ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা প্রতিরোধে মাস্ক পরতে বাধ্য করতে হবে

বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, সতর্ক থাকার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ১১ আগস্ট ২০২০

বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, সতর্ক থাকার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আগামী ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে বন্যা হলে সেটা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। তাই এ বিষয়ে মন্ত্রিসভার সদস্য ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে মানুষকে মাস্ক পরতে বাধ্য করা এবং এ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে মোবাইল কোর্ট (ভ্রাম্যমাণ আদালত) পরিচালনায় মাঠ প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি অক্ষম ও অসচ্ছল চলচ্চিত্র শিল্পীদের আর্থিকসহ অনান্য সহায়তা প্রদানের লক্ষে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন ২০২০’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এই আইন কার্যকর হলে, তা বাস্তবায়নে একটা বোর্ড গঠন হবে, যার চেয়ারম্যান থাকবেন তথ্যমন্ত্রী। আর ১৩ জনের বড় একটা টিম থাকবে, তারা ট্রাস্টের সবকিছু দেখাশোনা করবে। ট্রাস্টের একজন এমডি থাকবেন, তিনি হবেন নির্বাহী প্রধান। সোমবার তিনি ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রিসভার সদস্যরা বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়ে বলেন, মন্ত্রিসভা বৈঠকে বন্যা ও পুনর্বাসন কর্মসূচী নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। গত কয়েকদিন থেকে পানি নেমে যাচ্ছে। যমুনা নদীর পানি বঙ্গবন্ধু ব্রিজের ওখানে ইতোমধ্যে বিপদসীমার বেশ নিচে চলে গেছে। পদ্মা নদীর পানির স্তর ও গতি কমে গেছে। ভারতের আবহাওয়া বিভাগের ধারণা, আগে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্টভাবে (পার্টিকুলারলি) এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন। ১৮/২০ দিন ধরে এই পানি নামছে না । এই ১৮/২০ দিন পর পানিটা অনেকটা নিচে নেমে যাচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী বিশেষ করে সতর্ক করেছেন, ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি যদি কোন বন্যা আসে তাহলে সেটা কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে থাকার আশঙ্কা থাকে। সুতরাং সরকারের প্রস্তুতি ওইখানে রাখতে হবে। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমাদের পুনর্বাসন কার্যক্রম বিশেষ করে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের অধীনে কিছু কর্মপরিকল্পনা আছে। একটা প্রকল্প আছে সেখানে তিনটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা আছে। একটা হলো ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ঘরবাড়ি পুনঃস্থাপন করবে। আরেকটা হলো স্থানীয় সরকার তাদের ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো মেরামত করবে, পানি উন্নয়ন বোর্ডকেও সেখানে অন্তর্ভুক্ত করা আছে। সেখানে একটা বড় টাকা ধরা আছে যদি কোথাও নদীর বাঁধ ভেঙ্গে যায় ওটাকে তাড়াতাড়ি মেরামত করার জন্য। সে বিষয়ে বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। বন্যায় আমনের বীজ নষ্ট হয়ে গেছে উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী এজন্য বীজতলা একটু উঁচু জায়গায় করার জন্য গুরুত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে পানি সহিষ্ণু জাতের। এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, তারা যে নতুন জাত আবিষ্কার করেছেন সেটা ১৫ দিন পানির নিচে থাকলেও নষ্ট হবে না। প্রধানমন্ত্রী রোপা আমনের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে বলেছেন উল্লেখ করে সচিব বলেন, রোপা আমন ঠিকভাবে না হলে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। গতবার আমনের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৮ লাখ টন, এবার লক্ষ্যমাত্রা ৩৬ লাখ টন। সেই তুলনায় কিছুটা কম হতে পারে। তবে গতবারের তুলনায় উৎপাদন বেশি হবে আশা করা যাচ্ছে। এছাড়া করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে মানুষকে মাস্ক পরতে বাধ্য করা এবং এ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে মোবাইল কোর্ট (ভ্রাম্যমাণ আদালত) পরিচালনায় মাঠ প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছে সরকার। দেশে করোনা সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে, সেই জায়গা থেকে মন্ত্রিসভার অভিমত জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সাধারণ আলোচনা হয়েছে যে মানুষকে অন্তত সচেতন থাকতে হবে। এরমধ্যে দেখা গেছে অনেক মানুষের মধ্যে সচেতনতাটা একটু কমে গেছে। সেটা আরও বাড়াতে হবে। এগুলো ক্যাম্পেনে নিয়ে আসা ও যথাসম্ভব যদি কোন কোন ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্ট করা যায়ৃ। এগুলো নিয়ে সচিব কমিটিতে আলাপ-আলোচনা করে ডিরেক্টিভ দিয়ে দিয়েছি এবং মাঠ প্রশাসনকেও বলে দিয়েছি যে, প্রয়োজনে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও এ সংক্রান্ত খবর প্রচার করে তথ্য মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বিশেষ করে তথ্য মন্ত্রণালয়কে আরও ব্যাপক প্রচারের জন্য বলা হয়েছে। মাঠে গিয়ে মাইক দিয়ে, বিলবোর্ড দিয়ে প্রচার করতে হবে, যাতে মানুষ আর একটু সতর্ক হয়। সে ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে। রেডিও, টেলিভিশন সব জায়গায় প্রচার, তথ্য মন্ত্রণালয়কে বিশেষভাবে বলা হয়েছে। সচিব কমিটির মিটিংয়ে খুব কঠোরভাবে বলেছি। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কারণ সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ধরেন, মোবাইল কোর্ট করার ক্ষেত্রে যদি শাস্তি দেয়া হয়, এই জিনিসটা প্রচার করার জন্য, যে আজ মাস্ক না পরার জন্য বা সেফটি মেজর না নেয়ার জন্য এতোগুলো লোককে বাসে বা বাজারে বা লঞ্চে পানিশমেন্ট দেয়া হয়েছে। মাস্ক পকেটে থাকে, কিন্তু মানুষ পরে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে সরকারে পরিকল্পনার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ বিষয়ে বৈঠকে কোন আলোচনা হয়নি। করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ গত ২১ জুলাই রাস্তার হকার, গণপরিবহন ও সকল ধরনের অফিস-আদালতে সবার জন্য মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে পরিপত্র জারি করে। সবার জন্য মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তা খুব একটা কার্যকর হচ্ছে না। অনেকেই মাস্ক না পড়ে এখানে-সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছেন; গণপরিবহনে চড়ছেন। এতে সংক্রমণ পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী সঙ্কটে রূপ নিচ্ছে। পাশাপাশি অসচ্ছল চলচ্চিত্র শিল্পীদের আর্থিকসহ অনান্য সহায়তা প্রদানের লক্ষে ‘বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আইন ২০২০’ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এই আইন কার্যকর হলে, তা বাস্তবায়নে একটা বোর্ড গঠন হবে, যার চেয়ারম্যান থাকবেন তথ্যমন্ত্রী। আর ১৩ জনের বড় একটা টিম থাকবে, তারা ট্রাস্টের সবকিছু দেখাশোনা করবে। ট্রাস্টের একজন এমডি থাকবেন, তিনি হবেন নির্বাহী প্রধান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই খসড়া আইনের অনুমোদন দেয়া হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রিসভার সদস্য এই বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ২০১৭ সালের ২৪ জুলাই প্রধানমন্ত্রী জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্র শিল্পীদের কল্যাণ সাধনের জন্য বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট নামে একটি ট্রাস্ট স্থাপনের জন্য নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সেই মোতাবেক তথ্য মন্ত্রণালয় সব ফর্মালিটি শেষ করে এই আইনের খসড়া উপস্থাপন করেছে। ট্রাস্ট গঠনের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইন করার উদ্দেশ্য পেশাগত কাজ করতে অক্ষম, অসমর্থ ও অসচ্ছল চলচ্চিত্র শিল্পীকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা। এছাড়া অসচ্ছল ও অসুস্থ চলচ্চিত্র শিল্পীর চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা, কোন চলচ্চিত্র শিল্পীর মৃত্যু হলে তার পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহায়তার ব্যবস্থা করাও এর উদ্দেশ্য। ট্রাস্ট অন্য কোন কাজ বাস্তবায়ন করতে পারবে বলেও আইনে বলা হয়েছে। কোন চলচ্চিত্র শিল্পী মারা গেলে, তাদের ওপর নির্ভরশীলরাও যাতে সহায়তা পায় সেই ব্যবস্থাও আইনে রাখা হয়েছে। বোর্ড তাদের নিজস্ব ফান্ড ও সরকারের দেয়া ফান্ড- এগুলো নিয়ে ট্রাস্ট পরিচালনা করবেন জানিয়ে খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে লোন বা অনুদান গ্রহণ করতে পারবে। সেক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি নিতে হবে, যাতে এমন কোন লোন গ্রহণ না করে পরবর্তী সময়ে এটা রাষ্ট্রের ওপর চেপে বসে। তারা তাদের কনফোর্ট অনুযায়ী আয়বর্ধক বিভিন্ন কার্যক্রমও গ্রহণ করতে পারবে এবং এখান থেকে যে টাকাটা তাদের মুনাফা থাকবে সেটা দিয়ে ওপরের পাঁচটি ক্ষেত্রে চলচ্চিত্র শিল্পীদের সহায়তা করতে পরবে।
×