ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩০ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অন্যত্র শিশুসহ হত আরও ৫

চুয়াডাঙ্গা ও ময়মনসিংহে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঝরল ১৩ প্রাণ

প্রকাশিত: ২২:৫৪, ৯ আগস্ট ২০২০

চুয়াডাঙ্গা ও ময়মনসিংহে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঝরল ১৩ প্রাণ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ চুয়াডাঙ্গা সদরে উপজেলার সরোজগঞ্জ বাজারে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী বাস রয়েল এক্সপ্রেসের চাপায় ছয়জন নিহত এবং চারজন আহত হয়েছে। শনিবার সকাল ছয়টার দিকে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একে একে চাপা দেয় বরফ বোঝাই আলমসাধু, রিক্সাভ্যান, মোটরসাইকেল ও সড়কে থাকা পথচারীদের। বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। এছাড়া ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় বাসচাপায় অটোরিক্সার চালকসহ সাত আরোহী নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীসহ একই পরিবারের ৩ জন রয়েছেন। এদিকে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দেশের বিভিন্নস্থানে আরও কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে শিশুসহ দুজন, বগুড়ার শেরপুর, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ ও ধামরাইয়ে তিন মোটরসাইকেল আরোহী রয়েছেন। চুয়াডাঙ্গায় দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সদর উপজেলার যুগীরহুদা গ্রামের চাঁদ আলীর ছেলে সরোজগঞ্জ বাজারের চায়ের দোকানদার নিজাম ও বাজারের আতর আলী মার্কেটের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান বলেন, সকালে হঠাৎ করেই রয়েল এক্সপ্রেসের একটি যাত্রীবাহী পরিবহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাজারে দাঁড়িয়ে থাকা বরফ বোঝাই চালকসহ আলমসাধু, রিক্সাভ্যান, মোটরসাইকেল ও সাধারণ মানুষ চাপা দিয়ে দ্রুতগতিতে চুয়াডাঙ্গার দিকে চলে যায়। পরিবহনের চাপায় ঘটনাস্থলে ও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান সদর উপজেলার খাড়াগোদা গ্রামের পল্লী চিকিৎসক মাহতাব উদ্দিনের ছেলে মিলন (৩৫), বসু ভা-ারদহ গ্রামের নিতাই হালদারের ছেলে ষষ্টি হালদার (৪০), তিতুদহ গ্রামের প্রিয়ত আলীর ছেলে রাজু আহম্দে (৩০), রহিম মল্লিকের ছেলে শরিফুল (৪৫), হায়দার আলীর ছেলে কালু ম-ল (৩৫) ও নুতার ছেলে সোহাগ (২৫)। আহত হন সরোজগঞ্জ বাজারের বজলুর ছেলে বাবলু (৪৫), তিতুদহ গ্রামের মরহুম তৈয়ব আলীর ছেলে আলমগীর (২৭), জুড়ন ম-লের ছেলে বেল্টু (৩০) ও মোহাম্মদ জুম্মা গ্রামের খোদা বক্সের ছেলে আকাশ (২৫)। এর মধ্যে গুরুতর আহত বাবলুকে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কনক কান্তি দাস বলেন, রয়েল এক্সপ্রেসের যাত্রীবাহী পরিবহনের চালক যে দুর্ঘটনাটি ঘটিয়েছে, তাতে ছয়জন মারা গেছে। ওদের পরিবারের সদস্যরা যদি মামলা করে তবে হত্যা মামলা দায়ের করা হবে। তারা মামলা না করলে পুলিশ বাদী হয়ে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে হত্যাকা- ঘটানোর দায়ে মামলা করবে। মুক্তাগাছায় অটোরিক্সার চালকসহ নিহত ৭ ॥ ময়মনসিংহ-জামালপুর সড়কে মুক্তাগাছার মানকোন এলাকায় শনিবার বিকেল চারটার দিকে রাজীব পরিবহনের চাপায় নিহত হয়েছে অটোরিক্সার চালকসহ সাত আরোহী। এদের মধ্যে অটোরিক্সার চালকসহ চারজন ঘটনাস্থলে এবং হাসপাতালে নেয়ার পর আরও তিনজন মারা যান। দুর্ঘটনায় অটোরিক্সা দুমড়েমুচড়ে গেছে। পুলিশ এই ঘটনায় বাস চালককে আটক করেছে। মুক্তাগাছা থানার উপ পরিদর্শক আমিনুল ঘটনাস্থল থেকে জানান, চেচুয়া বাজার থেকে মুক্তাগাছাগামী অটোরিক্সাকে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা জামালপুরগামী রাজীব পরিবহন সার্ভিসের বাস চাপা দিলে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলো সিএনজি চালক মুক্তাগাছা চেচুয়া গ্রামের আলাদুল (৩৫), ইচাখালি গ্রামের নজরুল ইসলাম (৩৫), মধুপুর উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামের নুরু (৩৫), তাসলিমা (২৮) ও লিজা(১২)। অপর দুজনের পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ। মানিকগঞ্জে শিশুসহ দুজন ॥ মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে পিকআপভ্যান ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে শিশুসহ দুজন নিহত হয়েছে। শুক্রবার দিবাগত রাত নয়টার দিকে হেমায়েতপুর-মানিকগঞ্জ সড়কের বাস্তা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার বরতলা গ্রামের আব্দুল জলিলের শিশুপুত্র আব্দুল্লাহ (৮) ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার মিতরা ইউনিয়নের আইরমাড়া গ্রামের আছালত খানের ছেলে আশরাফ খান (৫০)। জানা গেছে, আব্দুল জলিল তার স্ত্রী ও শিশুপুত্র আব্দুল্লাহকে (৮) নিয়ে মাগুরার শ্রীপুর থেকে পিকআপযোগে হেমায়েতপুর-মানিকগঞ্জ সড়ক হয়ে সাভারের ব্যাংক টাউনের ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন। আর ব্যবসায়ী আশরাফ খান সাভারের হেমায়েতপুর এলাকায় তার নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মোটরসাইকেলে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার মিতরা ইউনিয়নের আইরমারা গ্রামের বাড়িতে ফিরছিলেন। বাস্তা বাস্ট্যান্ড এলাকায় পিকআপভ্যান ও মোটর সাইকেল মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এসময় পিকআপভ্যানটি সড়ক থেকে ছিটকে পাশের খাদে পড়ে শিশু আব্দুল্লাহ নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত মোটরসাইকেল আরোহী আশরাফ খানকে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শেরপুরে মোটরসাইকেল আরোহী ॥ শুক্রবার রাতে বগুড়া-শেরপুর মহাসড়কে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে দিলীপ চন্দ্র রায় (৩৫) নামে মোটরসাইকেল আরোহী এক এনজিও কর্মী নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার পর পরই বাসটি দ্রুত পালিয়ে যায়। পুলিশ জানায়, দিলীপ চন্দ্র সিরাজগঞ্জে একটি বেসরকারী সংস্থায় (এনজিও) কাজ করতেন। তার বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুরে। ছুটি কাটিয়ে তিনি মোটরসাইকেলে কর্মস্থলে ফিরছিলেন। রাত পৌনে ১০টার দিকে শেরপুর মহিলা কলেজের সামনে ঢাকাগামী একটি বাস তাকে চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পীরগঞ্জে মোটরসাইকেল আরোহী ॥ ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার ১০নং জাবরহাট ইউনিয়নের রনশিয়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। শুক্রবার রাতে বৃদ্ধিগাঁও গ্রামের শাহাদাৎ হোসেনের ছেলে আজাহারুল ইসলাম (২৮) মোটরসাইকেলে পীরগঞ্জ আসার পথে ওই এলাকায় কাঠবোঝাই ট্রাক্টরের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়ে পাকা সড়কের ওপর পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। চিকিৎসার জন্য পীরগঞ্জ সরকারী হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ধামরাইয়ে মোটরসাইকেল আরোহী ॥ ধামরাইয়ে অজ্ঞাত পরিবহনের ধাক্কায় আলাউদ্দিন (৩২) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। শনিবার সকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের কসমস এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আলাউদ্দিন রাজবাড়ির কালুখালী থানার আমিন শেখের ছেলে। তিনি একটি এনজিওতে কাজ করতেন।
×