ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ইলিশের প্রাচুর্য

প্রকাশিত: ২০:৫২, ১১ আগস্ট ২০২০

ইলিশের প্রাচুর্য

বাংলাদেশে মাছের রাজা ইলিশের কদর ঘরে ঘরে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এই সোনালি ইলিশ বিশ্ব বাজারেও তার মর্যাদা সম্প্রসারিত করেছে। গ্রামবাংলার খেটে খাওয়া মানুষের পান্তা ইলিশ আবহমান বাঙালীর সমৃদ্ধ ঐতিহ্য। সঙ্গত কারণেই এই সুষম ও সুস্বাদু ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছের মর্যাদায় আসীন। ইলিশ সম্পদ যেমন আমাদের প্রতিদিনের পুষ্টিকর খাদ্যের চাহিদা মেটায়, আবার মৎস্যশিকারীদেরও জীবন নির্বাহের এক অভাবনীয় কর্মদ্যোতনা। এক সময় চাহিদার তুলনায় ইলিশের সরবরাহের ঘাটতি সবাইকে বিচলিত করে দেয়। একটু বড় সাইজের ইলিশও দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠে। ৩-৪ কেজি ওজনের ইলিশ এখন স্বপ্নের জিনিস। তবে এবার ইলিশের বাজার অন্যবারের তুলনায় ভিন্ন মাত্রার। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ইলিশ আসার মৌসুম শুরু হলে প্রতিবছর অতিরিক্ত সরবরাহ তেমন দৃশ্যমান হয় না। তবে এবার ইলিশের আড়ত এবং বাজারে মাছটির যে উপচেপড়া সরবরাহ তা ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য শুভ সঙ্কেত। দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে বড় সাইজের ইলিশেরও দেখা মিলেছে এবার। ছোট থেকে মাঝারি ছাড়াও বড় মাপের ইলিশের আধিক্যে মনে হয় যে, রুপালি ইলিশের বর্ণিল উৎসব চলছে। মূলত ওজনের ওপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারিত হচ্ছে। সবচেয়ে দামী মাছ ইলিশের মূল্য হ্রাস পাওয়ায় অন্যান্য দেশী মাছের দামেও এসেছে কিছুটা স্বস্তি। ইলিশ আমাদের জাতীয় সম্পদ। এর রক্ষণাবেক্ষণ আমাদের দায়বদ্ধতাও। সুতরাং এমন মূল্যবান এবং প্রিয় সুস্বাদু মাছটিকে তার মর্যাদা রক্ষায় যথেষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণও অনিবার্য। আগে জাটকা ইলিশ নিধনে দেশের বাজারে ইলিশের ঘাটতি থেকেই যেত। আর জাটকা ধরার কারণে মাছটি তার পূর্ণ অবয়বে বাজারে আসতেও ব্যর্থ হতো। সঙ্গত কারণেই ইলিশ তার চিরায়ত বৈশিষ্ট্য হারাতে বসেছিল। বর্তমান সরকারের জাটকা নিধনের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা ও নজরদারিতে ইলিশ তার হারানো ঐতিহ্যে ফিরে আসতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট মৎস্যশিকারীদের প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়াও প্রাসঙ্গিক প্রণোদনা এবং সুনির্দিষ্ট নির্দেশনায় জাটকা ইলিশ পূর্ণাঙ্গ চেহারায় বাজারে তার স্থানকে নিশ্চিত করেছে। যার সুফল আজ জনগণের দ্বারে। স্বল্পমূল্যে এই ইলিশ কেনার ক্ষমতা এখন প্রায় প্রত্যেকের। শুধু জাটকা ধরা বন্ধই নয়, প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহরণও নিষিদ্ধ, যা বর্তমান সরকারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ আর কঠোর নিয়মাবলিতে সম্ভব হয়েছে। যে কারণে বাজারে এখন ইলিশের পর্যাপ্ত সরবরাহ। মৎস্যসম্পদে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় স্থানে। সাগর, নদী বিধৌত বাংলার ভৌগোলিক পরিবেশ মৎস্য উৎপাদনে নিয়ামক শক্তির ভূমিকায় থাকে। কিন্তু এই সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহারে দুর্যোগ নেমে আসতেও সময় নেয় না। সুতরাং ইলিশ মাছের সরবরাহ পর্যাপ্ত এবং নিশ্চিত করতে গেলে আনুষঙ্গিক সমস্ত নিয়মবিধি অনুসরণ করাও একান্ত কাম্য। সুষ্ঠু ও যথার্থ কর্মপ্রকল্প প্রণয়নই শুধু নয়, এর সফল বাস্তবায়নে কঠোর তদারকি ও নজরদারিও দাবি রাখে।
×