ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়র আতিকের পরিদর্শন

উত্তরা থেকে তেজগাঁও, দশ ইউটার্ন নির্মাণ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ১২ আগস্ট ২০২০

উত্তরা থেকে তেজগাঁও, দশ ইউটার্ন নির্মাণ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরা থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত দশটি ইউটার্ন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম। একইসঙ্গে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে উত্তরা থেকে তেজগাঁও নাবিস্কো পর্যন্ত যেতে এখন যে সময় ব্যয় হয় অনেকাংশে সময় কমে যাবে বলেও জানান তিনি। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাজধানীর এয়ারপোর্ট রোডের কাওলা থেকে তেজগাঁও নাবিস্কো পর্যন্ত ইউটার্নগুলোর নির্মাণ কাজ দর্শনকালে এ ঘোষণা দেন। এ সময় ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল হাই, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। পরিদর্শনকালে মেয়র আতিক বলেন, আমরা দেখেছি উত্তরায় রাজলক্ষ্মীর সামনে এবং জসীমউদদীন মোড়ে কি রকম যানজট হতো। এই কাজটির পরিকল্পনা ২০১৬ সালে নেয়া হয়। মেয়র আনিসুল হকের মুত্যুতে কাজটি থমকে গিয়েছিল। আমি নয় মাসের জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর আমার একটা কমিটমেন্ট ছিল যে, আনিসুল হকের এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা হবে। তার স্বপ্নগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম ছিল। পরবর্তীতে দেখা গেল এখানে সড়ক ও জনপথের জমি আছে। এছাড়া আরও অনেকগুলো বাধা ছিল। আমরা মিটিং করে সবগুলো বাধা নিষ্পন্ন করি। রোডস এ্যান্ড হাইওয়েজের জায়গা আমাদের কিনে নিতে হয়েছে, ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে সময় অতিবাহিত হয়েছে। ডিএনসিসি মেয়র বলেন, এই প্রকল্পের কাজ শেষ করতে পারলে জনগণ অনেক উপকৃত হবে। এর প্রমাণ আপনারা পেয়েছেন উত্তরায় রাজলক্ষ্মীর সামনে এবং জসীমউদদীন মোড়ে। ভাল কাজগুলো কোনভাবেই বন্ধ রাখা যাবে না। এই শহরকে সুন্দর করতেই হবে। তিনি বলেন, পহেলা অক্টোবর থেকে ঢাকা উত্তরে যত ঝুলন্ত তার আছে সেগুলো কেটে ফেলা হবে। ঝুলন্ত তার সরানোর জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেয়া হলো। এছাড়া রাস্তায় বা ল্যাম্পপোস্টে অবৈধ ঝুলন্ত পোস্টার বা বিজ্ঞাপন বোর্ড থাকতে পারবে না। তাছাড়া শহরের দেয়ালে যারা লিখবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উল্লেখ্য, রাজধানীর যানজট নিরসনে প্রথমে তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে উত্তরা আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত মোট ১১টি ইউটার্ন নির্মাণে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ জন্য প্রকল্পের নাম দেয়া হয় ১১টি ইউটার্ন নির্মাণ প্রকল্প। তবে এ সময় উত্তরার গলফ ক্লাব ইউটার্নটির নির্মাণ বাতিল করা হয়। ফলে তা ১০টিতে নেমে আসে। ইউটার্ন নির্মাণের স্থানগুলো হচ্ছে- উত্তরা রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স, জসীমউদ্দীন রোড, র‌্যাব-১-এর কার্যালয়, কাওলার ফ্লাইং একাডেমি, বনানী ফ্লাইওভারের নিচে, বনানী-কাকলী রেলস্টেশন, বনানী চেয়ারম্যান বাড়ি, মহাখালী ফ্লাইওভার, মহাখালী আন্তনগর বাস টার্মিনাল, কোহিনূর কেমিক্যালস থেকে সাতরাস্তা ইন্টারসেকশন। ডিএনসিসির কর্মকর্তাদের মতে ইউটার্নগুলো তৈরি হলে এই বিমানবন্দর সড়কের যানজট প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ কমে যাবে। দুই ধরনের ইউটার্ন নকশা করা হয়েছে। একটিতে ছোট-বড় দুই ধরনের যানবাহনই চলবে, অন্যটিতে শুধু ছোট গাড়ি চলবে। একটি ইউটার্ন থেকে আরেকটি ইউটার্নে সর্বনিম্ন দূরত্ব হবে ৮০০ মিটার আর সর্বোচ্চ ৩ দশমিক ২ কিলোমিটার। এসব ইউটার্ন দিয়ে গাড়িগুলো স্বাভাবিক গতিতে চলাচল করতে পারবে। ফলে তখন বিভিন্ন মোড়ে কোন ট্রাফিক পুলিশেরও প্রয়োজন হবে না। ডিএনসিসি সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক অবস্থায় ডিএনসিসি এলাকায় ১২টি ইউটার্ন নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও পরে তা ১০টিতে নামিয়ে আনা হয়। এগুলো নির্মাণ করতে ৩৭ শতাংশ জমির প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে সড়ক ও জনপথের ৩১ দশমিক ২৫ বিঘা, রেলওয়ের ১ দশমিক ৬১ বিঘা এবং সিভিল এ্যাভিয়েশনের ১ দশমিক ৮৩ বিঘা। এসব জমি খালি আছে, কোন অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে না। তবে ২০১৭ সালের জুনে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ ২০২১ সালের জুন হলেও প্রকল্পটি ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করতে চায় ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ডিএনসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খন্দকার মাহবুব হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, উত্তরার রাজলক্ষ্মী ও র‌্যাব-১ কার্যালয়ের সামনের ইউটার্ন ইতোমধ্যেই চালু করা হয়েছে। আর কাওলা এলাকার ইউটার্নটির কাজ প্রায় ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে। এছাড়া আগামী সপ্তাহে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের সামনের ইউটার্নটির কাজ শুরু করা হবে। এর বাইরে বাকি ৭টি ইউটার্নের কাজ গড়ে ৪০ ভাগ সম্পন্ন করা হয়েছে। অতিদ্রুত শেষ করতে প্রয়োজনীয় সকল কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সর্বশেষ প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ৩১ কোটি টাকা। যার মধ্যে ২৫ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয় ও বাকি ৬ কোটি টাকা সড়ক ও জনপথ বিভাগের স্থাপনা ভাঙ্গার জন্য ক্ষতিপূরণ ও ইউটিলিটি সার্ভিসের জন্য প্রদান করা হয়েছে। প্রকল্প ব্যয়ের শতকরা ৮০ ভাগ সরকারী অর্থে ও বাকি বিশ ভাগ ডিএনসিসি নিজস্ব অর্থে বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি চালু হলে ছোট বড় মোট ২০টি ক্রসিংয়ে কোন প্রকার গাড়ি থামতে হবে না।
×