ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আফসারুল আলম মামুন

নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়ানো

প্রকাশিত: ২১:৩৫, ১৩ আগস্ট ২০২০

নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়ানো

একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে এসে কেউ হয়তবা কখনও ভাবতে পারে নাই পৃথিবী কখনও এমনিভাবে থমকে যেতে পারে? আজ অদৃশ্য এক শক্তির ভয়ে কুপোকাত বিশ্বের উন্নত থেকে অনুন্নত সকল রাষ্ট্র। গত বছরের ডিসেম্বরে চীনে প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশে শনাক্ত হয় গত মার্চে। এক দিন দুই দিন করে আজ পাঁচ মাস হতে চলল। সময়ের চাকায় ভর করে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে থাকল। যার ফলে করোনার এই সময়ে শিশু থেকে বৃদ্ধ, ধনী থেকে গরিব, শিল্পপতি থেকে চাকরিজীবী, সরকারের সর্বোচ্চ কর্তা থেকে সর্বনিম্ন, সবাই আজ অসহায় এবং আতঙ্কে জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। অর্থনীতি থেকে শিক্ষা সব অধ্যায়েই স্তব্ধতা ভর করেছে। গরিবরা কিছুটা ত্রাণ পেলেও মধ্যবিত্ত নামে একটি গোষ্ঠী চক্ষু লজ্জায় পর্যুদস্ত। করোনায় সব আশা যেন সন্ধ্যা প্রদীপের মতো একটু বাতাসেই নিভে যাচ্ছে। করোনায় যখন জনজীবন স্তম্ভিত ঠিক তখনই এদেশের মানুষকে আম্ফানের মতো ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ও মোকাবেলা করতে হয়েছে। আর এখন অতিবাহিত হচ্ছে ভয়াবহ বন্যার সঙ্গে নদী ভাঙনের মতো দুর্যোগ। যেখানে জীবনের সঙ্গে শেষ হচ্ছে উপার্জিত সব সম্বল। এতকিছুর পরও জীবন কখনও থেমে থাকেনি। এদেশের মানুষ জানে জীবনের সকল পাপড়ি কখনও এক বৃন্তে পাওয়া যায়নি। এরা জানে জীবনের প্রতিনিয়ত প্রয়োজন হয় নানা আনুষঙ্গিকের। আর এই প্রয়োজনগুলিও মৃত্যুর ভয়কে তুচ্ছ করে দেয়। এখানে পেটের ক্ষুধা করোনার ভয়কে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখায়। এরা জানে মনকে হয়ত কিছুদিন শিকলে আবদ্ধ করে রাখার সুযোগ থাকলেও পেটকে রাখা সম্ভব নয়। সকালের খাবারের পর দুপুর না হতেই পেটের আবারও দানা পানি চাই। আর পেটের চাহিদা পূরণে করোনাকে সৃষ্টিকর্তার ভরসায় রেখে নেমে পড়তে হচ্ছে রাজপথে জীবিকার অন্বেষণে। কিন্তু রাজপথের পরিবেশটাও বড্ড অচেনা কারণ ভোরের আলোর সঙ্গে এখন আর স্কুলের ঘণ্টা বাজেনি, কলেজ বাসগুলো আর রাস্তায় ভিড় করেনি, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে এখন আর জীবনের নতুন গল্প সাজেনি, স্টেডিয়ামে এখন আর সাকিবের খেলা হয়নি। যার ফলে রাজপথের সেই পুরনো সেই কাজকে পেছনে ফেলে এক শ্রেণীর মানুষকে নতুন কাজের সন্ধানে বের হতে হচ্ছে । কিন্তু সেখানে তো পূর্বের মতো আনন্দ নেই, নেই দিন শেষে ভাল কিছু রোজগারের পর তৃপ্তিমাখা হাসি। তদুপরি যাই হয় তাই আলহামদুলিল্লাহ। এই তো গেল পেটের ক্ষুধার হিসাব। মনের ক্ষুধাও জীবনের নানা পথের সামনে থমকে দাঁড়ায়। মনের আবেগের কাছে করোনার আতঙ্ক ছোট হয়ে যায়। এই পাঁচ মাসে এদেশের প্রেক্ষাপটে অতিক্রম করেছে দুটি ঈদ, একটি রমজান, একটি পহেলা বৈশাখ, একটি হজ। এ ছাড়াও স্বাভাবিক জীবন আর করোনাকালের হিসাব মিটাতে মিটাতে আজ হাজারো অনুষ্ঠান চলে গেছে সকলের চোখের সামনে দিয়ে। এর মধ্য দিয়েই মানুষ নতুন করে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে শিখেছে। মনের ভেতরের ভালবাসায় লালন করেছে পহেলা বৈশাখ। স্বপ্ন দেখেছে করোনামুক্ত দেশে হাজারো আবেগের বহির্প্রকাশের ভেতরে পুরনো আনন্দের উপাখ্যান তৈরির। জীবন মৃত্যুর খেলায় যারা জয়ী হচ্ছে তারা আবারও নতুন করে হাল ধরছে। স্রোতের বিপরীতে চলতে শিখছে। আর এভাবেই করোনার এই ভয়াল সময়েই নতুন স্বপ্ন বাসা বুনছে। করোনার মধ্যেই নতুন করে বাঁচার আকাক্সক্ষা সৃষ্টি হচ্ছে। আর এই আকাক্সক্ষা বা আশাই তৈরি করছে জীবনের নতুন পরিবেশ, নতুন পথ। আর সহসাই মনের ভেতর উচ্চারণ হচ্ছে জাগো বাহে, কোনঠে সবাই। ময়মনসিংহ থেকে
×