ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী সপ্তাহে মফস্বলের চামড়া ঢুকবে ট্যানারি ও আড়তে

কাঁচা চামড়া রফতানি নিয়ে দোটানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ৯ আগস্ট ২০২০

কাঁচা চামড়া রফতানি নিয়ে দোটানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

এম শাহজাহান ॥ অবশেষে কাঁচা চামড়া রফতানির জন্য আবেদন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনটি আবেদন জমা হয়েছে। আরও কয়েকটি জমা হবে খুব শীঘ্রই। কয়েকটি সংগঠন চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্যও আবেদন করে। এ নিয়ে দোটানায় পড়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ঈদের সময় কাঁচা চামড়া নিয়ে ব্যবসায়ীদের কারসাজি ঠেকাতে সরকার রফতানির সিদ্ধান্ত নেয়। এ কারণে এবার বৃহত্তর ময়মনসিংহ, রংপুর, নাটোর ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে কমিউনিটি পর্যায়ে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ ও মজুদ করা হয়েছে। মূলত ভারত ও চীনে রফতানি করা হবে কাঁচা চামড়া। রফতানির অনুমতি চেয়ে ইতোমধ্যে ঢাকা, নাটোর ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক তিনটি আবেদন এসেছে। আরও কয়েকটি আবেদন জমার প্রক্রিয়া চলছে। তারা আগামী তিন বছরের জন্য রফতানির সুযোগ চাচ্ছেন। চলতি সপ্তায় আবেদনগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কাঁচা চামড়া রফতানির সুযোগ বন্ধে কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্য সংগঠন থেকে আবেদনের প্রেক্ষিতে কিছুটা দোটানায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কোরবানি ঈদের দুদিন আগে প্রজ্ঞাপন জারি করে কাঁচা চামড়া রফতানি করার বিষয়টি ঘোষণা দেয়া হয়। জানা গেছে, আগামী সপ্তাহ নাগাদ মফস্বলের লবণযুক্ত চামড়া ঢুকবে পোস্তার আড়ত ও সাভারের ট্যানারিগুলোতে। সারাদেশের চামড়া সংগ্রহে প্রস্তুতি রয়েছে ১৩৩টি ট্যানারি। এর পাশাপাশি পোস্তার কয়েক শ’ আড়তদার ব্যবসায়ী এবং জুতা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো কাঁচা চামড়া কেনার ঘোষণা দিয়েছে। এবার ৩০ শতাংশ কোরবানি কম হওয়ার কারণে চামড়া শিল্পে কাঁচামালের সঙ্কট হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারী ঘোষণা অনুযায়ী বেশকিছু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়েও ভারত ও চীনে কাঁচা চামড়া রফতানি করার সুযোগ চাওয়া হয়েছে। তবে এবার ঘোষণা অনুযায়ী কেস টু কেস ভিত্তিতে কাঁচা চামড়া রফতানির সুযোগ দিবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়া আগামী তিনবছরের জন্য রফতানি করার সুযোগ চাচ্ছেন। এদিকে, দেশীয় শিল্প রক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ মার্কেটে এ শিল্পের বিকাশে তিনবছর নয় আগামী এক বছরের জন্য এই সুযোগ দিতে চায় সরকার। ট্যানারি শিল্পের বড় সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানারি এসোসিয়েশন (বিটিএ) থেকে আগামী ছয় মাসের জন্য কাঁচা চামড়া রফতানি করার অনুমতি দেয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করা হয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, রফতানির সুযোগ এবং সুযোগ না দেয়ার পক্ষে-বিপক্ষে সব ধরনের আবেদন এসেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। যেহেতু এবার কাঁচা চামড়া রফতানির সুযোগের বিষয়টি প্রজ্ঞাপন হিসেবে জারি করা হয়, আর এ কারণে আবেদনগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কেস টু কেস ভিত্তিতে রফতানির সুযোগ দেয়া হবে। তবে দেশীয় শিল্প রক্ষার বিষয়টিও সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। তিনি বলেন, এ খাতে ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান এবং ২৫ লাখ মানুষের ভাগ্য ও জীবন জীবিকা জড়িত। তাই ঢালাওভাবে রফতানির সুযোগ দিয়ে এখাতকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দেয়ার কোন উদ্যোগ কখনই নেয়া হবে না। আর এ কারণেই সবার আবেদন যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। জানা গেছে, ভাল দামের আশায় আড়তদার, কিছু ট্যানারি মালিক এবং একেবারে নতুন কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাঁচা চামড়া রফতানি করতে ইচ্ছুক। ভারত ও চীনে কাঁচা চামড়ার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ইতোমধ্যে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এসব দেশে যোগাযোগ করা হয়। কাঁচা চামড়া নেয়ার ব্যাপারে তাদের আগ্রহ রয়েছে। তবে চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কাঁচা চামড়া রফতানির বিষয়টি জটিল। সরাসরি লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া রফতানি হয় না। এক্ষেত্রে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রথম ধাপ ওয়েট ব্লুতে চামড়া প্রস্তুত করতে হয়। এরপরই রফতানির বিষয়টি আসে। আর এক্ষেত্রে ট্যানারিতেই কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে হয়। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ হাইড এ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আফতাব বলেন, কাঁচা চামড়া রফতানির বিষয়টি অনেক কঠিন। এক্ষেত্রে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা একটি বড় বিষয়। অন্যথায় রফতানি সম্ভব নয়। এদিকে, আগামী সপ্তাহ থেকে পোস্তার আড়ত ও সাভারের ট্যানারিগুলোতে ঢুকবে মফস্বলের লবণজাত লাখ লাখ পিস চামড়া। এছাড়া আড়তদাররাও ট্যানারিগুলোতে কাঁচা চামড়া সরবরাহ শুরু করবে। এসব চামড়া সরকার নির্ধারিত মূল্যে বেচাকেনা হবে।
×