ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফিরে আসছে পাটশিল্প

প্রকাশিত: ২১:২২, ১৩ আগস্ট ২০২০

ফিরে আসছে পাটশিল্প

গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে আসতে শুরু করেছে নতুন পাট। ইতোমধ্যে ৩০ শতাংশ পাট কেটে জাগ দেয়ার পর শুকানো হয়েছে। এ বছর ৭ দশমিক ২৬ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৮২ লাখ বেল পাট। নানা সঙ্কটের মধ্য দিয়ে গেলেও দেশে বর্তমানে পাটচাষীর সংখ্যা ৪০ লাখ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চার কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল পাটচাষ, পাটশিল্প, পাট পণ্য রফতানি ইত্যাদির সঙ্গে। প্রতি বছর পাট মৌসুমে গড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পেয়ে উপকৃত হন কৃষক। কৃষকের কাছ থেকে বছরে অন্তত ১৩ লাখ ‘বেল’ পাট এককভাবে কিনে থাকে সরকার তথা বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশন বা বিজেএমসি। তবে কিছুদিন আগে ২ জুলাই সরকার অব্যাহত লোকসানের মুখে রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি পাটকল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। ফলে এবার সমূহ বিপাকে পড়েছে পাট চাষীরা। এ অবস্থায় কৃষকবান্ধব সরকার পাট চাষীদের স্বার্থ রক্ষায় খুব দ্রুতই বন্ধ হয়ে যাওয়া পাটকলগুলো সরকারী-বেসরকারী যৌথ উদ্যোগে অথবা দীর্ঘমেয়াদী লিজিং প্রক্রিয়ায় চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। অনেক বেসরকারী উদ্যোক্তা এ বিষয়ে আগ্রহও দেখিয়েছেন। এটি নতুন আশা ও উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক প্রাপ্ত শ্রমিকদের মধ্যে। তবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত তরুণ, দক্ষ, অভিজ্ঞ ও কর্মঠ শ্রমিকদেরই অগ্রাধিকার দেয়া হবে। ২৫টি সরকারী পাটকলে মূল কারখানার বাইরে যথেষ্ট অব্যবহৃত জায়গা রয়েছে। পুরনো জরাজীর্ণ পাটকলগুলো আধুনিক ও উন্নত করার পাশাপাশি পাটপণ্য বহুমুখীকরণসহ বাজারের চলমান চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রাখা হবে, যাতে লোকসানের সম্মুখীন হতে না হয় কোন অবস্থাতেই। বেসরকারী পাটকলগুলো যেখানে ক্রমাগত লাভের মুখ দেখে ফুলে ফেঁপে উঠছে, সেখানে সরকারী পাটকলগুলোতে লোকসান দেয়ার আদৌ কোন কারণ নেই। উল্লেখ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে ৭৬টি পাটকল রাষ্ট্রায়ত্ত করে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিজেএমসি। বঙ্গবন্ধু পরবর্তী সরকারগুলোর অদক্ষতা, অযোগ্যতা, ভুলনীতি, ষড়যন্ত্র ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় সর্ববৃহৎ পাটকল আদমজীসহ একে একে বন্ধ করে দিতে হয়েছে পাটকলগুলো। সর্বশেষ টিকে ছিল ২৫টি পাটকল। প্রতিষ্ঠার ৪৮ বছরের মধ্যে ৪৪ বছরই লোকসানে ছিল বিজেএমসি, যার পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি। নতুন উদ্যম ও পরিকল্পনায় পাটকলগুলো চালু হলে তা আর ঘটবে না বলেই প্রত্যাশা। বাস্তবেও স্বর্ণযুগ ফিরে এসেছে সোনালি আঁশ পাটের। বর্তমানে পাট থেকে তৈরি হচ্ছে ২৩৫ রকমের আকর্ষণীয় ও মূল্যবান পণ্য। সবচেয়ে বড় কথা, পাট থেকে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব পচনশীল পলিথিন। বর্তমানে যে প্লাস্টিক পলিথিন দেশে ও বিদেশে যথেচ্ছ ব্যবহৃত হচ্ছে তা প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্য সমূহ ক্ষতিকর। সে অবস্থায় বিকল্প হিসেবে পাটের পলিথিন ব্যবহারের অত্যুজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বিশ্বব্যাপী। বিশ্ববাজারে পাটের ব্যাগের চাহিদা রয়েছে ৫০০ বিলিয়ন পিসের। এর ১০ শতাংশ বাজার দখল করতে পারলে বছরে আয় করা সম্ভব ৫০ হাজার কোটি টাকা। পাট খাতের বৈশ্বিক রফতানি আয়ের ৭২ শতাংশ এখনও বাংলাদেশের দখলে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ঘোষণা দিয়েছে যে, চলতি বছরের মধ্যে সদস্যভুক্ত সব দেশ পণ্যের মোড়কসহ বহনের জন্য সব ব্যাগে প্লাস্টিক ও কৃত্রিম আঁশজাত উপজাত দ্রব্যের ব্যবহার বন্ধ করবে। বাংলাদেশ জুট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা পাটের জন্ম রহস্যের (জেনোম) তথ্য দিয়ে উদ্ভাবন করেছেন নতুন জাতের পাটবীজ, যা থেকে প্রায় তুলার সুতার মতো স্বচ্ছ আঁশ উৎপাদন করা সম্ভব হবে অচিরেই। এই সুতা দিয়ে উন্নতমানের জামদানিসদৃশ কাপড় উৎপাদন করা সম্ভব। পাটের এই অমিত সম্ভাবনাকে বহুমুখী ও সর্বতোভাবে কাজে লাগাতে হবে সরকার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ, পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী দলসহ মাঠপর্যায়ে কৃষকদের। আর তা হলেই কেবল ফিরে আসতে পারে একদা বাংলা থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়া পাটের স্বর্ণালি গৌরব। তদুপরি পাটকল শ্রমিকদের সুদিন।
×