ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

স্রোতে শিমুলিয়ার দুটি ঘাট বিলীন ॥ ফেরি চলাচলে অচলাবস্থা, দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ৯ আগস্ট ২০২০

স্রোতে শিমুলিয়ার দুটি ঘাট বিলীন ॥ ফেরি চলাচলে অচলাবস্থা, দুর্ভোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ৮ আগস্ট ॥ পদ্মা নদীর স্রোতের দাপটে শিমুলিয়ার দুটি ফেরিঘাট বিলীন হয়ে গেছে। ফলে ফেরি চলাচলে ফের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ভোগ বেড়েছে ঈদের ছুটি শেষে কাজে ফেরা মানুষের। এদিকে ডুবোচরের কারণে বিকল্প চ্যানেলটি শুক্রবার সন্ধ্যায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল হুমকির মুখে পড়েছে। শনিবার সকাল থেকে লৌহজং মূল চ্যানেল দিয়ে কোনরকমে ফেরি চলাচল করছে। বন্যার পানি কমতে থাকায় এই চ্যানেলমুখেও পলি জমে বিভিন্নস্থানে ডুবোচর জেগে উঠছে। ক্রমাগত পানি কমতে থাকলে মূল চ্যানেলটিও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিআইডব্লিউটিসির কাঁঠালবাড়ি ঘাটের কর্মকর্তারা। জুনের শেষ সপ্তাহে বন্যা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ফেরি চলাচল করছে সীমিত আকারে। প্রায় দেড় মাস ধরে রাতে কোন ফেরি চলাচল করতে পারছে না। দিনে সীমিত আকারে চলাচল করছে ৭/৮টি ফেরি। দুর্ঘটনা এড়াতে মাঝেমধ্যে দিনেও বন্ধ রাখা হচ্ছে। কাঁঠালবাড়ি ঘাটের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার থেকে মৌসুমি বাতাসে পদ্মা উত্তাল হয়ে ওঠে। বাতাসের কারণে স্রোতের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পাওয়ায় কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচলে ফের অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। একদিকে পদ্মা নদী উত্তাল, অন্যদিকে তীব্র স্রোতে শিমুলিয়ার দুটি ফেরিঘাট ভেঙ্গে বিকল হয়ে পড়ায় ফেরি চলাচলে অচলাবস্থা প্রকট আকার ধারণ করেছে। শিমুলিয়ার মূল পদ্মায় স্রোতের তীব্রতার কারণে সীমিত আকারে চলাচলরত ফেরিগুলো পদ্মা পার হতে হিমশিম খাচ্ছে। পদ্মা উত্তাল থাকায় ঈদ শেষে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মস্থলমুখী যাত্রীরা বৈরী আবহাওয়ার কারণে লঞ্চ ও স্পীডবোটের চেয়ে ফেরিতে পদ্মা পার হওয়াটা নিরাপদ মনে করছে। এতে ফেরিতে ঢাকামুখী যাত্রী চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফেরিতে যেমন যাত্রী চাপ বেড়েছে তেমনি মোটরসাইকেলের সংখ্যা অত্যধিক। শুক্রবার একদিনে প্রায় ১৮শ’ মোটরসাইকেল ফেরিতে পার হয়েছে। শনিবার দুপুর পর্যন্ত সহস্রাধিক মোটরসাইকেল ফেরিতে বুকিং দেয়া হয়েছে। এ কারণে যানবাহন পার করতে হিমশিম খাচ্ছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চ ও স্পীডবোটে পদ্মা পাড়ি দিচ্ছে। অন্যান্য দিনের তুলনায় শনিবার আবহাওয়া কিছুটা অনুকূলে থাকায় ফেরির পাশাপাশি লঞ্চে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। লঞ্চঘাটে দেখা গেছে কোন যাত্রীর মুখে মাস্ক নেই। করোনার মহামারীর সময় স্বাস্থ্যবিধি চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। কাঁঠালবাড়ি লঞ্চে ও ফেরিতে উঠতে প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে যাত্রীরা। এতে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে দিনেরবেলা ৫/৭টি ফেরি চলাচল করতে পারলেও দুর্ঘটনা এড়াতে রাতে বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই নৌপথে দিনেরবেলা ৮টি ফেরি চলাচল করে রাতে বন্ধ করে দেয়া হয়। বিকল্প চ্যানেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শনিবার সকাল থেকে সীমিত আকারে ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়। এর আগে স্রোতের কারণে বেশ কয়েক দফা দিনেরবেলায়ও ১০ থেকে ২৬ ঘণ্টা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হয়েছে। লৌহজং টার্নিং পয়েন্টের বিকল্প চ্যানেল দিয়ে মূল পদ্মায় প্রবেশ মুখে এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিশাল ডুবোচর জেগে ওঠায় শুক্রবার সন্ধ্যায় বিকল্প চ্যানেল দিয়ে ফেরি চলাচল করতে পারছে না। বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, দেড় মাস ধরে পদ্মা নদীতে বন্যার পানি বাড়তে থাকে। এতে পদ্মা নদীতে সৃষ্টি হয় তীব্র ঘূর্ণি¯্রােত। ¯্রােতের সঙ্গে ভেসে আসা পলি পড়ে নৌ চ্যানেলের লৌহজং টার্নিং পয়েন্ট গত ২৯ জুন ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ওইদিন প্রায় ৫ কিলোমিটার ভাটিতে গিয়ে একটি বিকল্প চ্যানেল চালু করে বিআইডব্লিউটিএ। নদীতে তীব্র ¯্রােত অব্যাহত থাকায় বিকল্প চ্যানেলেরও বিভিন্ন পয়েন্টে ডুবোচর সৃষ্টি হয়ে চরম অচলাবস্থা দেখা দেয়। একই কারণে ৩০ জুন রো রো ফেরি বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর ২৮টি যানবাহন নিয়ে আটকে পড়ে ডুবোচরে। ২০ ঘণ্টা বন্ধ থাকে ফেরি চলাচল। কর্তৃপক্ষ আইটি দুর্বারসহ কয়েকটি আইটি দিয়ে দীর্ঘ প্রায় ২৬ ঘণ্টা পর ফেরিটি উদ্ধার করা হয়। দুর্ঘটনা এড়াতে সন্ধ্যা ৭টা থেকে ফেরি সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া হয়। পরদিন সকাল থেকে ৩টি রো রো ও ৪টি কে টাইপ ফেরি ধারণ ক্ষমতার কম যানবাহন নিয়ে কোনমতে চলাচল শুরু করে। শিমুলিয়ার দুটি ফেরিঘাট ভেঙ্গে বিকল হয়ে পড়ায় ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিসি কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটের ম্যানেজার আবদুল আলীম বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় বিকল্প চ্যানেলে একটি ফেরি ডুবোচরে আটকে যাওয়ায় চ্যানেলটি এখন বন্ধ। শনিবার সকাল থেকে লৌহজং মূল চ্যানেল দিয়ে কোন রকমে ফেরি চলাচল করছে। বন্যার পানি কমতে থাকায় এই চ্যানেলমুখেও পলি জমে বিভিন্নস্থানে ডুবোচর জেগে উঠেছে। ক্রমাগত পানি কমতে থাকলে মূল চ্যানেলটিও বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আজ ৭টি ফেরি চালু রয়েছে। ফেরিতে যানবাহনের চেয়ে যাত্রী ও মোটরসাইকেল পার করতে আমরা হাঁফিয়ে উঠেছি। শুক্রবার প্রায় ১৮শ’ মোটরসাইকেল বুকিং হয়েছে। শনিবারও দুপুর পর্যন্ত হাজার ছাড়িয়ে গেছে। শনিবার বিকেল পর্যন্ত এই ঘাটে তিন/ সাড়ে তিন শ’ ছোট যানবাহন আটকে আছে। তবে শিমুলিয়া ঘাটে যানবাহনের চাপ কম।
×