ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আন্তর্জাতিক যুব দিবসে টিআইবির সাত দাবি

প্রকাশিত: ১৯:০৬, ১১ আগস্ট ২০২০

আন্তর্জাতিক যুব দিবসে টিআইবির সাত দাবি

অনলাইন ডেস্ক ॥ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনে তরুণ প্রজন্মের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন-দুর্নীতি বন্ধ, সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে সমান সুযোগ নিশ্চিত করাসহ সাতটি দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ১২ আগস্ট আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব দাবি জানায় সংস্থাটি। ১২ আগস্ট আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে এবছরের মূল প্রতিপাদ্য ‘বৈশ্বিক লক্ষ্য অর্জনে তরুণদের অংশগ্রহণ’ এর প্রতি সরকার ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দাবিগুলো জানানো হয়। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সংস্থার পক্ষ থেকে দাবিগুলো উত্থাপন করেছেন। টিআইবির এই সাতটি দাবি হলো— ১. এসডিজি অর্জনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নীতি-কৌশল প্রণয়ন, কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ এবং সেগুলোর বাস্তবায়নে তরুণ প্রজন্মের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। ২. রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ও দুর্নীতি বন্ধ করে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দুর্বলতা হ্রাস, উন্নত ও টেকসই নীতি-কৌশল নির্ধারণে সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতির ক্ষেত্রে যে কোনও ধরনের অসঙ্গতি নিয়ে তরুণসমাজ যাতে সব ধরনের ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে নির্বিঘ্নে তাদের মতামত প্রকাশ ও প্রতিবাদ করার আইনি অধিকারের চর্চা করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে এবং এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ একই ধরনের অন্যান্য আইনের বিতর্কিত ধারাগুলো বাতিল করতে হবে। ৩. সরকারি-বেসরকারি সব ক্ষেত্রে চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত করে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নিশ্চিত করতে হবে। ৪. জাতীয় যুবনীতি ২০১৭ এর পূর্ণ বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট ও সময়াবদ্ধ কৌশল ও কর্ম-পরিকল্পনা নির্ধারণ করে সেগুলোর বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ এবং আধুনিক, সময়োপযোগী, বিশেষ করে তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। ৫. কোভিড-১৯ অতিমারি ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বৈশ্বিক মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলায় তরুণদের কার্যকর ও অর্থবহ অংশগ্রহণ ও পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। ৬. কোভিড-১৯ বাস্তবতায় নতুন স্বাভাবিকতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত ও ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা অর্জনের সুযোগ তৈরি করতে হবে। সৃজনশীলতা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে। ৭. তরুণ উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের পাশাপাশি পরামর্শ ও উৎসাহ প্রদান, আইনি সহায়তা এবং বাজারে অভিগম্যতা নিশ্চিত করতে হবে এবং এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ ও ব্যাংক ঋণ পাবার শর্ত ও সুদ হার সহজ করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টের ১৬৯টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের মধ্যে ২০টিতেই সরাসরি তরুণদের কথা বলা হয়েছে উল্লেখ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বিশেষ করে লক্ষ্যমাত্রা ৪, ৫ ও ৮ এ স্পষ্টতই তরুণদের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ৪-এ সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানসম্মত এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা, লক্ষ্যমাত্রা ৫-এ নারীদের সমঅধিকার ও কন্যাশিশুদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা, এবং লক্ষ্যমাত্রা ৮-এ সবার জন্য স্থায়ী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক কার্যক্রমে উৎসাহিত, পরিপূর্ণ ও উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান এবং উপযুক্ত কর্মের নিশ্চয়তা প্রদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে এসডিজি ১৬-তে টেকসই উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থা, সবার ন্যায়বিচার প্রাপ্তি এবং সব স্তরে কার্যকর জবাবদিহিতাপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠানের অঙ্গীকার করা হয়েছে। এক্ষেত্রে, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজনদের পাশাপাশি সুশিক্ষিত, দক্ষ ও সচেতন যুবসমাজ ও তাদের অংশ গ্রহণই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই এসডিজি অর্জনের সক্রিয় অংশীজন হিসেবে যুবসমাজ যাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, নীতি-কৌশল প্রণয়ন, কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ এবং তার বাস্তবায়নকারীর ভূমিকা পালনে সক্ষম হতে পারে তার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’ কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে তরুণ জনগোষ্ঠী শিক্ষা, পেশা ও মানসিক স্বাস্থ্যগত ব্যাপক ঝুঁকির মধ্যে আছে উল্লেখ করে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘পুরো বিশ্বের মতো কোভিড-১৯ বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও ব্যাপক ও গভীর ক্ষত তৈরি করেছে। সমাজের সব শ্রেণি পেশার মানুষের ওপর এর প্রভাব পড়লেও বিশেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠীর জন্য ঝুঁকিটা বেশি। অতিমারি পরিস্থিতিতে তরুণদের চাকরির ক্ষেত্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তাদের কর্মক্ষেত্র সংকুচিত হয়েছে; নতুন ও অভিনব কর্মক্ষেত্রে অভিগম্যতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিশাল সম্ভাবনাময় তরুণদের সিংহভাগই পিছিয়ে আছে। নতুন স্বাভাবিকতায় বাজারে যে নতুন ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন হবে, একদিকে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার পুঞ্জিভূত দুর্বলতা ও অন্যদিকে দীর্ঘদিন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সাথে যুক্ত না থাকায়, সেটি অর্জনও তরুণদের জন্য বাড়তি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন বাস্তবতায় ভবিষ্যত ভাবনায় তাদের মানসিক স্বাস্থ্যেও ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তরুণদের অংশগ্রহণে সিদ্ধান্ত ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন জরুরি।’ বাংলাদেশ বর্তমানে ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ কাল অতিক্রম করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার বড় অংশটিই বর্তমানে কর্মক্ষম যুব সমাজ; অথচ রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পরিসরে নীতি কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে তরুণদের অংশগ্রহণের ঘাটতি যেমন বিদ্যমান তেমনি তরুণদের রাজনীতিবিমুখতার হারও আশঙ্কাজনক। রাজনৈতিক ও সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডে তরুণদের অংশগ্রহণের পথও নানা আইনি ও পদ্ধতিগত বাঁধায় আটকে আছে। বিশেষ করে, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যথেচ্ছ প্রয়োগে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্বাধীন মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার ব্যাপকভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নীতি-কৌশল এবং রাষ্ট্রীয়, সামাজিক বা রাজনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে মত প্রকাশের দায়ে নাগরিকদের অযাচিত মামলা ও আটকের ঘটনায় যুবসমাজের ওপরই বেশি প্রভাব পড়েছে। এতে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ইস্যুতে যুবকদের অংশ গ্রহণ ও মত প্রকাশ সীমিত ও সংকুচিত হচ্ছে।’
×