ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সিনহার মৃত্যু ঘটনা

এমপির সুপারিশে চাকরি নেয় লিয়াকত

প্রকাশিত: ২৩:১২, ১১ আগস্ট ২০২০

এমপির সুপারিশে চাকরি নেয় লিয়াকত

বিকাশ চৌধুরী, পটিয়া, চট্টগ্রাম ॥ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খানের ওপর যে প্রথম গুলি চালিয়েছে সেই পুলিশ কর্মকর্তার বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়াতে। টেকনাফ বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীর বাড়ি উপজেলার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের পূর্ব হুলাইন গ্রামে। সে মৃত সাহাব মিঞার পঞ্চম পুত্র। চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সংসদ সদস্য (বর্তমান হুইপ) সামশুল হক চৌধুরীর সুপারিশে ওই পুলিশ কর্মকর্তা চাকরিতে যোগদান করে। লিয়াকত হাবিলাসদ্বীপ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, হুলাইন ছালেহ নূর ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি, চট্টগ্রাম কলেজ থেকে স্নাতক ও প্রিমিয়ার ইউনির্ভাসিটি থেকে এমএ পাস করে। তথ্য গোপন করে বিএনপির মতাদর্শের লিয়াকত স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশে ২০১০ সালে পুলিশের চাকরিতে যোগদান করে। ৬ ভাই ১ বোনের মধ্যে লিয়াকত পঞ্চম। তার ভাই মোঃ শওকত বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। পটিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা বেগম শিরু আলোচিত লিয়াকত আলীর চাকরির জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীকে সুপারিশের জন্য অনুরোধ করেন। এরপর লিয়াকতের চাকরি হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছে, মানুষের গায়ে গুলি করতে লিয়াকত দ্বিধাবোধ করত না। সে বেশ কয়েকটি জঙ্গী অভিযানে অংশগ্রহণ করে অনেক জঙ্গী সদস্যকে গুলি করে হত্যা করে। টেকনাফ থানায় যোগদানের পর ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নেতৃত্বে মাদক কারবারি নির্মূল অভিযানে ১৬১ বন্দুকযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে লিয়াকত আলী। সেখানে ছোট ইয়াবা কারবারিসহ কতিপয় নিরীহ মানুষকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নির্দেশে কথিত বন্দুকযুদ্ধে গুলি চালাত পটিয়ার লিয়াকত। স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পূর্ব হুলাইন গ্রামের মৃত সাহেব মিঞার ৬ পুত্রের মধ্যে লিয়াকত আলী পঞ্চম। ২০১০ সালে সে পুলিশের চাকরিতে যোগদান করে। প্রথমে ডিবি, পরে সোয়াত ও এ্যান্টি টেররিজম টিমে কাজ করে। গত ২ বছর পূর্বে পুলিশ পরিদর্শক পদোন্নতি পাওয়ার পর এক বছর আগে সে টেকনাফ থানায় যোগদান করে। তার দুই ভাই নেভিতে চাকরি করেন। ভাই আবু তাহের সাবেক মেরিন ইঞ্জিনিয়ার ও মনছুর আলী নেভাল প্রভোস্ট অফিসার পদে থাকলেও বর্তমানে অবসরে এসে আবুল খায়ের গ্রুপে সিকিউরিটি প্রধান হিসেবে দায়িত্বে আছেন। এলাকার লোকজন তাদের পরিবারকে শিক্ষিত পরিবার হিসেবে জানত। কিন্তু এই ঘটনার পর থেকে লোকজনের মধ্যে তাদের পরিবার নিয়ে ঘৃণা সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার মানুষ মনে করছেন লিয়াকত মানুষ হত্যা করে টাকার পাহাড় বানিয়েছেন। সর্বত্র লিয়াকতকে নিয়ে সমলোচনার ঝড় উঠেছে। লিয়াকতের মা কেঁদে কেঁদে বলেন, আমার ছেলের কি ফাঁসি হবে? লিয়াকত গ্রেফতারের পর থেকে তার মা একেবারে ভেঙ্গে পড়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, উপজেলার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নে বিতর্কিত ওই পুলিশ লিয়াকতের বাড়ি। লিয়াকতের ভাই মোঃ শওকত বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তার পরিবারে বিএনপির একাধিক সদস্যও রয়েছে। উপজেলা পরিষদের এক মহিলা সদস্যের অনুরোধে স্থানীয় সংসদ সদস্য লিয়াকতের চাকরি দিয়েছেন। তার পিতা সাহাব মিঞা যমুনা অয়েল লিমিটেডের গাড়িচালক ছিলেন। আর্থিকভাবে তারা অসচ্ছল হলেও বর্তমানে লিয়াকতের নামে বেনামে সম্পদের পাহাড় রয়েছে। পটিয়া উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাজেদা বেগম শিরু বলেন, পুলিশের চাকরি পেতে লিয়াকত আলী সহযোগিতা চান। তার অনুরোধের কারণে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশে লিয়াকত আলীর চাকরি হয়। তবে চাকরি পাওয়ার পর থেকে তার সঙ্গে কোন যোগাযোগ ছিল না। উল্লেখ্য, ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শ্যামলাপুর এলাকায় একটি চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা। মেজরের ওপর প্রথম গুলি চালায় পটিয়ার সেই লিয়াকত আলী।
×