ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গণনা শিক্ষায় সহায়ক, এখনও খেলে গ্রামীণ শিশু-কিশোররা

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ১১ আগস্ট ২০২০

গণনা শিক্ষায় সহায়ক, এখনও খেলে গ্রামীণ শিশু-কিশোররা

জাহাঙ্গীর আলম শাহীন ॥ গ্রামবাংলার শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের মাঝে এক সময়ের জনপ্রিয় খেলা ‘খালগুটি’। এই খেলা এখন বিলুপ্তির পথে। এক সময় উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে গ্রীষ্মকালে বাঁশঝাড়ের ছায়া ও বড় বৃক্ষের ছায়াতলে শিশু, কিশোর ও কিশোরীরা নিম ফলের গুটি কিংবা পাথর কুড়িয়ে এই খালগুটি খেলত। এখন এই দৃশ্য তেমন চোখে পড়ে না। তবে লালমনিরহাটের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে মাঝে মাঝে এই খেলা খেলতে দেখা যায়। এখনও কালের সাক্ষী হয়ে ঐতিহ্যবাহী এই খেলাটি টিকে আছে। খালগুটি খেলা উত্তরাঞ্চলে এক সময় জনপ্রিয় খেলা ছিল। মাটিতে ১০টি গর্ত করে প্রতিটি গর্তে পাঁচটি করে নিম ফলের গুটি কিংবা যেকোন গুটি খালে রেখে দিয়ে খেলতে হয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুরা এক সময় গাছের ছায়াতলে সুশীতল পরিবেশে খেলার ছলে সংখ্যা গণনা শিখে যেত। সাধারণত গ্রীষ্মকালে গরমে অতিষ্ঠ শিশু, কিশোর ও কিশোরীরা বাঁশঝাড়ের ছায়ায় এবং বড় বৃক্ষের ছায়াতলে এই খেলাটি খেলত। দেশ এখন ডিজিটাল। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামেই বিদ্যুত সংযোগ আছে। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও প্রযুক্তির ব্যবহার অনেক বেড়েছে। স্বল্প আয়ের পরিবার হলেও প্রায় প্রতিটি ঘরে টিভি ও স্মার্টফোন রয়েছে। শিশুরা ঝুঁকে পড়েছে প্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন খেলায়। মোবাইল ফোনে কার্টুন, নানা বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন ধরনের গেমস খেলে সময় কাটায়। মাঠে গিয়ে খেলার সময় নেই তাদের। সাম্প্রতিক করোনা দুর্যোগের কারণে স্কুল বন্ধ। টিউশন, প্রাইভেট কোচিংও বন্ধ। শিশু, কিশোর ও কিশোরীরা একটু হলেও অবসর সময় পেয়েছে। তাই তারা গ্রামীণ এই খেলা নিয়ে মেতে আছে। লালমনিরহাট খোর্দ্দসাপটানা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোছাঃ সুলতানা রাজিয়া জানান, গ্রামীণ খেলাগুলোকে হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না। শিশুদের এই গ্রামীণ খেলা বাংলার ঐতিহ্য। গ্রামীণ এসব খেলা শিক্ষামূলক। শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা এই খেলা থেকে সংখ্যা গণনা শিখতে পারে। তাই শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আনন্দমুখর করতে গ্রামীণ বিলুপ্তপ্রায় খেলাগুলোকে জনপ্রিয় করে তুলতে হবে। খালগুটি খেলা প্রাক প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রচলন করা যেতে পারে। এতে শিশুরা খেলার ছলে গণনা শিখবে। আর গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী জনপ্রিয় খেলাটি গ্রামীণ শিশু, কিশোর-কিশোরীদের মাঝে বেঁচে থাকবে। হবে বাংলার ঐতিহ্য রক্ষা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ গোলাম নবী জানান, ঐতিহ্যবাহী এই খালগুটি খেলা অবশ্যই প্রাক প্রাথমিক শিক্ষায় যোগ করা যায়। খেলাটি শিক্ষামূলক। শিশুরা খেলার ছলে সংখ্যা কাউন্ট করা শিখতে পারবে। প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা আনন্দমুখর হবে। যেহেতু এটি এই অঞ্চলের এক সময়ের জনপ্রিয় খেলা, তাই সবাই খেলাটি সহজে গ্রহণ করতে পারবে। এ জেলার ঐতিহ্য রক্ষায় প্রাক প্রাথমিকে খালগুটি খেলা যোগ করার উদ্যোগ নেয়া হবে। লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফর জানান, গ্রামবাংলার এক সময়ের জনপ্রিয় বিভিন্ন খেলাধুলাকে ধরে রাখতে বর্তমান সরকার নানা উৎসাহ দিয়ে আসছে। প্রতিটি প্রাক প্রাথমিক স্কুলে খালগুটি খেলা চালু করার উদ্যোগ নিলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য রক্ষা করতে হবে। তা না হলে বাঙালী স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলবে।
×