চট্টগ্রাম অফিস, স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়ে আছে টেকনাফে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকা-ের ঘটনা। আর টেকনাফের বাহারছড়ার শামলাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই লিয়াকত আলী এককভাবে সিনহাকে গুলিবর্ষণের নায়ক হলেও এ ঘটনায়ও টেকনাফের সকল অপকর্মের খলনায়ক হিসেবে বেরিয়ে এসেছে ওসি প্রদীর কুমার দাশ। আত্মসমর্পণের পর ওসি প্রদীপ ও এসআই লিয়াকতসহ সাত পুলিশ এখন জেলে। এ ঘটনা নিয়ে একদিকে উচ্চ পর্যায়ের কমিটির তদন্ত ও আদালতের নির্দেশে র্যাবের তদন্ত শুরু হয়েছে। শনিবার জেল গেটে চার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আজ ওসি প্রদীপ ও এসআই লিয়াকতসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ হত্যাকা- নিয়ে দোষীদের কেউ ছাড় পাবে না বলে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ফলে উৎসুক মহল প্রতিদিন এ ঘটনার সার্বিক বিষয়ে খবর জানতে অপেক্ষায় থাকছেন।
দেশের সীমান্তবর্তী টেকনাফ থানায় যোগদানের পর থেকে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রতিনিয়ত বেপরোয়া মনোভাবে তার সকল অপকর্ম পরিচালনা করেছেন। পুলিশের পাশাপাশি তার আলাদা একটি প্রাইভেট বাহিনীও ছিল। যাদেরকে প্রয়োজনে সম্পূর্ণ অন্যায় ও অনৈতিক পন্থায় পুলিশের পোশাক ও অস্ত্র দিয়ে তার সঙ্গে বিশেষ বিশেষ অভিযানে নেয়া হত। সম্পন্ন করা হত টার্গেট ও মিশন। টেকনাফের দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভকে পরিণত করা হয় কিলিং জোন-এ। কোন মহলের অজানা ছিল না এসব অপকর্ম। সবই তো ছিল ওপেন-সিক্রেট।
গত ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহাকে এসআই লিয়াকত আলী গুলি করে হত্যার ঘটনায় এ ওসি প্রদীপসহ সাতজন আত্মসমর্পণ করে এখন কারাগারে। আজ রবিবার থেকে এসব আসামিদের পর্যায়ক্রমে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হবে বলে র্যাব সূত্রে জানানো হয়েছে। এছাড়া মোঃ আবু ফয়সাল নামের এক ইন্সপেক্টর আজ টেকনাফ থানায় ওসি পদে যোগদান করছেন।
‘চল যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ এই স্লোগানের বিপরীতে প্রদীপ টেকনাফ থানা এলাকাজুড়ে অবৈধ প্রভাবের যে বলয় গড়ে তুলেছিল তা অন্ধকার জগতকেও হার মানায়। কিলিংয়ের পর কিলিং, গ্রেফতার বাণিজ্য, জমি দখল থেকে শুরু করে হেন কোন অপকর্ম নেই তিনি এবং তার নেতৃত্বাধীন পুলিশ ও প্রাইভেট বাহিনীর সদস্যরা করেনি। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, প্রদীপ একদিকে যেমন ছিল ভয়ঙ্কর প্রকৃতির, তেমনি ছিল বেপরোয়া মনোভাবেরও। ইয়াবাসহ মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনার বিপরীতে তিনি টেকনাফ থানা ভবনের তিনতলায় একটি টর্চার সেল করেছিলেন। এছাড়া টেকনাফের পাহাড়ী এলাকায় ছিল একাধিক টর্চার সেল গড়ে তোলেন বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। থানার তিনতলার পাশাপাশি পাহাড়ী এলাকার টর্চার সেলগুলোতে টার্গেটেড লোকজনদের ধরে এনে আটকে রাখা হতো। দিনের পর দিন নির্যাতন চালিয়ে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করা হতো বিভিন্ন কায়দায়।
শুধু তাই নয়, অর্থ পরিশোধ করার পরও অধিকাংশকে ক্রসফায়ারে প্রাণ হারানোর কাহিনী বানাতেও তিনি পিছ পা হননি। যে কারণে ওসি প্রদীপ গ্রেফতার হওয়ার পর একটি কথাই সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে, সেটি হচ্ছে পাপের ষোলকলা পূর্ণ হওয়ার পর প্রদীপ ধরা খেলেন। কথায় আছে সব পাপেরও শেষ আছে। টেকনাফসহ পুলিশ বাহিনীতে যারা তাকে চেনেন তাদের অনেকের মাঝে একটি কথাই বেশি উঠে আসছে, প্রদীপের এসব কর্মকা- কার অজানা ছিল। কক্সবাজার একটি জেলা শহর। এ জেলা শহরের অধীনে টেকনাফ একটি ছোট্ট উপজেলা। সমুদ্র উপকূলবর্তী এবং সীমান্তবর্তী উপজেলা হওয়ায় এ থানা পুলিশের কার্যক্রম কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে। যেমন সীমান্ত পাহারা দেয় সীমান্তরক্ষী। সমুদ্র পাহারা দেয় নৌবাহিনী আর সমুদ্রসীমার অভ্যন্তরভাগ পাহারা দেয় কোস্টগার্ড। এর ফলে টেকনাফ পুলিশের কার্যক্রম শুধু সমতলেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু এ প্রদীপ টেকনাফ থানায় যোগদানের পর থেকে যেসব অপকর্ম সম্পন্ন করেছেন তা এখন প্রচার মাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশ হচ্ছে। কিন্তু এসব ঘটনা নতুন কোন কাহিনী বা গল্প নয়। এসব ঘটনা ও কাহিনী জেলা, পুলিশ প্রশাসন, রাজনৈতিক মহল, বিভিন্ন গোয়েন্দা ও এনজিও সংস্থার কার অজানা ছিল না। যদিও তার বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় কারও ছিল না। জেলা পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে রেঞ্জ ডিআইজি দফতর পর্যন্ত সরাসরি অলিখিত নিয়ন্ত্রণ ছিল ওসি প্রদীপের। যে কারণে তার টিকিটি ছোঁয়ার সাহস দেখাতে পারত না কেউ। এর পাশাপাশি ওপরওয়ালাদের খুশি রাখার পথটি সদা মসৃণ রাখতেন এই ভয়ঙ্করখ্যাত ওসি।
সবচেয়ে অভাবনীয় ঘটনা হচ্ছে ওসি প্রদীপের সব ধরনের কুকর্মের সহযোগিতায় টেকনাফ থানার একটি পুলিশ দল যেমন ছিল তেমনি ছিল একটি প্রাইভেট বাহিনীও। এ বাহিনীর সদস্যদের বিশেষ বিশেষ অভিযানে নেয়া হতো পুলিশের পোশাক পরিয়ে অস্ত্র দিয়ে। ফলে অপারেশনের মাঠে দৃশ্যমান হতো ওরাও পুলিশ বাহিনীর সদস্য। টেকনাফ থানা পুলিশ এসব ঘটনা জানলেও প্রদীপের ভয়ে সকলে মুখে কুলুপ এঁটেছিল। অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা হত্যাকা- সংঘটিত হওয়ার পর শামলাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ১৬ সদস্য প্রত্যাহার হলেও টেকনাফ থানায় পুলিশের মধ্যে যারা প্রদীপের একান্ত বাহিনীর সদস্য হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল তারা এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে। এরা প্রদীপের অনৈতিক কর্মকা- এবং মানুষকে ধরে এনে মেরে ফেলার ঘটনার জ¦লন্ত সাক্ষী। তবে প্রদীপের কমান্ডে থাকা পুলিশ ও প্রাইভেট বাহিনীর সকল কর্মকা- ছিল ওপেন সিক্রেট এবং অনেকেই মোটা অঙ্কের অর্থের বেনিফেসিয়ারিও বটে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত থাকা অবস্থায় প্রদীপ স্ত্রীর নামে কোতোয়ালি থানা এলাকায় যে বহুতল বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করেছেন এবং বিপুল অঙ্কের মূল্যের যে জমি মুরাদপুরে দখলে নিয়েছেন তা নগর পুলিশের অজানা নয়। বিভিন্ন ঘটনায় তিনি বারে বারে সাসপেন্ড হয়েছেন। আবার বহালও হয়েছেন। মন্ত্রণালয় পর্যন্ত তার যোগাযোগ ছিল নিরবিচ্ছিন্ন। ঘুরে ফিরে তিনি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় চাকরি জীবন চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ঘনিষ্ঠজনদের প্রদীপ বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছেন, টেকনাফ থানায় হবে তার শেষ চাকরিস্থল। এরপর তিনি চাকরি থেকে বিদায় নিয়ে দেশের বাইরে চলে যাবেন। অভিযোগ রয়েছে, ভারতের গৌহাটিতে তার মালিকানায় বাড়ি রয়েছে। তেমনি তার পুরো পরিবারের রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের গ্রিনকার্ডও। এসব তথ্যের সপক্ষে সুনির্দিষ্ট কোন প্রমাণ না থাকলেও তা মানুষের মুখে মুখে রয়েছে।
২০১৮ সালের ১৯ অক্টোবর টেকনাফ থানায় ওসি পদে যোগ দেয়ার পর প্রদীপের নির্দেশনায় এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটেছে ১৪৪টি। এতে প্রাণ হারিয়েছেন ২০৪ জন। এই ২০৪ জনের মধ্যে আসলে কে দোষী, কে নির্দোষ তা প্রদীপই বলতে পারবেন। এছাড়া বলতে পারবেন এলাকার লোকজন। ইতোমধ্যে প্রদীপের বিরুদ্ধে এলাকায় স্বজন হারানো লোকজন সোচ্চার হতে শুরু করেছেন। ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে, নিরীহ লোকজনদের ধরে নিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করতেন। অর্থ আদায়ের পরও কাউকে ক্রসফায়ারে দিতেন। আবার কাউকে আদালতে চালান দিতেন।
শনিবার প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলন করেছেন ক্রসফায়ারে নিহত উখিয়ার কুতুপালং এলাকার মেম্বার বখতিয়ারের স্ত্রী শাহিন আক্তার ও পুত্রবধূ রোমানা শরমিন। তারা অভিযোগ করেছেন, এই ওসি প্রদীপ পার্শ^বর্তী উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে বখতিয়ার মেম্বারকে তুলে নিয়ে প্রায় কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণের পরও ক্রসফায়ার দিয়েছেন। বখতিয়ার মেম্বারের স্ত্রী সুনির্দিষ্টভাবে বলেছেন, ঘটনার সময় তাদের বাসার আলমিরায় রক্ষিত তার স্বামীর ব্যবসার ৫১ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়েছেন তারা। যার মধ্যে উখিয়ার ওসি মর্জিনা আক্তার পেয়েছেন ১৮ লাখ টাকা। এরপরও কেন বখতিয়ার মেম্বারকে হত্যা করা হলো তার বিচার চেয়েছেন স্ত্রী শাহিন আক্তার।
এদিকে, ওসি প্রদীপের পুলিশের ও প্রাইভেট বাহিনীর সদস্যরা এখনও আনটাচড রয়েছেন। টেকনাফ থানার সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা রয়েছেন বহাল তবিয়তে। আর প্রাইভেট বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছেন প্রকাশ্যে। প্রাইভেট বাহিনীর চার সদস্য সর্বদা প্রদীপের ছায়াসঙ্গী হিসেবে থাকত। এরা এ মুহূর্তে গা ঢাকা দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রদীপ যে সময় যে থানায় যোগ দিতেন তখন তাদের সে থানায় নিয়ে যেতেন। তাদের খাওয়া থাকার ব্যবস্থা করে দিতেন। আর বিশেষ বিশেষ অভিযানে সঙ্গী করে নিতেন। পুলিশের যেসব সদস্য তার সকল অপকর্মের সহযোগী হতেন তার মধ্যে শামলাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই লিয়াকত আলী ছিলেন শীর্ষস্থানীয়। যিনি প্রদীপের সঙ্গে কথা বলে ওইদিন মেজর সিনহাকে গুলি করেন। যে গুলিতে সিনহা প্রাণ হারান।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু ॥ কক্সবাজার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলায় ওসি প্রদীপ ও এসআই লিয়াকতসহ আত্মসমর্পণ করে জেলে যাওয়া সাত আসামিকে ৭ দিনের রিমান্ড দিয়েছে। তদন্ত সংস্থা র্যাব সূত্রে জানানো হয়েছে, শনিবার জেল গেটে চার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আজ রবিবার ওসি প্রদীপ ও এসআই লিয়াকতসহ অবশিষ্ট তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ১০ দিনের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করার নির্দেশ রয়েছে আদালতের।
মূল ঘটনাই জানে না তিন সাক্ষী ॥ মেজর সিনহা হত্যাকা-ের পর টেকনাফ থানায় পুলিশের পক্ষে যে হত্যা মামলা হয়েছে তাতে তিনজনকে সাক্ষী করা হয়েছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ তিন সাক্ষী প্রত্যক্ষদর্শী হওয়া তো দূরের কথা প্রকৃত ঘটনাই জানে না। অভিযোগ রয়েছে, ওসি প্রদীপের নির্দেশে তাদের থানায় ধরে এনে সাদা কাগজে সাক্ষী করা হয়েছে। সাক্ষী যাদের করা হয়েছে তারা হলেন বাহারছড়া মারিশবুনিয়ার নাজির উদ্দিন প্রকাশ রাজুর পুত্র নুরুল আমিন, আবদুল গফুরের পুত্র হামিদ হোসেন ও জালাল আহমদের পুত্র আইয়াছ উদ্দিন।
তদন্ত কমিটির কার্যক্রম ॥ মেজর সিনহা হত্যাকা-ের পর পরিস্থিতি বিস্ফোরণোন্মুখ হয়ে উঠলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়। গত ৪ আগস্ট থেকে কমিটিকে সময় দেয়া হয়েছে সাত দিন। ইতোমধ্যে কমিটি তাদের তদন্ত কার্যক্রম বহুলাংশে এগিয়ে নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। টেকনাফ থানায় গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও অন্য পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন। টেকনাফের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের বক্তব্য নিয়েছেন। শামলাপুর পুলিশ ফাঁড়িতে ওই সময়ের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। শুধু বাকি রয়েছে ওসি প্রদীপ, এসআই লিয়াকতসহ আত্মসমর্পণ করে কারাগারে যাওয়া সাত আসামির বক্তব্য গ্রহণ করা। সহসা আদালতের অনুমতি নিয়ে তাদের বক্তব্যও গ্রহণ করা হবে বলে জানা গেছে। কমিটি প্রধান আগেই বলেছেন, তারা নির্দিষ্ট সময়ে তাদের রিপোর্ট প্রদান করবেন। কিন্তু বর্তমানে তদন্ত চলাকালীন তাদের পক্ষ থেকে সময় বৃদ্ধি করা বা না করা নিয়ে কোন বক্তব্য দেয়া হয়নি। তবে তাদের দেয়া রিপোর্টের ওপর এই হত্যাকা- সংক্রান্তে বহু কিছু নির্ভর করছে।
দুই আসামির নাম ঠিকানা অনুসন্ধান ॥ মেজর সিনহা হত্যাকা-ের পর তার বোন কক্সবাজার আদালতের মাধ্যমে যে মামলা করেছেন তাতে আসামির সংখ্যা ৯। এতে শেষোক্ত দুজনের নাম রয়েছে এসআই টুটুল ও কনস্টেবল মোস্তফা। ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র। ইতোমধ্যে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার জানান, এ দুজন পুলিশের কোন সদস্য নন। ফলে তদন্ত সংস্থা র্যাব এ দুই আসামির নাম ঠিকানা ও বাস্তবিক অবস্থান অনুসন্ধান শুরু করেছে।
টেকনাফে নতুন ওসি নিয়োগ ॥ প্রদীপ কুমার দাশ প্রত্যাহৃত হয়ে মেজর সিনহা হত্যাকা-ে আসামি হয়ে আত্মসমর্পণের পর গ্রেফতার হওয়ায় টেকনাফ থানায় নতুন ওসি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর আগে থানার ওসি (তদন্ত)কে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। শুক্রবার চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক টেকনাফের জন্য নতুন ওসি নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি ইন্সপেক্টর আবুল ফয়সল। বদলির আগে কুমিল্লার চান্দিনা থানার ওসি ছিলেন। আজ টেকনাফ থানায় তার যোগদানের কথা রয়েছে।
পুলিশী মামলার তদন্ত আপাতত বন্ধ ॥ মেজর সিনহা হত্যাকা-ের পর পুলিশ বাদী হয়ে যে মামলাটি হয়েছে সেটির তদন্ত আপাতত বন্ধ রয়েছে বলে থানা সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানিয়েছে, ডিআইজি দফতরের নির্দেশে এ মামলার তদন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। যেহেতু এ ঘটনায় সরকার উচ্চ পর্যায়ে কমিটি গঠন করেছে সে কমিটির তদন্ত রিপোর্টের পর সিদ্ধান্ত হবে মামলাটি আদৌ চলবে কিনা। সূত্র জানায়, যেহেতু আদালতের নির্দেশে র্যাবের পক্ষে এ হত্যার তদন্ত চলমান, সেক্ষেত্রে একটি সংবেদনশীল মামলা হিসেবে বর্তমানে আদালতের নির্দেশে র্যাব তদন্ত শুরু করেছে। এ অবস্থায় থানায় পুলিশের রুজুকৃত মামলার তদন্ত কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।
সিনহা হত্যার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু ॥ টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীর গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যা মামলার আসামিদের শনিবার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে তদন্ত সংস্থা র্যাব।
কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর উপ অধিনায়ক মেজর মেহেদী হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, সাত আসামির মধ্যে চারজনকে শনিবার দুপুর ২টার পর থেকে কক্সবাজার জেলা জেল গেটে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব। অপর তিন আসামি টেকনাফ বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির বরখাস্ত হওয়া ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী, বরখাস্ত টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতকে আজ রবিবার র্যাব হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনার ক্লু উদ্ঘাটনের জন্য সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ প্রক্রিয়া চলবে।
এদিকে, কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপার মোকাম্মেল হোসেন জানিয়েছেন, আদালত থেকে মেজর সিনহা হত্যা মামলার রিমান্ডের আদেশপ্রাপ্ত ৭ আসামির বিষয়ে প্রয়োজনীয় নথিপত্র জেলা কারাগারে পৌঁছানোর পরই কারা ফটকে র্যাব সদস্যরা চার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।