ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ব্লু ইকোনমি জোন

প্রকাশিত: ২২:৩৭, ১০ আগস্ট ২০২০

ব্লু ইকোনমি জোন

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক জীবনরেখা বঙ্গোপসাগর সাম্প্রতিক সময়ে আঞ্চলিক রাষ্ট্রসমূহের কাছে ভূ-রাজনৈতিক কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভারত, চীন ও জাপানের বিপুল বিনিয়োগই সেটি স্পষ্ট করে দিয়েছে। বাংলাদেশ জাপানের আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা জাইকার সঙ্গে মিলিতভাবে বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট স্ট্র্যাটেজি (বিআইজিÑবি) নামে পরিচিত প্রকল্পের মাধ্যমে উপকূলীয় অবকাঠামো নির্মাণে সম্পৃক্ত রয়েছে। জাপান কুতুবদিয়ার মাতারবাড়িতে এলএনজি আমদানি সুবিধাসম্পন্ন একটি বন্দর নির্মাণ করছে। বঙ্গোপসাগরে টোকিওর উপস্থিতি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে জাপান এসব প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। জনকণ্ঠে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে শনিবার। জাপান, চীন এবং ভারতের অর্থায়নে বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের চারটি স্থানে গভীর সমুদ্র বন্দর, অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার কাজ বেশ জোরেশোরে এগিয়ে চলেছে। এসব প্রকল্পে বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করছে এ তিন দেশ। এছাড়া প্রকল্পের সঙ্গে গড়ে উঠছে এলএনজি, কয়লা, তাপ বিদ্যুতসহ বিভিন্ন প্রকল্প। বঙ্গোপসাগরের এ অঞ্চলকে ঘিরে ব্লু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতিতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় জাপান, চীন এবং ভারত পিছিয়ে থাকতে চায় না বলেই এ দুই দেশকে ঘিরে ইতোমধ্যে বিপুল অঙ্কের এ বিনিয়োগ বলে বিশেষজ্ঞদের মত। আমরা বারবারই বলে আসছি যে, বাংলাদেশের দক্ষিণে বিশাল সমুদ্র এলাকা ঘিরে স্বপ্ন জেগে উঠেছে নতুন এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশের। বিশাল এ জলসীমাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব। এতে পাল্টে যাবে বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতির চিত্র। এরই মধ্যে বিশাল এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে শুরু হয়েছে কর্মযজ্ঞ। এটা ঠিক যে, আমাদের শুরুটা একটু বিলম্বেই। আরও স্পষ্ট করে বললে বলতে হয়, যথেষ্ট শক্তি নিয়ে শুরু করার প্রাথমিক পর্যায়েই আমরা রয়েছি। অথচ এ অঞ্চলের দুটি বড় রাষ্ট্র চীন ও জাপান ২০০ থেকে ৩০০ বছর আগে সমুদ্রনির্ভর কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। এখন অনেক দেশের জাতীয় আয়ের সিংহভাগ আসে সমুদ্রনির্ভর কর্মকাণ্ড থেকে। আমাদের বিশাল সমুদ্র এলাকাকে কাজে লাগিয়ে মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা এবং জিডিপির প্রবৃদ্ধি ঘটিয়ে জাতীয় অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশের জন্য বঙ্গোপসাগর যেমন গুরুত্বপূর্ণ একটি সমুদ্র সংযোগের স্থান, তেমনি কৌশলগত পরিসরও বটে। একইভাবে, যতক্ষণ পর্যন্ত সমুদ্র যোগাযোগের বিষয়টি আমলে নেয়া হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত মিয়ানমার ও অন্যান্য উপকূলীয় রাষ্ট্রের জন্য বঙ্গোপসাগর সমানভাবে অপরিহার্য। বঙ্গোপসাগরের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতে এর উপকূলীয় রাষ্ট্রসমূহের অভিন্ন স্বার্থ বিদ্যমান। বিমসটেক এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংগঠন বঙ্গোপসাগরে একটি আইনভিত্তিক সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারে, যা অন্তত বঙ্গোপসাগরকে তুলনামূলকভাবে শান্তি বজায় রাখতে সহায়তা করবে এবং সমুদ্র সম্পদের হিস্যার পথ সুগম করবে। বাংলাদেশের সমুদ্র সীমানার মধ্যে শুধু বিপুল মৎস্য ভাণ্ডার নয়, রয়েছে অফুরন্ত প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের ভাণ্ডারও। বিশেষ গঠন-প্রকৃতির কারণেই তেল-গ্যাসসহ নানা খনিজ সম্পদ সঞ্চিত রয়েছে সাগরের তলদেশে। প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশই তাদের টেকসই উন্নয়ন কর্মসূূচীর মাধ্যমে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের মতো একটি উপকূলীয় রাষ্ট্রের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষ করে সমুদ্র পরিবহন ও বন্দর সহযোগিতা বৃদ্ধি, মৎস্য আহরণ, মৎস্য রফতানি, পর্যটন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ, কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ সর্বোপরি জীববিজ্ঞান ও সমুদ্রবিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়নের একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সমুদ্র ও অন্যান্য জলজ সম্পদের টেকসই ব্যবহারে বৈশ্বিক সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরী।
×