ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিলের শাপলায় স্বপ্ন বুনছে ওরা

প্রকাশিত: ১৬:৫৪, ৯ আগস্ট ২০২০

বিলের শাপলায় স্বপ্ন বুনছে ওরা

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম হৃদয় রায়ের (৩৫) গ্রামের মধ্যে একটি মুদি দোকান ছিলো। সম্প্রতি সময়ে রাতের আঁধারে তার দোকানটি পুড়ে যায়। এতে তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে চরম অসহায় হয়ে পড়েন। একদিকে করোনা আতঙ্ক অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে চারিদিকে পানিতে টই টুম্বুর। তাই কোন কাজ জোগার করতে পারছিলেন না হৃদয়। অবশেষে বিলের মধ্যে প্রাকৃতিকভাবে ফুটে ওঠা জাতীয় ফুল শাপলা তার অসহায় পরিবারের জন্য আর্শীবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত দুইমাস ধরে হৃদয় শাপলা বিক্রি করে পরিবারের জিবীকা নির্বাহ করছেন। প্রতিদিন পরিবারের সদস্যরা বিলের মাঝে ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে শাপলা তুলে আনেন। এরপর শাপলার মুঠো বেঁধে ভ্যানে সাজিয়ে সকাল হলেই শাপলা বিক্রিতে নেমে পরেন হৃদয়। শাপলাগুলো গৌরনদী, টরকী বন্দর ও বাশাইল বাজারে বিক্রি করে থাকেন। বর্ষার শুরুতে শাপলার দাম কিছুটা ভাল থাকলেও এখন তিন মুঠো শাপলা বিক্রি করতে হয় ১০ টাকা। তবে বাজারে একেক সময় একেক রকম দাম থাকে। হৃদয়ের মতো একই এলাকার চিত্ত রঞ্জন বৈদ্য, নিতাই বৈদ্যসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারের গৃহকর্তারা এখন শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। হৃদয় রায় জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের লখারমাটিয়া গ্রামের বাসিন্দা। সূত্রমতে, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় বিভিন্ন এলাকার নিন্মাঞ্চল। এক্ষেত্রে বিলাঞ্চলে পানির প্রভাব থাকে সবচেয়ে বেশি। বর্ষায় বিলাঞ্চলের ফসলি জমি আর গ্রামীণ জনপদের নিন্মাঞ্চল তলিয়ে থাকায় দিনমজুর পরিবারের হাতে কোন কাজ থাকেনা। তাই পরিবারের অর্থনৈতিক চাঁকা সচল রাখতে বিলাঞ্চলের প্রাকৃতিক মাছ কিংবা শাপলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয় দিনমজুর পরিবারের সদস্যদের। সরেজমিনে জেলার আগৈলঝাড়া, উজিরপুর ও গৌরনদী উপজেলার বিলাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, প্রাকৃতিক ভাবে বিলের মাঝে ফুটে উঠছে জাতীয় ফুল শাপলা। আর এ শাপলাকে ঘিরেই পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর আশায় দিনমজুর পরিবারের সদস্যরা ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে বিলের মাঝে শাপলা তুলতে ব্যস্ত হয়ে পরছেন। গ্রাম কিংবা শহরে শাপলা কদর বৃদ্ধি পাওয়ায় চাহিদাও বেড়েছে ব্যাপক। আগৈলঝাড়ার রাজিহার ইউনিয়নের একাধিক দিনমজুর পরিবারের শাপলা বিক্রেতারা জানান, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে প্রায় চার থেকে পাঁচ মাস বিলের মধ্যে পানি থাকে। তখন এলাকায় কৃষি কাজ কমে যায়। আর্থিক সংকটের কারনে তাদের শাপলা কিংবা বিলের মাছ বিক্রি করে চলতে হয়। শাপলা বিক্রিতে কোন মূলধনের প্রয়োজন না হওয়ায় দিনমজুর পরিবারের অনেকেই বর্ষা মৌসুমে শাপলা বিক্রি করে থাকেন। তারা আরও জানান, আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহারসহ উজিরপুর উপজেলার কয়েকটি বিলে স্থানীয় প্রভাবশালীরা মাছ চাষ করায় এখন আর আগের মতো বিলে শাপলা ফুটছে না। এমনকি প্রাকৃতিক মাছও বিলে ঢুকতে পারছেনা। ফলে শাপলা বিক্রেতা ও বিলের প্রাকৃতিক মাছ শিকারীদের আয় অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার অনেকটা কমে গেছে। গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ মামুনুর রহমান জানান, শাপলা জাতীয় ফুল হলেও এটা উপকারী সবজি। এটি সম্পূর্ণ বিষমুক্ত হওয়ায় সব পেশার মানুষের মাঝেই শাপলার কদর রয়েছে। এছাড়া শাপলায় প্রচুর পরিমানে আয়রণসহ নানাবিদ পুষ্টিগুন রয়েছে।
×