ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় কমতে শুরু করেছে পানি

প্রকাশিত: ২২:৩১, ৯ আগস্ট ২০২০

রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় কমতে শুরু করেছে পানি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দীর্ঘ সময় বন্যাকবলিত থাকার পর অবশেষে রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে কমতে শুরু করেছে পানি। গত ২০ জুলাইয়ের পর থেকে ঢাকার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে থাকে। চার নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হওয়ার কারণে ঢাকার আশপাশের নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। পানি প্রবেশ করে সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে। ফলে এসব এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকে। রাস্তা ঘাট, স্কুল কলেজ ও অবকাঠামো সব পানিতে তলিয়ে যায়। পানি প্রবেশ করে মানুষের বসতঘরে। ফলে উঁচু মাচা তৈরি করে এবং নৌকায় তারা জীবনযাপন শুরু করে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, রাজধানীর আশপাশের নদীগুলোর পানি কমতে শুরু করেছে। এটা অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে ঢাকার সিটি কর্পোরেশনের নিম্নাঞ্চলেও বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। এটাও অব্যাহত থাকবে। তারা জানান, উজান থেকে নতুন করে পানি না এলে এক সপ্তাহের মধ্যে দেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে এই সময়ে ভাটিতে উপকূলীয় জেলায় বন্যা পরিস্থিতি স্বল্প সময়ের জন্য অবনতি হতে পারে। পানি নেমে যাওয়ার সময়ে ভাটিতে চাপ বাড়ার কারণে এই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ইতোমধ্যে পানি নেমে বরিশাল, ভোলা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুরের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তবে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলে ১০ আগস্টের পর আবারও দেশের প্রধান নদীর পানি সমতলে বেড়ে যাওয়া আভাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে শুধু রাজধানী ঢাকা নয় আশপাশের জেলা গাজীরপুর নারায়ণগঞ্জ এবং মানিকগঞ্জ থেকেও বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে ঢাকা জেলা থেকে পানি কমতে শুরু করলেও চারদিক দিয়ে প্রবাহিত তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা ও ধলেশ্বী নদীর পানি এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এলাসিনে ধলেশ্বরী নদীর পানি বিপদ সীমার ৪৮ সেন্টিমিটার, ডেমরায় বালু নদী বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার, নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদী বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার, মিরপুরে তুরাগ নদীর পানি বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে পানি কমতে শুরু করলেও দুর্ভোগ কমেনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুইয়া বলেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এসব এলাকার বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। গত বেশ কিছুদিন ধরেই ঢাকার চাপাশের নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাজধানীর পাশের জেলা গাজীপুরের বন্যা পরিস্থিতি আস্তে আস্তে উন্নতি হচ্ছে। তবে, মানুষের দুর্ভোগ মোটেও কমেনি। বন্যায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, কালিয়াকৈর ও কালীগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। পানিতে ঘর-বাড়ি, স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট ও হাটবাজার ডুবে গেছে। এতে পানিবন্দী হয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। কর্ম না থাকায় পানিবন্দী এসব মানুষ নানা অভাব অনটনের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। পানি বাহিত নানা রোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। গৃহপালিত পশুপাখি নিয়েও পড়েছেন বিপদে। ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে তারা আশ্রয় নিয়েছে উঁচু স্থানে। কারও কারও জীবন কাটছে নৌকায়। এদিকে শনিবার তথ্য অধিদফতরের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে এবারের বন্যায় দেশের ৩৩ জেলার ১৬৩টি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। বন্যার কবলে পড়ে ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ১ হাজার ৭৩টি ইউনিয়নে বন্যায় বিভিন্ন মাত্রার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব জেলায় পানিবন্দী হয়েছেন ১০ লাখ ১৭ হাজার ৯১৪টি পরিবার। আর ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪ লাখ ৬০ হাজার ২৯১ জন। এতে উল্লেখ করা হয়েছে বন্যাকবলিত ঢাকা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মুন্সিগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জসহ মোট ৩৩ জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে উত্তরের প্রধান নদী যমুনা ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। যা অব্যাহত থাকবে। মধ্যাঞ্চলের গঙ্গা পদ্মা নদীর পানিও সমতলে হ্রাস পেতে শুরু করেছে। যা ৪৬ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। যা অব্যাহত থাকবে। এছাড়া ঢাকা আশপাশের নদীর সমূহের পানি হ্রাস পাচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নাটোর মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, শরীয়তপুর রাজবাড়ী, ঢাকার ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি অব্যাহত থাকবে। তারা জানায় সমতলে ১০১টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে পানি বেড়েছে মাত্র ১৯টি স্টেশনের। কমেছে ৭৯ পয়েন্টে। বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ১৬ স্টেশনে। এখনও বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে যমুনা নদী, গুড় নদী, আত্রাই নদী, ধলেশ্বরী, বালু নদী, শীতলক্ষ্যা তুরাগ, টঙ্গী খাল, কালীগঙ্গা, বংশী, পদ্মা ও মেঘনা নদীর পানি। এর মধ্যে আচিরায় যমুনা নদীর পানি, গোয়ালন্দ, ভাগ্যকুল, সুরেশ্বর ও মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি এবং চাঁদপুরে মেঘনা নদীর পানি এখান বিপম সীমার ওপর দিয়ে বইছে। এদিকে সারাদেশের নদী নদীর পানি কমতে শুরু করলে ১০ আগস্টের পর আবার পানি বাড়তে পারে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডে দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয় ১০ আগস্ট পর্যন্ত সমতলে ব্রহ্মপুত্র যমুনা নদীর পানি কমবে। এরপর আবার বাড়তে পারে। এই সময়ে উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু জেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হবে। পানি বাড়লে আবারও বন্যার অবনতি হতে পারে। এ সময়ে গঙ্গা পদ্মা নদীর পানিও বাড়ার আভাস রয়েছে। তারা জানায় ১০ আগস্টের ঢাকার চারপাশের নদীর সমূহের পানি সমতলে স্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে। তবে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি আরও বাড়বে। ফলে নারায়ণগঞ্জ জেলার নি¤œাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি আরও দিন স্থায়ী হয়ে পড়বে। ডেমরা পয়েন্টে বালু নদী, মিরপুর পয়েন্টে তুরাগ নদী এবয় ধলেশ্বরীর নদীর পানিও বাড়বে। ফলে ঢাকার জেলার নি¤œাঞ্চলে বন্যা আরও এক সপ্তাহ স্থায়ী হয়ে পড়তে পারে।
×