ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দিনাজপুরে কৃষকদের ১০ টাকার ব্যাংক হিসাবের ৯০ শতাংশই স্থবির

প্রকাশিত: ১৬:৫০, ১০ আগস্ট ২০২০

দিনাজপুরে কৃষকদের ১০ টাকার ব্যাংক হিসাবের ৯০ শতাংশই স্থবির

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ সরকারের দেওয়া ভর্তুকিসহ বিভিন্ন সুবিধা পৌঁছে দিতে ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়া হয় দেশের কৃষকদের। এই কার্যক্রমে দিনাজপুর জেলায় ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬শ’ ৫৭ জন কৃষককে ব্যাংক হিসাব খুলে দেওয়া হলেও, এখন প্রায় ৯০ শতাংশই স্থবির পড়ে আছে। চলতি বছরে জেলার কৃষকরা ধান কেনার টাকাও নিজস্ব ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে নিয়েছেন। কেউ কেউ নতুন করে ব্যাংক হিসাব খুলেছেন। ব্যাংক কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, আগের করা ১০ টাকার ব্যাংক হিসাবগুলোর মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে, বাকি সব স্থবির পড়ে আছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ১৩টি উপজেলায় ১০ টাকার বিনিময়ে কৃষকদের ব্যাংক হিসাব রয়েছে ২ লাখ ৫৯ হাজার ৬শ’ ৫৭টি। এরমধ্যে প্রায় ২ লাখ ৩৪ হাজারটি হিসাবই স্থবির রয়েছে। যদিও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, জেলায় কার্ডধারী কৃষক রয়েছেন ৫ লাখ ৯০ হাজার ৫শ’ ১৩ জন। অর্থাৎ ৩ লাখ ৩০ হাজার ৮শ’ ৫৬ জন কৃষক ১০ টাকার বিনিময়ে ব্যাংক হিসাবই খোলেননি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্যমতে, দিনাজপুরের সদর উপজেলায় কৃষকের ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব রয়েছে ১০ হাজার ৫শ’ ৪টি, বিরলে ২৮ হাজার ২শ’টি, বোচাগঞ্জে ২১ হাজার ৮শ’ ৮২টি, কাহারোলে ১৮ হাজার ১শ’ ১১টি, বীরগঞ্জে ৩৫ হাজার ২শ’ ৩টি, হাকিমপুরে ১ হাজার ১শ’ ৫৮টি, ঘোড়াঘাটে ৮ হাজারটি, বিরামপুরে ১২ হাজার ১শ’ ৭৮টি, নবাবগঞ্জে ২৬ হাজার ৫শ’ ৮০টি, ফুলবাড়ীতে ১৪ হাজার ২শ’ ৫০টি, পার্বতীপুরে ৩৫ হাজার ৬শ’ ৫১টি, চিরিরবন্দরে ২৮ হাজার ৯শ’ ২০টি এবং খানসামা উপজেলায় রয়েছে ১৯ হাজার ২০টি। দিনাজপুরে কৃষকদের সবচেয়ে বেশি ব্যাংক হিসাব রয়েছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে। উত্তর ও দক্ষিণ জোন নামে দু’টি জোনে বিভক্ত এই ব্যাংকের কার্যক্রম। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক দিনাজপুর শাখার ব্যবস্থাপক অসিত কুমার সরকার জানান, কৃষকদের ১০ টাকার ব্যাংক হিসাবগুলোর মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ হিসাবে বিভিন্ন ভর্তুকি জমা পড়ে। আর সেই হিসেবে মাত্র ১০ শতাংশ কৃষক সেসব ব্যাংক হিসাবে লেনদেন করেন। বাকি যে ৯০ শতাংশ হিসাব রয়েছে তা স্থবির হয়ে রয়েছে। তবে কৃষকরা চাইলেই নিজস্ব টাকা রাখাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে সেসব ব্যাংক হিসাব ব্যবহার করতে পারবেন। ওই হিসাবের মাধ্যমে ঋণও নিতে পারবেন। অগ্রণী ব্যাংক দিনাজপুর পুলহাট শাখার ব্যবস্থাপক শফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমন মৌসুমে কৃষকদের কাছ থেকে সরকারিভাবে ধান কেনার টাকা ওই ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমেই দেওয়া হয়েছে। আমার শাখায় কৃষকের ব্যাংক হিসাব রয়েছে প্রায় ৫ হাজার। যার মধ্যে প্রায় ২ হাজার ১০০ কৃষককে ১০ টাকার ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে টাকা দেওয়া হয়েছে। আর নতুনভাবে ব্যাংক হিসাব হয়েছে প্রায় ৯০০টি। তবে কৃষকরা ওইসব হিসাব অন্য কাজে ব্যবহার করছেন না। আবার অনেক কৃষক রয়েছেন, যাদের একাধিক সঞ্চয়ী হিসাব রয়েছে। তারা আগের নিজস্ব হিসাবের মাধ্যমে লেনদেন করছেন। তবে চাইলেই যে কোনও কৃষক এই ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সব ধরনের কাজ করতে পারেন।’ এদিকে দিনাজপুরে যেসব বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে কৃষকদের ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব রয়েছে সেখানেও একই অবস্থা। দিনাজপুর সদর উপজেলার নশিপুর এলাকার কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ‘এর আগে যে ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব ছিল, তাতে কখনও ভর্তুকি আসেনি। তবে বোরো মৌসুমে ওই হিসাবের মাধ্যমে সরকারের কাছে ধান দেওয়ার টাকা পেয়েছি। এবারে আমন মৌসুমে আবারও নতুন করে হিসাব করেছি। কারণ আগের যে ব্যাংক হিসাবটি ছিল, সেটি অনেকদিন ধরে ব্যবহার না করায়, সেই হিসাব নম্বর হারিয়ে ফেলেছি।’ সদর উপজেলার ৪নং শেখপুরা ইউনিয়নের বোলতৈড় এলাকার কৃষক সেলিম রেজা জানান, ব্যাংক হিসাব করার পর প্রায় পাঁচ বছর একবার ডিজেলের ভর্তুকির ২ হাজার টাকার মতো পেয়েছিলাম। এরপর আর কোনও ভর্তুকির টাকা পাইনি, তাই হিসাবটি ব্যবহারও করা হয় না। দিনাজপুরে যেসব কার্ডধারী কৃষক রয়েছেন, তাদের প্রায় সকলেরই ব্যাংক হিসাব রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। জেলায় মোট কার্ডধারী কৃষক রয়েছেন ৫ লাখ ৯০ হাজার ৫শ’ ১৩ জন। এটি ২০১৬ সালের আপডেট তথ্য। তবে চলতি বছরে সকল কৃষকই কার্ডধারী হবেন। এ জন্য কার্ড ছাপানোর কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ তৌহিদুল ইকবাল বলেন, ‘কৃষকরা সব ধরনের ভর্তুকি পাচ্ছেন। সারের দাম কমানো হয়েছে, তেলের দাম কমানো হয়েছে। এই হিসেবে শতভাগ কৃষকই সরকারি ভর্তুকি পাচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন প্রকল্পের প্রশিক্ষণ, সরকারি গুদামে ধান-গম দেওয়া, প্রদর্শনী, ক্ষেত পরিচর্যাসহ বিভিন্ন প্রকল্পে দেওয়া আর্থিক ভর্তুকির অর্থ তাদের হিসাবে জমা পড়ে ১০ শতাংশের মতো। যাদের কৃষক কার্ড আছে, তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। তাদের প্রায় সকলেরই ১০ টাকার ব্যাংক হিসাব রয়েছে। তবে শুধু আর্থিক ভর্তুকির জন্য নয়; বরং সব প্রয়োজনেই এসব হিসাবগুলো কৃষকরা ব্যবহার করতে পারেন।’
×