ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দেশে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর হার বৃদ্ধি পেয়েছে ॥ স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২১:২১, ১০ আগস্ট ২০২০

দেশে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর হার বৃদ্ধি পেয়েছে ॥ স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, বাংলাদেশে মায়েদের বুকের দুধ খাওয়ানোর হার বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বে এখন মায়েদের বুকের দুধ খাওয়ানোর হার ৪০ শতাংশ, যেখানে বাংলাদেশে এই হার এখন ৬৫ শতাংশ। করোনা ও বন্যার দুর্যোগের সময়েও বাংলাদেশে মায়েদের বুকের দুধ খাওয়ানোতে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যখাতের মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীরা শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত আছেন। বিশ্ব আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে ভ্যাকসিন হিরো থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কারে পুরস্কৃত করেছে। এই করোনার মহামারীতেও দেশের স্বাস্থ্যখাতের সময়োচিত উদ্যোগের কারণে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনা শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার সবচেয়ে কম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। রবিবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মোঃ আবদুল মান্নানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ আলী নূর, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ এস কে রায়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে নবজাতক এবং ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে মায়ের দুধ পান করানোর প্রবণতা বেড়েছে। ৪৭ শতাংশ নবজাতককে জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মাতৃদুগ্ধ দেয়া হয় এবং ছয় মাস বয়স পর্যন্ত ৬৫ শতাংশ শিশুকে মায়ের দুধ পান করানো হয়। জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে শিশুকে মায়ের দুধ দেয়া হলে নবজাতকের মৃত্যু হার ৩১ শতাংশ এবং ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধ পান করালে অনুর্ধ ৫ বছর বয়সী শিশু মৃত্যু হার ১৩ শতাংশ রোধ করা যায়। অধ্যাপক ডাঃ এস কে রায় বলেন, জীবনের প্রথম ৬ মাস শুধু মায়ের বুকের দুধ পান করলে শিশু যথাযথ শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটে। এতে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। আর জন্মের ৬ মাস পর শিশুকে বাড়তি খাবার খাওয়াতে শুরু করতে হবে। পুষ্টিকর খাবার বলতে শুধুমাত্র দামী খাবারকে বুঝায় না। অনেক পুষ্টি উপাদান বাড়ির আশপাশেই রয়েছে, যা স্বল্প মূল্যে সংগ্রহ করা সম্ভব। পারিবারিক খাবার থেকেই আলাদা করে (নরম ও গুড়ো করে মাখিয়ে) শিশুকে দেয়া যায়। মায়ের দুধের পরিবর্তে কৌটার বা বাজারের দুধ খেলে শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পড়ে, শিশু অপুষ্টির শিকার হয়। সরকারী বেসরকারী উদ্যোগে এ শিক্ষাটি ব্যাপকভাবে প্রচার করতে হবে। এতে মানুষের মধ্যে পুষ্টি ধারণা বাড়বে এবং অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশু ও মায়ের সংখ্যা কমে আসবে। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, শৈশবকালীন অপুষ্টির হার বাংলাদেশে হ্রাস পাচ্ছে, তবে হ্রাস পাওয়ার গতি কম। অপুষ্টির সবচেয়ে প্রচলিত রূপ হলো খর্বতা, যা দীর্ঘকালীন অপুষ্টিতে ভোগার পরিণাম। একটি খর্বতায় শিশুর ঘন ঘন সংক্রমণের প্রবণতা দেখা যায় এবং তার মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। বাংলাদেশে অনুর্ধ ৫ বছর বয়সী প্রতি ৫ জন শিশুর মধ্যে ২ জন খর্বতায়। এই হার ধনী জনগোষ্ঠী অপেক্ষা দরিদ্রদের মধ্যে দ্বিগুণ। যে অনুর্ধ ৫ বছর বয়সী প্রায় সাড়ে চার লাখ শিশু মারাত্মক তীব্র অপুষ্টির শিকার। পাশাপাশি এই অবস্থা নিয়ে যারা বেঁচে আছে তাদের মানসিক বৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বয়স ও লিঙ্গ অনুযায়ী স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজনের শারীরিক পরিস্থিতিকে কম ওজন বলা হয়। বাংলাদেশে শৈশবকালীন অপুষ্টির মূল কারণ যথাযথভাবে শিশুখাদ্য ও পুষ্টিবিধির চর্চা না করা।
×