ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি ‘প্রেরণার বাতিঘর’

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ৯ আগস্ট ২০২০

ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি ‘প্রেরণার বাতিঘর’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর/অর্ধেক তার গড়িয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর ...। কাজী নজরুলের ইসলামের এই পঙ্ক্তিমালার অনন্য উদাহরণ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। শেখ মুজিবুর রহমানের বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠা থেকে স্বাধীনতার মহানায়কে পরিণত হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে এই মহীয়সী নারীর অনুপ্রেরণা। সেই অর্থে অন্তরালে থেকেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে দেশ গঠনের সূচনলগ্নে রয়েছে তার ভূমিকা। শনিবার ছিল তার ৯০তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। ভার্চুয়াল মাধ্যমে আয়োজিত অনুষ্ঠানটির শিরোনাম ছিল ‘প্রেরণার বাতিঘর’। আলোচনার সঙ্গে গান-কবিতায় সজ্জিত অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারিত হয় একাডেমির ফেসবুক লাইভে। সূচনা সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরিবেশিত হয়Ñ শোন একটি মুজিবরের থেকে/লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি/আকাশে বাতাসে ওঠে রণি/বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ ...। সারেঙ্গির করুণ সুরে বঙ্গমাতার প্রতি শ্রদ্ধা জানান যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী নাছির উদ্দিন। অনিমা মুক্তি গোমেজ গেয়ে শোনানÑ বঙ্গমাতা তুমি, ওগো তোমারে সেলাম/তোমার আত্মত্যাগের গুণে বঙ্গবন্ধুকে পেলাম ...। মহাদেব সাহার কণ্ঠে গীত হয় ‘যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ক, আমি তোমায় ছাড়ব না মা’। বঙ্গমাতাকে নিয়ে স্বরচিত গান শোনান গোপালগঞ্জের শিল্পী রাখাল কিশোর ঠাকুর। তার গাওয়া গানের শিরোনাম ছিলÑ বঙ্গমাতা তোর লাগিয়া পরান কান্দে/জাতির পিতা শেখ মুজিবের শক্তি ছিলে তুমি/সাত কোটি বাঙালির ছিলে তুমি জননী ...। আবু বকর সিদ্দিক পরিবেশন করেন ‘বঙ্গমাতার জীবনগাথা শোনেন দিয়া মন’ শীর্ষক সঙ্গীত। এছাড়া সঙ্গীত পরিবেশন করেন আবিদা সুলতানা ও সিলেটের শিল্পী নাসরীন চৌধুরী। ‘মা তুমি রেণু মা’ শীর্ষক স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। প্রধান অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। প্রধান বক্তা হিসেবে আলোচনা করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম। এছাড়াও আলোচনায় অংশ নেন মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভাষ সিংহ রায়। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। নাছিমা বেগম এনডিসি বলেন, বঙ্গমাতাকে নিয়ে আরও বেশি গবেষণা হওয়া উচিত। তিনি নিজে লেখাপড়া কম জানলেও শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রতি প্রবল অনুরাগ ছিল। এ কারণেই সন্তানদেরকে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। যেখানে শিক্ষার সঙ্গে সংস্কৃতির সংযোগ ছিল। তার উৎসাহেই শেখ হাসিনা বেহালা বাজিয়েছেন, শেখ কামাল সেতারে সুর ছড়িয়েছেন। তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিক্ষণীয় আছে। লিয়াকত আলী লাকী বলেন, আমরা জানি যে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন সময় যখন কারাগারে ছিলেন তখন বঙ্গমাতাকে হত্যার হুমকি এসেছে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি উঠে এলে দৃঢ়ভাবে নিজস্ব সিদ্ধান্তে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণের জন্য বঙ্গবন্ধুকে মনস্তাত্ত্বিক সাহায্য দিয়েছেন। শেখ মুজিবের বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে তারই প্রেরণা। নাজমা আক্তার বলেন, বাংলাদেশ গঠনের কথা বলতে গেলে বঙ্গবন্ধুর নামের পাশে ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নামটিও বলতে হবে। পর্দার আড়ালে থেকে তিনি বঙ্গবন্ধুকে পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু কখনও প্রকাশ্যে আসেননি। প্রচারবিমুখ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পরে নারী পুনর্বাসনের বিষয়েও তার ভূমিকা রয়েছে। নতুন প্রজন্মের কাছে তার এই অবদানের কথা ছড়িয়ে দিতে হবে। শুভাষ সিংহ রায় বলেন, ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের মাত্র ৪৫ বছরের জীবনে এই জাতির জন্য তার যে ভূমিকা তা লিপিবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডালিয়া আহমেদ।
×