ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংখ্যালঘুদের ওপর ৭৫টি হামলার অভিযোগ

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ৯ আগস্ট ২০২০

সংখ্যালঘুদের ওপর ৭৫টি হামলার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকারের কড়া নজরদারি থাকা সত্ত্বেও করোনা মহামারীর মধ্যেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ৭০/৭৫টি হামলা, মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর, বাড়িঘর লুটপাট, জোরপূর্বক অপহরণ ও ধর্মান্তরকরণ, ধর্ষণ, দেশত্যাগের হুমকির ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ। শনিবার ঢাকেশ^রী মন্দিরে আগামী ১১ আগস্ট ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ আবির্ভাবে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে পরিষদের নেতারা এসব তথ্য তুলে ধরেন। নেতারা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া গুজব ছড়িয়ে একাধিকবার দেশের বিভিন্নস্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে। কখনও কখনও দলবদ্ধভাবে হামলার শিকার হয়েছে। তাদের সহায়সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এসব ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারীকালে এবারের দুর্গোৎসবও অনাড়ম্বরভাবে অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, জন্মাষ্টমীও এবার অনাড়ম্বরভাবে উদ্যাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এবার দুর্গা পূজার অনুষ্ঠানমালা শুধু ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে পূজা-অর্চনার মাধ্যমে মন্দির প্রাঙ্গণেই সীমাবদ্ধ থাকবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত বলেন, আগামী ১১ আগস্ট হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম উৎসব জন্মাষ্টমীও সীমিত পরিসরে উদ্যাপিত হবে। জন্মাষ্টমীতে কোন প্রকার সমাবেশ, শোভাযাত্রা ও মিছিল করা হবে না। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মন্দির প্রাঙ্গণে পূজা অনুষ্ঠান ও সব আচারবিধি পালন করা যাবে। দুর্গাপূজার বিষয়ে মিলন দত্ত বলেন, দুর্গাপূজায় আলোকসজ্জা, মেলা, আরতি প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হবে না। তিনি বলেন, খোলা জায়গায় অস্থায়ী প্যান্ডেলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা করার বিষয়েও সংশ্লিষ্ট আয়োজকদের অনুমতি নিতে হবে। কোভিড-১৯ রোগ ছোঁয়াচে হওয়ায় সংক্রমণ এড়াতে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা, ভিড় এড়ানো এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এই কারণে এবার বাংলা নববর্ষ এবং ঈদেও উৎসবের আমেজ ছিল না। এ বছর রাজধানীর পূজা নিয়ে ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন ম-ল বলেন, এ বছর পূজার সংখ্যা কমে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে সবার আর্থিক অবস্থাও ভাল না। তাছাড়া পুরান ঢাকার দিকে বেশ কটি পূজা রাস্তার ওপর হতো। সেগুলোর অনুমতি পাওয়ার প্রশ্ন রয়েছে। যদি অনুমতি পাওয়া যায়, তবে পূজা হবে। তবে মনে হচ্ছে, সারা দেশেই পূজার সংখ্যা বেশ কমবে। গত বছর বাংলাদেশে ৩১ হাজার ১০০টি ম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যার মধ্যে ঢাকা মহানগরে ২৩৭টি ম-পে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিশোর বলেন, এবার মহালয়া হবে ১৭ সেপ্টেম্বর। এবার আশ্বিন মাস মল মাস, মানে অশুভ মাস। এ মাসে পূজা হচ্ছে না তাই। পূজা হবে কার্তিক মাসে। মহালয়ার ৩৫ দিন পরে দেবি দুর্গা আসবেন মর্ত্য।ে হিন্দু পঞ্জিকামতে এবার দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে ২৩ অক্টোবর। শাস্ত্রমতে, বৃহস্পতিবার বা শুক্রবারে সপ্তমী হলে দেবির আগমন ঘটে দোলায়। দোলায় আগমন নিয়ে শাস্ত্রে বলা হয়েছে, মহামারী, ভূমিকম্প, যুদ্ধ, খড়ার প্রভাবে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু তো ঘটাবেই, আবার সেই সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতিও হবে। বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জী বলেন, যেকোন ঘটনায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণে সচেষ্ট থেকেছে। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতায় শাস্তির বিষয়টি তড়িৎ দৃশ্যমান না হওয়ায় মানুষ হতাশ হয়, আস্থার সঙ্কট তৈরি করে। আমরা বিশ^াস করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এ বিষয়ে সতর্ক আছেন এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার মাধ্যমে দেশের অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন ব্যাহত করার অপচেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সাম্প্রদায়িক শক্তির এই ধরনের কর্মকা-ের পেছনে দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার কোন গভীর ষড়যন্ত্র কাজ করছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা দরকার।
×