ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজিএফআই ও সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণা, তিন প্রতারক গ্রেফতার

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ১২ আগস্ট ২০২০

ডিজিএফআই ও সিআইডি কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণা, তিন প্রতারক গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ডিজিএফআই ও সিআইডির কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে সরকারী দফতর ও হাসপাতালের নবায়নের কথা বলে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তিন প্রতারককে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ডিজিএফআইর সহকারী পরিচালক পরিচয় দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে বদলির তদবির করতে গিয়ে শাহিনুল ইসলাম নামে এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ডিএমপির মিরপুর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) মঈনুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, মিরপুরের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের দেয়া এক অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার তাকে গ্রেফতার করে মিরপুর থানায় নিয়ে আসা হয়। এসি মঈনুল জানান, প্রতারক শাহিনুল ইসলাম গত ১৬ জুন শিক্ষা অধিদফতরে গিয়ে নিজেকে ডিজিএফআইর সহকারী পরিচালক পরিচয় দিয়ে বদলির তদবির করেন। সেখানে একটি চিরকুটও উপস্থাপন করেন তিনি। এরপর তদবির করতে রাজি না হওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর পরিচালককে (প্রশাসন) বিভিন্ন সময়ে মোবাইল ফোনে কল করে জোরাজুরি করতেন। এতে প্রশাসন তাকে এসব তদবির নিয়ে ফোন দিতে না করেন। এরপরও গত ১০ আগস্ট এই প্রতারক একই তদবির নিয়ে আবারও পরিচালকের (প্রশাসন) অফিসে যান। নিজেকে ডিজিএফআই পরিচয় দেন। এতে অধিদফতরের পরিচালক তার আইডি কার্ড দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি। তিনি জানান, খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, শাহিনুল ইসলাম নামে গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইর সহকারী পরিচালক পদে কেউ নেই। পরে তাকে ওই অধিদফতর থেকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। এ সময় তার হেফাজত থেকে বদলির তদবিরের চিরকুট, জাতীয় পরিচয়পত্র, একটি স্যামসাং মোবাইল সেট, বদলি সংক্রান্ত আবেদনপত্র জব্দ করা হয়। মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাজিরুর রহমান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত শাহিনুল জানান, তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট। ২০০৮ সালে র‌্যাব-১২ থেকে অবসর নেন। এ বিষয়ে মিরপুর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ মিজানুর রহমান জানান, প্রতারক শাহিনুল ইসলাম আমার কাছে একটি তদবির নিয়ে এসেছিলেন। তবে অন্যান্য দফতরে তিনি এমন তদবির নিয়ে প্রায়ই যেতেন। বদলির তদবির নিয়ে আমাকে বশে কিছুদিন যাবৎ জোরাজুরি করছিলেন। পরে ১০ আগস্ট অফিসে এলে তাকে চ্যালেঞ্জ করা হলে তার প্রতারণা সামনে আসে। এই প্রতারক সচিবালয়ের অনেক সেক্রেটারির নাম ও মোবাইল নম্বর সঙ্গে রাখতেন। সচিবালয়ে খোঁজ-খবর করে জানতে পেরেছি, এর আগেও তিনি সচিবালয়ে ডিজিএফআই পরিচয় দিয়ে প্রতারণার অভিযোগে তিন মাস কারাগারে ছিলেন। সেখান থেকে বেরিয়ে একই কাজ শুরু করেন। মূলত তিনি একজন চিহ্নিত প্রতারক। তার বিরুদ্ধে মিরপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এদিকে একই সময় সিআইডির পুলিশ সুপার (এসপি) পরিচয়ে বিভিন্ন হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন করে দেয়ার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযাগে দুজনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে মোঃ আকমল হোসেন (৪৫) ও জহিরুল ইসলাম ওরফে দীপক (৫৫)। এ সময় তাদের কাছ থেকে চারটি মোবাইল ফোন, ১০টি সিমকার্ড, উর্ধতন সরকারী কর্মকর্তাদের ভিজিটিং কার্ড ও দু’টি ভুয়া আইডি কার্ড জব্দ করা হয়। সাইবার এ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ওয়েববেজড ক্রাইম টিমের ইনচার্জ অতিরিক্ত পুলিশ এডিসি আশরাফউল্লাহ জানান, সোমবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানা ও ডিএমপির মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে ডিবির সাইবার এ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আকমল হোসেন জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি প্রথম নিজেকে হিউম্যান রাইটস কমিশনের সদস্য পরিচয়ে জাতীয় জরুরী সেবা নম্বর ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে দেশের বিভিন্ন থানার ডিউটি অফিসারের নম্বর সংগ্রহ করেন। এরপর ডিউটি অফিসারের নম্বরে ফোন দিয়ে নিজেকে সিআইডির এসপি পরিচয় দেন। এরপর ওই থানার একটি এলাকার নাম উল্লেখ করে জিজ্ঞাসা করেন, তোমাদের ওই এলাকায় কোন পার্টি ডিউটিতে আছে তার অফিসারকে বলো আমার এই নম্বরে ফোন দিতে। ওই এলাকার অফিসার ফোন দিলে অত্যন্ত সুচতুরতার সাথে নিজেকে সিআইডির এসপি পরিচয় দিতেন। পরে প্রতারক আকমল ওই পুলিশ অফিসারকে বলেন, তুমি তোমার ডিউটি এলাকার অমুক হাসপাতালে গিয়ে হাসপাতালের মালিক কিংবা পরিচালককে আমাকে ফোনে ধরিয়ে দাও। ওই অফিসার তার কথামতো হাসপাতালের মালিক কিংবা পরিচালককে ফোনে ধরিয়ে দিলে প্রতারক নিজেকে সিআইডির এসপি হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলেন, আপনি তো আপনার হাসপাতালের নবায়নের জন্য আবেদন করেছেন, আপনার ফাইলটা এখন আমার কাছে। এভাবে ফাইলটি পাস করে দেবেন বলে বিপুল পরিমাণ টাকা বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন। এ ব্যাপারে গ্রেফতাকৃতদের বিরুদ্ধে ডিএমপির রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।
×