ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নবেম্বর শেষে সাড়ে ৫৫ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত

প্রকাশিত: ২২:০৫, ১০ আগস্ট ২০২০

নবেম্বর শেষে সাড়ে ৫৫ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়েও নবেম্বরের শেষে সাড়ে ৫৫ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। চালের মজুদ নিয়ে এক ভার্চুয়াল সেমিনারে নিজস্ব জরিপ গবেষণার বরাতে এ তথ্য জানান ব্রি মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর। নবেম্বরের মধ্যে আউশ ও আমনের উৎপাদন যুক্ত হলে বাংলাদেশে আপাতত খাদ্য ঘাটতির কোন আশঙ্কা থাকবে না বলেও জানানো হয় ওয়েবিনারে। ব্রি আরও জানান, বিগত দশ বছরে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ধান উৎপাদনকারী দেশগুলোর উৎপাদন চিত্র তুলে ধরে বলা হয় কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতেও দেশে চাল উৎপাদন বেড়েছে। রবিবার বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) আয়োজিত ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তা : বাংলাদেশ কী চাল ঘাটতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে?’ শীর্ষক অনলাইন ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়। অনলাইন ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। এছাড়াও বিশেষ অতিথি ছিলেন, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। কৃষিসচিব মোঃ নাসিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মোঃ শাহাজাহান কবীর। মুখ্য আলোচক ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। ওয়েবিনার আয়োজনের উদ্দেশ ছিল কোভিড-১৯ সময়কালীন খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতি, ধানের উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণে গৃহীত পদক্ষেপ পর্যালোচনা এবং উৎপাদনে বৃদ্ধিতে ভবিষ্যত করণীয় নির্ধারণ করা। কোভিট-১৯ কালীন ও তৎপরবর্তী দেশের খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে কয়েকটি দেশী-বিদেশী সংস্থার বরাত দিয়ে অনেক বিভ্রান্তিমূলক তথ্য প্রচারিত হচ্ছে যা জনমনে এবং পলিসি লেভেলে অস্বস্তি তৈরি করায় ব্রি মনে করে, এই ওয়েবিনার দেশের খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে উদ্ভুত সব বিভ্রান্তি নিরসন করবে। প্রধান অতিথি বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আপাতত দেশে খাদ্য ঘাটতির কোন আশঙ্কা নেই। মন্ত্রী আরও বলেন, চলমান বন্যায় আউশের অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। আমন ধানও অনেকক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। খরার কারণে অনেক সময় উৎপাদন আশানুরূপ হয় না। আউশ আমনে চলমান বন্যার ক্ষয়ক্ষতি ও আমনের উৎপাদন পর্যালোচনা করে প্রয়োজন হলে সীমিত আকারে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে যদি আমনের ফলন ভাল না হয়, বন্যা প্রলম্বিত হয়, বন্যার ক্ষয়ক্ষতি ঠিকমতো কাটিয়ে ওঠা না যায়, তবেই চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, কৃষিতে চলমান বন্যার ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সব ধরনের কার্যক্রম চলছে। আমন মৌসুমে উৎপাদন বাড়াতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, আগামী রবি মৌসুমের সব ফসলে উৎপাদন বাড়াতে পূর্বপ্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। যাতে করে করোনা, আমফান ও চলমান বন্যার বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। দেশে খাদ্য ঘাটতির কোন আশঙ্কা নেই ॥ বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এর গবেষণায় দেখা গেছে, চালের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩.৫৪ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বোরো ও আমন মৌসুমের উদ্বৃত্ত উৎপাদন থেকে হিসাব করে, জুন পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে ২০.৩১ মিলিয়ন টন চাল ছিল। আগামী নবেম্বর পর্যন্ত চাহিদা মেটানোর পরেও ৫.৫৫ মিলিয়ন টন চাল দেশের অভ্যন্তরে উদ্বৃত্ত থাকবে। নবেম্বর পর্যন্ত ১৬.৫০ কোটি মানুষের চাহিদা মিটানোর পরেও ৩৬-৭৮ দিনের চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতেও দেশে চাল উৎপাদন বেড়েছে ॥ ওয়েবিনারে বিগত দশ বছরে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ধান উৎপাদনকারী দেশগুলোর উৎপাদন চিত্র তুলে ধরে বলা হয় ২০১০ সালে যেখানে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল চতুর্থ। বর্তমানে সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি, গবেষণা ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে ইন্দোনেশিয়াকে পেছনে ফেলে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। যা বাংলাদেশের জন্য বিশাল একটি অর্জন এবং খাদ্য নিরাপত্তায় মাইলফলক। যদিও ইউএসডিএ ধানের উৎপাদন নিয়ে পূর্বাভাস দিয়েছিল যে, গত বছরের তুলনায় উৎপাদন ০.২৮ ভাগ কমে যাবে, কিন্তু বাস্তবে ধানের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৯-২০ সালে ৩৮.৭ মিলিয়ন টনে উন্নীত হয়েছে। এবার বোরো ধান চাষ লাভজনক ছিল ॥ ব্রি তথ্যে এবার বোরো ধান চাষ লাভজনক ছিল। ধান কাটা মৌসুমে কাঁচা ধানের দাম গত বছরের তুলনায় বেশি থাকায় কৃষকের মোট আয় শতকরা ১৬.৭ ভাগ বেড়েছে। বোরো ধান চাষীদের তথ্য মতে, এ বছর তারা গড়ে বিঘাপ্রতি ১৬০৪ টাকা লাভ করেছেন যেখানে গত বছর তাদের লোকসান গুনতে হয়েছিল। এ বছর কর্তনকালীন সময়ে এবং ১ থেকে ২ মাসের মধ্যে কৃষক গত বছরের তুলনায় কম পরিমাণ ধান বাজারে বিক্রয় করেছেন। সরকার ঘোষিত দামে চাল বিক্রি করে মিলাররা লাভবান ॥ ব্রির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাল উৎপাদন খরচের ক্ষেত্রে মৌসুমে বিদ্যমান সর্বনিম্ন দামে মিল মালিকরা যে ধান কেনেন সেটি থেকে কেজিপ্রতি চাল উৎপাদনে ২৭ দশমিক ৮৬ টাকা খরচ হয়। অন্যদিকে সর্বোচ্চ দাম বিবেচনায় দেখা যায়, কেজিপ্রতি চাল উৎপাদনে ৩৫ দশমিক ৮০ টাকা খরচ হয়। গড় বিবেচনায় এক কেজি চাল উৎপাদনে ৩২ দশমিক ৩৪ টাকা ব্যয় হয়। বিদ্যুত বিল, যানবাহন ও শ্রমিক খরচ বাড়ার কারণে এ বছর ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ খরচ বাড়লেও সরকার ঘোষিত দামে চাল বিক্রি করে মিল মালিকরা লাভবান হচ্ছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
×