ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নড়িয়ায় গ্যাসকূপ খনন করবে বাপেক্স

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ১২ আগস্ট ২০২০

নড়িয়ায় গ্যাসকূপ খনন করবে বাপেক্স

রশিদ মামুন ॥ আগামী শুষ্ক মৌসুমে শরীয়তপুরের নড়িয়ায় গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স)। পদ্মার ওপারে ভোলায় গ্যাস পাওয়া গেছে। আশা করা হচ্ছে বেঙ্গল বেসিনের বিস্তীর্ণ এলাকায় অনুসন্ধান চালানো হলে তেল গ্যাস পাওয়া যাবে। তবে ভোলার বাইরে আর তেমন কোন গ্যাস অনুসন্ধান চালানো হয়নি। বাপেক্স সূত্র বলছে শরীয়তপুরের ৩ হাজার লাইন কিলোমিটার এলাকায় দ্বিতীয় মাত্রার সাইসমিক জরিপের ফল বিশ্লেষণ আশা জাগিয়েছে। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত কূপ খনন করে নিশ্চিত না হওয়া যায় ততক্ষণ গ্যাস প্রাপ্তির কোন ঘোষণা দেয়া উচিত নয়। বিষয়টি বিজ্ঞান সম্মত নয় বলেনও জানান বাপেক্স’র এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ফল বিশ্লেষণ করে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে আমরা মনে করছি এখানে পেট্রোলিয়াম পণ্য রয়েছে। জ¦ালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিসুর রহমান বলেন, বাপেক্স আগামী শুষ্ক মৌসুমে শরীয়তপুরে গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন করবে। দেশব্যাপী নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এর আওতায় শরীয়তপুরে খনন করা হবে। তিনি শরীয়তপুরকে সম্ভাবনাময় বলে উল্লেখ করেন। বাপেক্স দুবছর ধরে চীনা কোম্পানি সিনোপ্যাকের সহায়তা নিয়ে নতুন গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধানের জন্য দ্বিতীয়মাত্রার জরিপ পরিচালনা করে। ওই জরিপের ফল বিশ্লেষণ করে শরীয়তপুরে কূপ খনন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী জনকণ্ঠকে বলেন, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার দিনারা মৌজায় অনুসন্ধান কূপটি খনন করা হবে। এজন্য প্রকল্প প্রস্তুাব বাপেক্স এর পরিচালনা পর্ষদের সভায় অনুমোদন করা হয়েছে। এরপর পেট্রোবাংলায় মাধ্যমে জ¦ালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে। জ¦ালানি বিভাগ অনুমোদন দিলে অর্থবিভাগে পাঠানো হবে। সরকারের অনুমোদন পেলে জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য কাজ শেষ করে কূপ খনন করা হবে। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ভোলাতে গ্যাস পাওয়া গেলেও তা ভোলার বাইরে ব্যবহার করা দুরূহ বিষয়। ভোলা থেকে পাইপ লাইন নির্মাণ করে ওই গ্যাস বরিশাল এবং খুলনায় নেয়া দুরূহ বিষয়। ফলে বিদ্যুত উৎপাদন ছাড়া শিল্পে ভোলার গ্যাস ব্যবহার করা আপাতত যাচ্ছে না। খুলনাতে সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানি পাইপ লাইন নির্মাণ করলেও এখনও গ্যাসের সরবরাহ দেয়া হয়নি। ফলে খুলনা অঞ্চলের বিদ্যুত কেন্দ্রও তেল দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করছে। তবে খুলনাতে নতুন একটি এলএনজি চালিত ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এই কেন্দ্রে পেট্রোবাংলা গ্যাস সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও আমদানি করা তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) থেকে এখানে গ্যাস দেয়া হবে। সেক্ষেত্রে শরীয়তপুরে গ্যাস পাওয়া গেলে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ভাগ্য বদলে যাবে। দেশের অবহেলিত এই জনপদে জ¦ালানির অভাবে শিল্প বিকশিত হয়নি। এতে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে বিপুল জনগোষ্ঠীর এই এলাকা। বাপেক্স সূত্র বলছে দেশে যেসব এলাকায় তেল গ্যাসের কোন অনুসন্ধান চালানো হয়নি সেসব জায়গাতে দ্বিতীয়মাত্রার জরিপ চালানো হচ্ছে। এসব ফলাফল বিশ্লেষণ করে অনুসন্ধান কূপ খনন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। এতে দেশে গ্যাসের মজুদ বাড়তে পারে। নড়িয়া ভাঙ্গন কবলিত এলাকা। গত বর্ষা মৌসুমেও এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকা পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। এবারও শরীয়তপুর মাদারীপুরে নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। তবে তেল গ্যাস পাওয়া গেলে অর্থনৈতিক কর্মকা- বৃদ্ধিতে অবহেলিত এই জনপদের ভাগ্য বিড়ম্বনা দূর হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর মধ্যে কানাডা, রাশিয়া তাদের অতি সম্ভাবনাময় এলাকার পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত কম সম্ভাবনাময় এলাকায় তেল গ্যাসের অনুসন্ধান চালিয়েছে। এতে দেখা গেছে অতি সম্ভামনাময় এলার মজুদের চেয়ে কম সম্ভাবনাময় এলাকায় আরও বেশি তেল-গ্যাস রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে শুধু অতি সম্ভাবনাময় এলাকাতেই বেশি কূপ খনন করা হয়েছে। অর্থ সাশ্রয়ের জন্য এমনি করা হলেও এতে জ¦ালানি নিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে। ভূতাত্ত্বিক এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ভূইয়া বলেন, এক ধরনের প্রচারণা রয়েছে যে দেশের তেল গ্যাস শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু এখনও আমাদের অনেক এলাকা রয়েছে যেখানে আমরা অনুসন্ধান চালায়নি। আমাদের যে ক’টি কূপ খনন করা হয়েছে। কোন কোন দেশে একটি গ্যাস ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি কূপ খনন করা হয়। ফলে আরও বেশি অনুসন্ধানের ওপর জোর দেন তিনি।
×