ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পুলিশী মামলার তিন সাক্ষী গ্রেফতার ॥ রিমান্ডের আবেদন

প্রকাশিত: ২২:৫২, ১২ আগস্ট ২০২০

পুলিশী মামলার তিন সাক্ষী গ্রেফতার ॥ রিমান্ডের আবেদন

চট্টগ্রাম অফিস/স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ টেকনাফে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের চাঞ্চল্যকর হত্যাকা- নিয়ে নানা প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। তদন্ত সংস্থা র‌্যাব বহুমুখী তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় তিন পুলিশকে এখনও রিমান্ডে নেয়া হয়নি। যদিও আদালত এদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে। এ ব্যাপারে র‌্যাব সূত্রে জানানো হয়েছে, কিছু জটিলতার কারণে ওসি প্রদীপ, কিলার লিয়াকতসহ ৩ জনকে রিমান্ডে নেয়া হয়নি। কয়েকদিনের মধ্যে রিমান্ড হেফাজতে নেয়া হবে। এদিকে মঙ্গলবার সিনহা হত্যায় আরও ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা হত্যাকা-ে পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী। তদন্ত সংস্থা র‌্যাব মঙ্গলবার দুপুরে যে ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে তারা সিনহা হত্যার পর পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী। বিকেলে এ তিনজনকে আদালতে সোপর্দ করার পর তদন্ত সংস্থা র‌্যাব দশদিনের রিমান্ড চেয়েছে। আদালত আজ তিনজনের রিমান্ড নিয়ে শুনানির দিন ধার্য করেছে। অপরদিকে কিলার লিয়াকত ও হুকুমদাতা ওসি প্রদীপসহ তিনজনকে টানা দশদিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাবের পক্ষ থেকে গত সোমবার যে আবেদন করা হয়েছে তার ওপর শুনানি আজ অনুষ্ঠিত হবে আদালতে। এরফলে সিনহা হত্যায় গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ জন। এদের মধ্যে ৭ জন পুলিশ। র‌্যাব মঙ্গলবার যে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে তারা হচ্ছে- টেকনাফের বাহারছড়ার মারিসবুনিয়ার নুরুল আমিন, নেজামউদ্দিন ও আয়াজউদ্দিন। এরা সিনহা হত্যার পর পুলিশের দায়ের করা মামলার সাক্ষী। র‌্যাব সূত্র জানিয়েছে, যেহেতু এরা সাজানো একটি মামলার সাক্ষী, ফলে এদের কাছ থেকে অজানা কোন তথ্য আদায় করা যেতে পারে। ফলে এদের গ্রেফতার করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। র‌্যাব-১৫’র উপ-অধিনায়ক মেজর মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, গ্রেফতারকৃত ৩ জন সিনহা হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। তাই তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অপরদিকে গত রবি ও সোমবার যথাক্রমে নিহত সিনহার সহযোগী শ্রিপা দেবনাথ ও সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে আদালত জামিন দেয়ার পর তারা মুক্ত হয়েছেন। মুক্ত হওয়ার পর সোমবার রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত কথা বলেছেন। এছাড়া তদন্ত সংস্থা র‌্যাবও এ দুজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। শ্রিপা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি সব তথ্য পরে প্রকাশ করবেন। এখন তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। শিফাতও অনুরূপ বক্তব্য দিয়েছেন। এ দুজন এবং অপর একজন যার নাম তাহসিন নুর নিহত সিনহার ডকুমেন্টরি তৈরির কাজে সংযুক্ত টিমের সদস্য। সিনহা হত্যাকান্ডের পর নীলিমা রিসোর্টে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ৩ জনকে আটক করে। তাহসিন নুরকে অভিভাবকের জিম্মায় দিয়ে দেয়া হয়। আর শ্রিপা ও শিফাতকে টেকনাফ ও রামু থানায় দায়েরকৃত পৃথক মামলায় মাদক আইনে গ্রেফতার দেখানো হয়। সিনহা হত্যার পর পুলিশের দায়েরকৃত তিনটি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পুলিশের বদলে আদালতের নির্দেশে র‌্যাবের কাছে অর্পণ হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাত অনুমান সোয়া ৯টায় টেকনাফের বাহারছড়ার শাপলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা। এ ঘটনার পর পুলিশ তিনটি মামলা দায়ের করেছে। সিনহার বড় বোনের দায়েরকৃত অপর একটি মামলার আবেদনে আদালত তদন্তভার র‌্যাবকে অর্পণ করেছে। পরবর্তীতে পুলিশের দায়েরকৃত তিনটি মামলার তদন্ত কাজও চালানোর জন্য র‌্যাব আবেদন করলে আদালত তা অনুমোদন দিয়েছেন। আদালতের অনুমোদনের প্রেক্ষিতে সিনহা হত্যায় পুলিশের তিন মামলার তদন্তভার নিয়ে মঙ্গলবার ওই মামলার তিন সাক্ষীকে গ্রেফতার করে রিমান্ড চেয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়িতে ১৬ সদস্য নিয়োজিত ছিল। সিনহা হত্যাকা-ের পর তাদের প্রত্যেককে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এদের মধ্য থেকে ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই লিয়াকত এবং টেকনাফের তৎকালীন ওসি প্রদীপসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এ ৯ জনের মধ্যে ওসি প্রদীপ, কিলার এসআই লিয়াকতসহ ৭ জন কক্সবাজার আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়। অপর দু’জন আসামি এএসআই টুটুল ও কনস্টেবল মোস্তফা নামের কোন পুলিশ সদস্য নেই বলে খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। যেহেতু মামলার এজাহারে এ দুটি নাম এসেছে তদন্ত সংস্থা র‌্যাব তা খতিয়ে দেখছে। সূত্র জানিয়েছে, সিনহা হত্যাকা-ের জট খুলতে খুব বেশি সময় নেবে না। যেহেতু আসামিদের মধ্যে ৭ জন গ্রেফতার হয়েছে। সাক্ষীদের মধ্যে ৩ জন বিশেষ নিরাপত্তা হেফাজতে আছে। এদের মধ্যে একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী শিফাত, যিনি সিনহাকে গুলি করে হত্যার ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছেন। এছাড়া অপর দু’জন শ্রিপা ও তাহসিন নুর যেহেতু সিনহার ডকুমেন্টরি তৈরির কাজে সংশ্লিষ্ট ছিলেন এবং গত প্রায় একমাস যাবত বাহারছড়ার নীলিমা রিপোর্টে অবস্থান করে আসছিলেন। তারা সিনহার সকল কর্মকা- নিয়ে অবগত। ফলে এ মামলার নেপথ্য ঘটনা উদঘাটনে তদন্ত সংস্থাকে খুব একটা বেগ পেতে হবে না বলে বিভিন্ন সূত্রে জানানো হচ্ছে। এছাড়া মামলায় যাদের সাক্ষী করা হবে বিশেষ করে শিফাত ও শ্রিপাকে সাংবাদিকসহ অন্য কারও সঙ্গে দেখা সাক্ষাত বা কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। তাদের নিরাপত্তা দিয়ে কক্সবাজারে রাখা হয়েছে। বামনা ওসি প্রত্যাহার ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা বরগুনা থেকে জানান, পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর (অব) সিনহা মোঃ রাশেদ খানের সঙ্গে থাকা গ্রেফতার সাহেদুল ইসলাম সিফাতের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচীতে সহকর্মীকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইলিয়াস আলী তালুকদারকে মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। জেলা পুলিশের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মফিজুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তদন্ত প্রতিবেদন জেলা পুলিশের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। মানববন্ধন চলাকালে লাঠিচার্জ ও সহকর্মীকে জনসমক্ষে চড় দেয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি আলোচনায় আসে। বামনা উপজেলা শহরে শনিবার (৮ আগস্ট) এ ঘটনা ঘটে। জেলা পুলিশ এ ঘটনা তদন্তের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মফিজুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে।
×