যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে চীন কখনই মাথা ঘামায় না। আর দেশটির আসন্ন নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার কোন অভিপ্রায় চীনের নেই। মঙ্গলবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লি জিয়ান এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। উল্লেখ্য, সম্প্রতি মার্কিন নির্বাচনে চীনসহ আরও কয়েক দেশের হস্তক্ষেপ নিয়ে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। খবর সিনহুয়া ও এএফপির।
ঝাও লি জিয়ান বলেন, কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা দেশটির নির্বাচনে চীনা যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করছেন। এসব বন্ধ করা উচিত। তিনি বলেন, নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ নেয়া উচিত। পাশাপাশি চীনের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার বন্ধ করা উচিত। ঝাও লি জিয়ান বলেন, পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে বিশ্বাসী। মার্কিন ন্যাশনাল কাউন্টার ইনটেলিজেন্স এ্যান্ড সিকিউরিটি সেন্টার (এনসিএসসি) প্রধান উইলিয়াম এভানিনা সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেন, আসন্ন মার্কিন নির্বাচনে চীন, রাশিয়া, ও ইরান প্রভাব বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তার দাবি, মস্কো প্রশাসন ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দ্বিতীয় মেয়াদে মসনদে ফেরাতে চাইছে। কারণ ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী জো বাইডেনকে নিয়ে পুতিন প্রশাসনের ঘোর আপত্তি রয়েছে। অপরদিকে বেজিং ট্রাম্পের বিপক্ষে কাজ করছে। উইলিয়াম এভানিনা আগামী নির্বাচনে বিদেশী হস্তক্ষেপ তদন্তে কাজ করছেন। এভানিনা বলেন, ২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচন সামনে রেখে চীন তার প্রভাব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন কিছু চীনা কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পাশাপাশি করোনাভাইরাসের উৎপত্তির জন্য ট্রাম্প বার বার চীনকে দায়ী করেছে। হিউস্টনে চীনা কনস্যুলেট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি দক্ষিণ চীন সাগর ও হংকং নিয়ে কিছু চীনা কর্মকর্তার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করার বিষয়টি বেজিং ভালভাবে নেয়নি। বেজিং মনে করছে-চীনবিরোধী এসব কর্মকাণ্ড এবারের নির্বাচনে ট্রাম্পের পক্ষে সুফল বয়ে আনতে পারে। একইদিন এক অনুষ্ঠানে মার্কিন নির্বাচনে চীনা হস্তক্ষেপ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বেজিং ঘুমন্ত জো বাইডেনকে জেতাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আর আমাকে ঠকাতে চাইছে। ট্রাম্প বলেন, এখন আমাদের দেশ (যুক্তরাষ্ট্র) নিয়ে চীন দিবাস্বপ্ন দেখছে। ইরান প্রসঙ্গে উইলিয়াম এভানিনা বলেন, তেহরান যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে অবমাননা করে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের সাহায্যে প্রতিনিয়ত মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে বিভক্তি তৈরির চেষ্টা করছে। ট্রাম্পকে পরাজিত করতে ইরান কাজ করছে। অপরদিকে রাশিয়া জো বাইডেনের প্রচার ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তিনি বলেন, জো বাইডেনের মনোনয়ন লড়াইয়ের সময় থেকেই রাশিয়া তার বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটাচ্ছে। বাইডেনকে রাশিয়াবিরোধী নেতা হিসেবে পরিচিত করাতে চাইছে। ওবামা আমলে ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ইউক্রেন বিষয়ক ভূমিকার জন্য রাশিয়া বাইডেনকে বরাবর সমালোচনা করে। অবশ্য ট্রাম্পের পক্ষে রাশিয়ার কাজ করার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। শুক্রবার নিউজার্সিতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে আমার সম্পর্ক বরাবর খারাপ। তবে একই সময় চীনা হস্তক্ষেপের বিষয়ের পক্ষে মত দেন ট্রাম্প। এভানিনা বলেন, রুশ সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং রুশ টেলিভিশনে পরোক্ষভাবে ট্রাম্পের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে। ইউক্রেনের রুশপন্থী নেতারাও একই কাজ করছেন। সেখানে বাইডেনের ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তদন্তের বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসা হচ্ছে। শুক্রবার প্রকাশিত ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৬ সালের নির্বাচনে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেছিল। রুশ গোয়েন্দারা ট্রাম্পের প্রচার শিবিরের পক্ষে মাঠে ছিল। অবশ্য এ সংক্রান্ত অভিযোগ মস্কো বরাবর অস্বীকার করেছে।
