ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চরম খাদ্য সঙ্কট

লেবাননে ৪০ হাজার কর্মী বাংলাদেশে ফিরতে সহযোগিতা চান

প্রকাশিত: ২৩:০৮, ১২ আগস্ট ২০২০

লেবাননে ৪০ হাজার কর্মী বাংলাদেশে ফিরতে সহযোগিতা চান

ফিরোজ মান্না ॥ লেবাননে বাংলাদেশী ৪০ হাজার কর্মী দেশে ফেরার জন্য দূতাবাসের সহযোগিতা চেয়েছে। বৈরুত বিস্ফোরণের পর দেশটিতে চরম খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। হাজার হাজার কর্মী খেয়ে না খেয়ে জীবন যাপন করছেন। এখন তারা দেশে ফেরার জন্য অস্থির হয়ে পড়েছেন। বিমানের টিকেট কাটার জন্য তাদের কাছে কোন টাকা নেই। দেশে ফেরার জন্য তারা দূতাবাসের সামনে অবস্থান করছেন। দূতাবাস কোন প্রকার আশ্বাস দেয়নি। এ জন্য সেখানে কর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশ দূতাবাসের তথ্যমতে, লেবাননে বর্তমানে দেড় লাখের বেশি বাংলাদেশী রয়েছেন। এর মধ্যে বেশিরভাগ রয়েছে নারী কর্মী। এই কর্মীরা দেশটির বিভিন্ন বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। এদের মধ্যে বিপুলসংখ্যক কর্মী অবৈধ হয়ে পড়েছেন। দেশটিতে বর্তমানে ৪০ হাজার বৈধ কর্মী রয়েছেন। বৈধ কর্মীরা দেশে ফিরতে চাচ্ছেন না। কারণ অনেক টাকা খরচ করে তারা দেশটিতে এসেছেন। পরিস্থিতি ভাল হলে তারা কাজ পাবেন এই আশায় থেকে যাচ্ছেন। কিন্তু অবৈধ কর্মীরা দেশে ফেরার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছেন। এদিকে লেবাননে সক্রিয় প্রবাসী সংগঠনগুলো জানিয়েছে, কাগজপত্রহীন কর্মীরা আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন। তাদের কোন দায়িত্ব নিচ্ছে না দূতাবাস। এক দিকে চরম খাদ্য সঙ্কট অন্যদিকে দেশে না ফেরার বিষয়টি অনিশ্চিত হওয়ার কারণে বাংলাদেশী কর্মীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। লেবাননের বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ জনকণ্ঠকে জানান, খুব অল্প সময়ের মধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক ডাকা হবে। সেখানেই লেবাননের কর্মীদের কিভাবে ফেরত আনা যায় তার সিদ্ধান্ত হতে পারে। ফ্লাইট না থাকায় কর্মীদের ফেরত আনার বিষয়টি কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে একটা আশার কথা কাতার এয়ারওয়েজ ফ্লাইট পরিচালনা করার একটি সিদ্ধান্তের কথা শোনা যাচ্ছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে অনেক চিন্তা ভাবনা করছি, দেখা যাক কি করা যায়। সূত্র জানিয়েছে, বৈরুত বিস্ফোরণের আগে থেকেই দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ডলার সঙ্কট, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি এবং সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতির কারণে স্থবির হয়ে পড়ে লেবাননের জীবন যাত্রা। লেবাননের জনগণের সরকারবিরোধী আন্দোলনের মুখে মঙ্গলবার দেশটির সরকার পদত্যাগ করেছে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। দেশটিতে যে সব দেশের কর্মীরা রয়েছেন তারা সকলেই চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আর্থিক মন্দায় দেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে একের পর এক কাজ হারাতে থাকেন বাংলাদেশী কর্মীরা। বিশেষ করে যারা অবৈধ রয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তখন থেকেই প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশে ফিরে যাওয়ার আকুতি জানান দূতাবাসের কাছে। বৈরুতে বিস্ফোরণের পর এখন আর এক মুহূর্তও তারা দেশটিতে থাকতে চান না। শতভাগ আমদানিনির্ভর দেশটিতে এখন চরম খাদ্য সঙ্কট চলছে। এ অবস্থায় ওই দেশের মানুষই খাদ্যের অভাবে দিন কাটাচ্ছেন। বিদেশী কর্মীদের দেখার মতো কোন কর্তৃপক্ষ নেই। যে সব কোম্পানিতে কর্মীরা কাজ করতেন সেই সব কোম্পানি বন্ধ করে দিয়ে মালিক চলে গেছে। কর্মীদের এক থেকে দেড় বছরের বেতন বকেয়া পড়েছে। এই বেতনও মালিক পরিশোধ করতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, লেবাননের বিষয়টি নিয়ে তারা কাজ করছেন। অল্প সময়ের মধ্যে লেবাননের কর্মীদের দেশে ফেরত আনা হবে। ইতোমধ্যে দূতাবাসকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে কর্মীদের সুবিধা অসুবিধা দেখার জন্য। বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, বিস্ফোরণের কারণে দেশে ফিরতে চাচ্ছেন মূলত অবৈধরা। যারা পাঁচ-ছয় বছর ধরে লেবাননে অবৈধ হয়ে আছেন। যদিও তাদের ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু বিস্ফোরণের কারণে দেশে ফেরার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বৈধ প্রবাসীরা কেন যাবেন? তারা তো চাইলেই যেকোন মুহূর্তে চলে যেতে পারেন। তাদের বিষয়ে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিশেষ কর্মসূচীর আওতায় ৭ হাজার ৭৪৫ জন বাংলাদেশী নাম নিবন্ধন করেন। এ নিবন্ধন প্রক্রিয়ার আওতায় গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রথম ধাপে ৪৫০ জন বাংলাদেশী দেশে ফিরেছেন। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের কারণে বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এ কার্যক্রম স্থগিত হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ দূতাবাস আশা করছে, বিমানবন্দর চালুর পর যদি বৈরুত-ঢাকা রুটে বিমান চলাচল স্বাভাবিক ও এয়ার টিকেট কেনার সামর্থ্য থাকে তাহলে দূতাবাসে নিবন্ধিত হওয়া প্রায় সাড়ে ৭ হাজার বাংলাদেশী ও জেলে বন্দী শতাধিক প্রবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে। এ জন্য দূতাবাস ঢাকা রুটের বিমান সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। এই বিষয়ে দূতাবাসের শ্রম উইং জানিয়েছে, এ নিয়ে আটকে পড়া প্রবাসীদের দুশ্চিন্তার কিছুই নেই। এ দেশের নিয়োগকর্তা বা স্পনসর চাইলে অবশ্যই তারা আবার লেবাননে প্রবেশ করতে পারবেন। তাদের নিয়োগকর্তার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দিয়েছে দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর।
×