জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বৈরুত বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে লেবানন সরকার পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় জাতীয় টেলিভিশনে দেয়া এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। খবর বিবিসির।
দেশের সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত, এই অভিযোগে গত বছর আন্দোলনে নামে তরুণরা। করোনার সময় প্রাথমিকভাবে আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হয়েছিল। কিন্তু অনেকের চাকরি চলে যাওয়ায় করোনা উপেক্ষা করেই ফের রাস্তায় নামে সাধারণ মানুষ। তবে গত মঙ্গলবার বৈরুত বন্দরে বিস্ফোরণের পর অনেকেই অভিযোগ করেন এই বিস্ফোরণের জন্য দায়ী দেশটির রাজনৈতিক নেতাদের অবহেলা ও দুর্নীতি।
প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকের আগে সোমবার দুপুরেও নতুন করে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। জানুয়ারিতে এই মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছিল লেবাননের প্রভাবশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ ও এর মিত্রদের সমর্থনে। মন্ত্রিসভা ও রাজনৈতিক সূত্রের বরাতে আরব নিউজ জানিয়েছে, সোমবারের মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনেক মন্ত্রী তাদের পদত্যাগের ইচ্ছের কথা জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে।
এদিকে লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন সোমবার মন্ত্রিসভার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। পরে তিনি দেশটিতে একটি নতুন সরকার গঠন না হওয়া পর্যন্ত সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াবকে অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব পালনের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
এর আগের খবরে বলা হয়, লেবাননের রাজধানীতে ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক বিস্ফোরণে ২০০ জনেরও বেশি নিহত হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন বৈরুতের গবর্নর মারওয়ান আববুদু। ঘটনার পর বহু লোক এখনও নিখোঁজ রয়েছে, তাদের অনেকেই বিদেশী শ্রমিক বলে জানিয়েছেন তিনি। বৈরুতে রবিবার দ্বিতীয় রাতের মতো এই দুর্যোগের বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
আল মুরসাদু অনলাইন নিউজ ওয়েবসাইটের দেয়া উদ্ধৃতিতে গবর্নর আববুদু জানিয়েছেন, ওই বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা ২২০ জনে দাঁড়িয়েছে এবং ১১০ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। আল জাদিয়েদেন টেলিভিশন চ্যানেলকে তিনি বলেছেন, নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে অনেক বিদেশী শ্রমিক ও লরি চালক রয়েছেন, এ কারণে তাদের শনাক্ত করা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। বৈরুত বন্দরে ঘটা ওই বিস্ফোরণের জেরে দেশটির বিচারমন্ত্রী মারি ক্লদ নাজম সোমবার পদত্যাগ করেছেন। এ নিয়ে মন্ত্রিসভার তৃতীয় আরেকজন সদস্য পদত্যাগ করলেন, কিন্তু তাতেও প্রতিবাদকারীদের ক্ষোভ কমেনি বলে ভাষ্য বিবিসির। সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব মন্ত্রিসভার বৈঠক ডেকেছেন। ওই একই সময় রাজধানীজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে সরকারবিরোধী প্রতিবাদকারীরা। দিয়াব জানিয়েছেন, ছয় বছর ধরে বৈরুত বন্দরে অরক্ষিত অবস্থায় রাখা ২৭৫০ টন এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট কোনভাবে প্রজ্বলিত হয়ে বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটেছে। তবে শহরের কেন্দ্রস্থলের কাছে গুদামে এত বিপুল পরিমাণ বিপজ্জনক উপাদান রেখে দেয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি অনেক লেবাননই বিশ্বাস করতে পারছেন না, অনেক দিন ধরেই দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক অভিজাতদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, দায়িত্বে অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ করে আসছেন তারা। এদিকে লেবাননের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, জীবিত আর কাউকে পাওয়া না যাওয়ায় বন্দরে তল্লাশি অভিযানের উদ্ধার পর্ব বন্ধ করে দিতে বলেছে তারা। অন্যদিকে শহরটির লাখ লাখ বাসিন্দা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িতে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। এসব বাড়ির অধিকাংশেরই জানালা-দরজা উড়ে গেছে। কর্মকর্তাদের হিসাবে এই বিস্ফোরণে ৩০০ কোটি ডলারেরও বেশি ক্ষতি হয়েছে এবং এতে লেবাননের সম্মিলিত অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়তো এক হাজার ৫০০ কোটি ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন তারা। গত কয়েক বছর ধরে চরম রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা এবং বিশাল অঙ্কের ঋণের বোঝার চাপে লেবাননের অর্থনীতি বিধ্বস্ত অবস্থায় ছিল। তার মধ্যে গত মঙ্গলবার বৈরুতের বন্দর এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ দেশটিকে খাদের কিনারে নিয়ে দাঁড় করিয়েছে বলে জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
অন্যদিকে লেবাননে প্রচ- বিক্ষোভ চলাকালে ইতোমধ্যে দুই মন্ত্রী এবং ৯ এমপি পদত্যাগ করেছেন বলে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয় (বিস্তারিত ৭ এর পাতায়)।