ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কাশিমপুর কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া কয়েদীর সন্ধান মিলে নি, তদন্ত কমিটির কার্যক্রম শুরু

প্রকাশিত: ২১:০২, ৮ আগস্ট ২০২০

কাশিমপুর কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া কয়েদীর সন্ধান মিলে নি, তদন্ত কমিটির কার্যক্রম শুরু

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে নিখোঁজ হওয়া যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদী আবু বকর সিদ্দিকের খোঁজ শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। এদিকে এঘটনায় গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্যরা তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। তারা শনিবার দিনভর কারাগার এলাকা পরিদর্শণ করেছেন। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২’র সিনিয়র সুপার জাহানারা বেগম জানান, বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় লকআপের সময় বন্দিদের গননাকালে একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদী আবু বকর সিদ্দিককে পাওয়া যায়নি। কারাগারের ভিতরে বিভিন্ন সেল ও ওয়ার্ডসহ আশেপাশের এলাকায় তন্ন তন্ন করে খোঁজায়। এমনকি কারাগারের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে তা পর্যবেক্ষণ করা হলেও কোথাও তার সন্ধান মিলেনি। এ ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে কারা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোনাবাড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। কারাগারের জেলার বাহারুল আলম এ মামলার বাদী হয়েছেন। পলাতক ওই কয়েদীকে আটক করতে পুলিশ ও র‌্যাবসহ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গাজীপুরসহ বিভিন্নস্থানে অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তার হদিস পাওয়া যায় নি। এদিকে এ ঘটনায় তদন্তের জন্য গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ইতোমধ্যে তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। কমিটির সদস্যরা শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গাজীপুরে কাশিমপুরের এ কারাগারে আসেন। তারা দিনভর কারাগার এলাকা পরিদর্শণ করেন এবং কারাগারের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করেন। এসময়ে তারা কারা কর্মকর্তা-কারা রক্ষী ও বন্দিসহ বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলেন। অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্ণেল আবরার হোসেন এ তদন্ত কমিটির প্রধান। তিন সদস্যের এ কমিটির অন্যরা হলেন- ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি (প্রিজন্স) তৌহিদুর রহমান ও মানিকগঞ্জ কারাগারের জেলার বিকাশ রায়হান। তদন্ত শেষে এ কমিটিকে তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্ণেল আবরার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, তদন্তের কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। কারাগার থেকে কয়েদি কিভাবে পালিয়ে গেছে, ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, কারা দায়ী- আমরা সে বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি ও তদন্ত করছি। আমরা তদন্তের প্রাথমিক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি। অল্প সময়ের মধ্যেই বাকি কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হবে। তদন্ত কার্যক্রম শেষ হলেই সবকিছু জানা যাবে। তাই তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে এ মুহুর্তে কোন তথ্য জানানো সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, নতুন করে কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এব্যাপারে তদন্ত কমিটি সুপারিশ করবে। তিনি বিকেলে গাজীপুরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের গেইটে এসব কথা বলেন। অপরদিকে, কারাগার থেকে কয়েদি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনার পরপরই গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (ক্রাইম) মোঃ শরিফুর রহমান, কোনাবাড়ি থানার ওসি মোঃ এমদাদ হোসেন ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ মিজানুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং খোঁজ খবর নেন। কারাগারের সুপার জাহানারা বেগম আরো জানান, এর আগেও কয়েদি আবুবকর সিদ্দিক কারাগার থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। তিনি ২০১৫ সালের ১৩ মে সন্ধ্যায় কারাগারের সেল এলাকার একটি সেফটি ট্যাংকির ভিতরে লুকিয়ে নিজেকে আত্মগোপন করেছিলেন। দীর্ঘ সময় খোঁজাখুঁজি শেষে পরদিন কারগারের ৪০নং সেল এলাকার একটি সেফটি ট্যাংকির ভেতর থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার আবাদ চন্ডীপুর এলাকার তেছের আলী গাইনের ছেলে আবু বকর সিদ্দিক (৩৪) গত ২০১১ সালের ১৪ জুন হতে এ কারাগারে বন্দি ছিলেন। তাকে ২০০২ সালের ১৭ মার্চ গ্রেফতার করা হয়। শ্যামনগর থানার একটি হত্যা মামলায় ফাঁসির দন্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামী হিসেবে তাকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কাশিমপুরের এ কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। ২০০২ সালের ১৭ মার্চ এর একটি হত্যা মামলায় (নং-১২) আদালত আবু বকরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের আদেশ দেন ২০০৬ সালের ৬ আগস্ট। পরবর্তীতে আসামীর আপীলের প্রেক্ষিতে আদালত ২০১২ সালের ২৭ জুলাই ওই সাজা সংশোধন করে তাকে যাবজ্জীবন (৩০ বছর) সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন। কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা বলেছেন, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ওই কয়েদি কারাগারের ভেতরে নেই। তাকে খোঁজা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি জানান, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি পালানোর ঘটনায় ইতোমধ্যে প্রধান কারারক্ষী ও সহকারী কারারক্ষীসহ সংশ্লিষ্ট ১২জনের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাদেরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে প্রধান কারা রক্ষী ও সহকারী কারা রক্ষীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে।
×