ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রিয়াল মাদ্রিদ আর রোনাল্ডোর বিদায়ের রজনী

প্রকাশিত: ২৩:৩২, ৯ আগস্ট ২০২০

রিয়াল মাদ্রিদ আর রোনাল্ডোর বিদায়ের রজনী

জিএম মোস্তফা ॥ আবারও পরাজয়ের স্বাদ পেল রিয়াল মাদ্রিদ। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের দ্বিতীয় লেগে শুক্রবার ম্যানচেস্টার সিটির কাছে ২-১ গোলে হেরেছে স্প্যানিশ জায়ান্টরা। এর ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ম্যানচেস্টার সিটি ৪-২ ব্যবধানে রিয়াল মাদ্রিদকে পরাজিত করে ইউরোপ সেরার এই টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করে। ম্যানচেস্টার সিটির কাছে হেরে ভিন্নরকম এক অভিজ্ঞতাও অর্জন করলেন জিনেদিন জিদান। ক্যারিয়ারে এই প্রথম নকআউট পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হলো রিয়াল মাদ্রিদের এই ফরাসী কোচকে। রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে হতাশার একটি রাত পার করলেন তাদের সাবেক তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোও। ব্যক্তিগত পারফর্মেন্সে সিআর সেভেন এদিন আলো ছড়ালেও তার দল জুভেন্টাস যে ছিটকে গেছে নকআউট পর্ব থেকেই। নকআউট পর্বের বাঁচা-মরার ম্যাচে এদিন রোনাল্ডোর জোড়া গোলে জুভেন্টাস ২-১ ব্যবধানে পরাজিত করে ফরাসী ক্লাব লিওকে। কিন্তু প্রথম লেগে ১-০ গোলে জিতেছিল লিঁও। যে কারণে ম্যাচের ফলাফল ২-২ হলে এ্যাওয়ে গোলের সৌজন্যে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট নিশ্চিত করে ফ্রেঞ্চ লীগ ওয়ানের দল লিঁও। আর তাতেই কপাল পুড়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর দল জুভেন্টাসের। গত মৌসুমের আগেও চ্যাম্পিয়ন্স লীগে দাপট দেখিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। বিশেষ করে জিনেদিন জিদানের অধীনে ইতিহাসের প্রথম কোন দল হিসেবে ইউরোপ সেরার এই টুর্নামেন্টে টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অবিশ্বাস্য নজির গড়ে লস ব্ল্যাঙ্কোসরা। কিন্তু জিদান কোচ হিসেবে সরে দাঁড়ানোর পর থেকেই বদলে যায় স্প্যানিশ ক্লাবটি। রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে দেন সময়ের সেরা তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোও। এরপর আবারও জিদানকে কোচ হিসেবে ডেকে আনে রিয়াল। কোচ হয়ে এসে স্প্যানিশ লা লিগার শিরোপা পুনরুদ্ধার করে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণও দেন এই ফরাসী কিংবদন্তি। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন্স লীগে আর পারলেন না তিনি। নকআউট পর্বের প্রথম লেগে নিজেদের ঘরের মাঠেই পেপ গার্ডিওলার কাছে ২-১ গোলে হেরেছিল রিয়াল। যে কারণে সিটিজেনদের বাধা অতিক্রম করতে হলে দুই গোলের ব্যবধানে জিততে হতো রিয়ালের। কিন্তু ম্যানচেস্টার সিটির মাঠেও জ্বলে উঠতে ব্যর্থ হলো জিনেদিন জিদানের দল। বিশেষ করে রাফায়েল ভারানের এলোমেলো ভুলে বিদায় নিশ্চিত হলো রিয়াল মাদ্রিদের। এই ম্যাচে সিটি যেভাবে খেলেছে তাতে ব্যবধানটা আরও বেশি হতে পারত। কিন্তু গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়ায় মান বেঁচেছে লা লিগার চ্যাম্পিয়নদের। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের ৯ মিনিটেই অযথা বলের দখল নিয়ে সময় নষ্ট করতে গিয়ে জেসুসের পায়ে বল তুলে দেন রাফায়েল ভারানে। সেখান থেকে খালি বারে গোল করে সিটিজেনদের এগিয়ে দেন রহিম স্টার্লিং। তারপরও হাল ছাড়েনি জিদানের শিষ্যরা। ২৮ মিনিটে করিম বেনজেমার গোল ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দেয় রিয়ালকে। শুধু তাই নয়, প্রথমার্ধে এগিয়ে যাওয়ারও সুযোগ পেয়েছিল তারা। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি টুর্নামেন্টের সাবেক চ্যাম্পিয়নরা। ম্যাচের ৬৮ মিনিটে রিয়ালের পরের রাউন্ডে উঠার সম্ভাবনা একেবারে ধ্বংস করে দিয়ে আবারও বল প্রতিপক্ষের পায়ে ঠেলে দেন সেই ভারানে! কোর্তোয়ার পক্ষে কোন সম্ভাবনাই ছিল না জেসুসের শট আটকানোর। ফলে ভারানের দুই ভুলেই স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় রিয়াল মাদ্রিদকে। ম্যাচশেষে রাফায়েল ভারানেও স্বীকার করে নিয়েছেন, ‘এই হার আমার ভুলে হয়েছে, সব দোষ আমার।’ জিদান অবশ্য ভারানের ভুল নিয়ে পড়ে থাকতে চান না, ‘আমরা ভারানেকে বলব মাথা উঁচু রাখতে। এই মৌসুমে আমরা যা (লা লিগা) অর্জন করেছি সেটা দুর্দান্ত।’ প্রথম লেগে লালকার্ড দেখে এই ম্যাচে খেলতে পারেননি সার্জিও রামোস। তার অভাবটা এদিন ঠিকই ভুগিয়েছে রিয়ালকে। দিনের আরেক ম্যাচে রোনাল্ডো জোড়া গোল করলেও ম্যাচের নায়ক হতে পারেননি একজনের কারণে। হ্যাঁ, জার্মান রেফারি ফেলিক্স জোয়ায়ের প্রশ্নবিদ্ধ এক পেনাল্টির সিদ্ধান্তেই গোল করে মহামূল্যবান এক এ্যাওয়ে গোল পেয়ে যায় লিঁও। তাতেই কপাল পুড়ে জুভেন্টাসের। প্রথম লেগে ১-০ গোলে জিতে এগিয়েছিল ফরাসী ক্লাবটি। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নামা লিঁও এদিন ম্যাচ শুরুর ১২ মিনিটেই পেয়ে যায় আরেকটি দারুণ সুযোগ। ডি-বক্সের মধ্যে বিপজ্জনকভাবে ঢুকে যাওয়া ফরাসী মিডফিল্ডার হুসাম ওয়ারকে আটকাতে গিয়ে সাইড ট্যাকল করেন জুভেন্টাসের উরুগুইয়ান মিডফিল্ডার রদ্রিগো বেনতাঙ্কুর। বেশ ভালভাবেই ওয়ারের পা থেকে বল কেড়ে নিতে সক্ষম হন তিনি, একইসঙ্গে ট্যাকলের কারণে পড়ে যান ওয়ার। রেফারি ওয়ারের পড়ে যাওয়া দেখলেও দেখেননি বেনতাঙ্কুরের বল জিতে নেয়ার দৃশ্যটা। ফলে পেনাল্টি পায় লিঁও। সেখান থেকে গোল করে দলকে মহামূল্যবান এ্যাওয়ে গোল এনে দেন স্ট্রাইকার মেমফিস ডিপাই। তারপরও আশা ছাড়েননি রোনাল্ডো। ৪১ মিনিটে এবার জুভেন্টাসকে প্রশ্নবিদ্ধ এক পেনাল্টি উপহার দেন রেফারি। লিঁও’র বক্সের বাইরে ফ্রি-কিক পায় জুভেন্টাস। বসনিয়ান মিডফিল্ডার মিরালেম পিয়ানিচের নেয়া ফ্রি-কিক গিয়ে লাগে মানবদেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ডিপাইয়ের হাতে। যদিও সেখানে ডিপাই হাত যথাসম্ভব শরীরের কাছাকাছি রেখেছিলেন, তাও রেফারি আরও একবার বিতর্ক উসকে দিয়ে পেনাল্টির সিদ্ধান্তে বহাল থাকেন। রেফারি সরাসরি পেনাল্টির ইঙ্গিতের পর ভিএআরও সেই আদেশ বহাল রাখে। পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান সিআর সেভেন। ম্যাচের ৬০ মিনিটে দূরপাল্লার এক শটে লিঁওর গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার সম্ভাবনাও উজ্জ্বল করেন রোনাল্ডো। এই গোলের মাধ্যমে এক মৌসুমে জুভেন্টাসের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের ৯৫ বছর পুরনো রেকর্ড ভাঙ্গেন তিনি। আরেকটি গোল করলেই কোয়ার্টারের টিকেট কাটবে জুভেন্টাস। সেই স্বপ্নে বিভোর তখন গোটা দুনিয়ার জুভেন্টাসভক্তরা। কিন্তু না শেষ পর্যন্ত আর কোন গোলের দেখা পায়নি তারা। ফলে এ্যাওয়ে গোলের সুবাদে জুভেন্টাসকে ছিটকে দিয়ে কোয়ার্টারে পৌঁছে যায় লিঁও।
×