ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মহামারীর মধ্যে শর্তসাপেক্ষে স্কুল খুলেছে যুক্তরাষ্ট্রে

প্রকাশিত: ২২:৪২, ৯ আগস্ট ২০২০

মহামারীর মধ্যে শর্তসাপেক্ষে স্কুল খুলেছে যুক্তরাষ্ট্রে

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ করোনা মহামারীর মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্র স্কুল খুলে দিয়েছে। ভারতে একদিনে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যায় রেকর্ড হয়েছে। আর রাশিয়া জানিয়েছে, তারা করোনার প্রথম ভ্যাকসিন আনছে ১২ আগস্ট। এছাড়া করোনা মোকাবেলায় আদর্শ দেশ হিসেবে সারাবিশ্বের কাছে সুনাম অর্জন করেছে নিউজিল্যান্ড, ডেনমার্ক ও উগান্ডা। অন্যদিকে লাতিন আমেরিকার দেশ মেক্সিকোয় মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়েছে। খবর বিবিসি, সিএনএন, ব্লুমবাগ, সিএনবিসি, রয়টার্স, আলজাজিরা, এএফপি, এনডিটিভি ও ওয়ার্ল্ডোমিটার ডট ইনফোর। ওয়ার্ল্ডোমিটারের মতে, শনিবার পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে এক কোটি ৯৭ লাখ ৩ হাজার ১০২ জন। মৃতের সংখ্যা বেড়ে সাত লাখ ২৭ হাজার ২৫ জনে দাঁড়িয়েছে। সুস্থ হয়ে উঠেছেন এক কোটি ২৬ লাখ ৪৩ হাজার ৫২৩ জন। চিকিৎসাধীন আছেন ৬২ লাখ ৭৯ হাজার ৩৮৭ জন। যাদের মধ্যে ৬৫ হাজার ১২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। স্কুল খুলে দিল যুক্তরাষ্ট্র ॥ যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৫০ লাখ ৯৫ হাজার ৯০৩ জন এবং মারা গেছেন এক লাখ ৬৪ হাজার ১২২ জন। সারাবিশ্বে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এক নম্বরে রয়েছে। করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু অব্যাহত থাকার পরেও সে দেশের স্কুলগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, শনিবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেশকিছু অঙ্গরাজ্যের স্কুল খুলেছে। যদিও সেক্ষেত্রে কেউ আক্রান্ত হলে তাকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। স্কুল খুলে দেয়ার ব্যাপারে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে নিউইয়র্ক। মিসিসিপিতে মোট ৬৫ হাজার ৪৩৬ জন করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে এবং মারা গেছেন এক হাজার ৮৪৮ জন। ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ৩৬ জন এবং মারা গেছেন ২৩ জন। নমুনা পরীক্ষা করে গড়ে ২২ শতাংশ পজিটিভ রোগী পাওয়া গেছে। তারপরেও মিসিসিপির স্কুলগুলো খুলে দেয়া হলো। এরইমধ্যে সেখানকার স্কুলে আটজন করোনা রোগী পাওয়া গেছে। তাদেরসহ তাদের সংস্পর্শে আসা এক শ’ জনকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ এ্যান্টনি ফাউসি বলেছেন, অনুমোদন পাওয়ার পর করোনার টিকা প্রয়োগ করা হলে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কাজে দিতে পারে। তার মানে মহামারী নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে জনস্বাস্থ্যের ওপর ভরসার বিকল্প থাকছে না। ভারতে আরও ৯৩৩ মৃত্যু ॥ ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ৯৩৩ জন মারা গেছেন। মোট মারা গেছেন ৪২ হাজার ৬২১ জন। একদিনে নতুন করে আরও ৬১ হাজার ৫৩৭ জনের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ২০ লাখ ৯১ হাজার ৫৪৯। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৪ লাখ ২৯ হাজার ১৭৮ জন। সুস্থতার হার ৬৮ দশমিক ৩২ শতাংশ। দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দৈনিক ৪৫ হাজারেরও বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় মহারাষ্ট্রে ১০ হাজার ৪৮৩, অন্ধ্রপ্রদেশে ১০ হাজার ১৭১, কর্নাটকে ৬ হাজার ৬৭০, তামিলনাড়ুতে ৫ হাজার ৮৮০ ও উত্তরপ্রদেশে ৪ হাজার ৪০৪ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মহারাষ্ট্রে মোট মারা গেছেন ১৭ হাজার ৯২ জন। এরপর সর্বাধিক মৃত্যু হয়েছে যথাক্রমে তামিলনাড়ুতে ৪ হাজার ৬৯০ জন এবং দিল্লীতে ৪ হাজার ৮২ জন। একদিনে পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৯১২ জন এবং মৃত্যু হয়েছে আরও ৫৬ জনের। সব মিলিয়ে রাজ্যে মোট আক্রান্ত ৮৯ হাজার ৬৬৬ জন। এখনও চিকিৎসাধীন আছেন ২৪ হাজার ৬৫২ জন। আগেরদিন শুক্রবার ভারতে ৬২ হাজার ৫৩৮ জন নতুন করে করোনা আক্রান্ত হন। যা এখনও পর্যন্ত দেশটিতে দৈনিক সংক্রমণের এক রেকর্ড। তার আগেরদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার ৫৬ হাজার ২৮২ জন করোনা রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। বুধবার ৫২ হাজার ৫০৯ নতুন সংক্রমণ হয় এবং মঙ্গলবার নতুন করে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ৫২ হাজার ৫০। করোনার ভ্যাকসিন আসছে ॥ রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ মাসের ১২ তারিখে তারা করোনা প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের নিবন্ধন সম্পন্ন করবে। দেশটির উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী ওলেগ গ্রিডনেভ সাংবাদিকদের এ তথ্য দিয়েছেন। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে ভ্যাকসিন তৈরি করেছে গামালেয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট। রাশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে স্পুটনিক নিউজ জানিয়েছে, ভ্যাকসিনটি এখন ক্লিনিক্যাল ট্র্রায়ালের তৃতীয় পর্যায়ে আছে। উফা শহরে এক ক্যান্সার সেন্টার উদ্বোধন করতে গিয়ে গ্রিডনেভ সাংবাদিকেদের বলেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল খুবই গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আমাদের নিশ্চিত হতে হবে যে, ভ্যাকসিনটি মানুষের দেহে নিরাপদ। স্বাস্থ্যকর্মী ও বেশি বয়সের মানুষদের আগে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। ১২ জুলাই রাশিয়ার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, গামালেই ইনস্টিটিউট অব এপিডেমোলজি এ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজির উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সফলভাবে শেষ করেছে তারা। ২২ জুলাই রুশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাদের ভ্যাকসিন প্রস্তুত। এ মাসের শুরুতে রাষ্ট্রীয় রুশ বার্তা সংস্থা আরআইএ স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে জানায়, অক্টোবর মাস থেকে জনগণকে করোনার ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হবে। তবে সবশেষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপে থাকা যে ছয়টি করোনা ভ্যাকসিনের কথা বলা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রুশ ভ্যাকসিন নেই। সংস্থাটির পক্ষ থেকে রাশিয়াকে করোনার ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে আন্তর্জাতিক নির্দেশনা অনুসরণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। করোনা মোকাবেলায় আদর্শ ॥ করোনা মহামারী মোকাবেলায় আদর্শ সরকারী প্রক্রিয়ার কথা যদি বলা হয়, তাহলে সবার ওপরে আসছে তিনটি দেশ। করোনা মোকাবেলায় আদর্শ প্রক্রিয়ার অনন্য উদাহারণ তৈরি করেছে নিউজিল্যান্ডের কোভিড-১৯ পরীক্ষা নীতি, ডেনমার্কের স্কুল নীতি ও উগান্ডার যোগাযোগ কৌশল। এই তিন দেশের করোনা মোকাবেলার সফল প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন একটি গবেষণা হয়েছে। বিশ্বে নতুন এই ভাইরাস দমনে তিন দেশের কৌশলকে আদর্শ বলছেন বিশেষজ্ঞরা; যা অন্যান্য দেশকে মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তা করতে পারে। বিভিন্ন দেশ বৈশ্বিক করোনা মহামারী কিভাবে মোকাবেলা করেছে সে বিষয়ে এই গবেষণা করেছেন ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের সাবেক উপদেষ্টা মাইকেল বার্বার ও মালোয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের সাবেক উপদেষ্টা ইদ্রিস জালা। সবচেয়ে সফলদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে করোনা মোকাবেলায় অন্যরা যাতে প্রচেষ্টা চালাতে পারে সে লক্ষ্যে এই গবেষণা করেছেন তারা। উদাহরণগুলোর মধ্যে তারা বেছে নিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের ব্যাপক পরিসরের পরীক্ষা পদ্ধতিকে। দেশটি একজন করোনা রোগী নিশ্চিত হওয়ার জন্য ৭ হাজারের বেশি মানুষকে পরীক্ষা করেছে। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার কন্টাক্ট ট্রেসিংকেও অনন্য বলছেন গবেষকরা। এই দেশটি মানুষের গতিবিধির ওপর নজরদারি করেছে সিকিউরিটি ক্যামেরা এবং ক্রেডিট কার্ডের অর্থ লেনদেনের তথ্যের মাধ্যমে। অত্যন্ত দুর্বল ইন্টারনেট ব্যবস্থার দেশ উগান্ডা করোনা বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে রেডিওতে কল-ইন শোর মতো উদ্যোগ নিয়েছিল; যা ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। করোনা মহামারীতে সফলভাবে স্কুল পুনরায় খুলেছে ডেনমার্ক। মেক্সিকোয় আরও ৭৯৪ ॥ মেক্সিকোতে মহামারী করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে বৃহস্পতিবার ৫০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এদিক থেকে দেশটি বিশ্বে তৃতীয় সর্বোচ্চ স্থানে উঠে আসার মাত্র তিন দিন পর এ সংখ্যা ছাড়াল। দেশটির সরকার এ কথা জানিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের প্রতিদিন হালনাগাদ করা তথ্যে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৭৯৪ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে। লাতিন আমেরিকার এ দেশে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এ নিয়ে কোভিড-১৯-এ মৃতের সংখ্যা বেড়ে মোট ৫১ হাজার ৩১১ জনে দাঁড়াল। আক্রান্ত হয়েছেন চার লাখ ৬৯ হাজার ৪০৭ জন। নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ছয় হাজার ৭১৭ জন। সুস্থ হয়েছেন তিন লাখ ১৩ হাজার ৩৮৬ জন। চিকিৎসাধীন আছেন এক লাখ চার হাজার ৭১০ জন। তিন হাজার ৮৬৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আগেরদিন মেক্সিকোয় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ছয় হাজার ৫৯০ জন। মারা গেছেন ৮১৯ জন।
×