূন্যতা, এত হতাশা-নিরাশার মাঝেও আশার প্রদীপ জে¦লে সুদিনের প্রতীক্ষায় আছি। তাই তো প্রতিদিন গির্জায় গেয়ে যাই এই গান, ‘তোমার রাজ্য আসুক প্রভু, তোমার রাজ্য আসুক/এই নিরাশার পৃথিবীতে, এই হতাশার পৃথিবীতে, এই বেদনার পৃথিবীতে, তোমার রাজ্য আসুক প্রভু।’ আশা করছি ‘একদিন ঝড় থেমে যাবে/পৃথিবী আবার শান্ত হবে।’ এখন যে শহরের রাস্তায় রাস্তায় মাস্ক বিক্রি হচ্ছে, একদিন আবার সেই শহরের রাস্তায় রাস্তায় ফুল বিক্রি হবে। আবার রমনা উদ্যান, টিএসসি মোড়, হাতিরঝিল, শহীদ মিনার আগের মতো মুখরিত হবে, প্রেমিকযুগল হাতে হাতে রেখে হাঁটবে, গির্জা-মন্দির ঈশ^রের বন্দনায় স্তুতিগানে মুখরিত হবে। জিন্দাবাহার, ঢাকা থেকে
×