ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

৪ মাস বন্ধের পর আবারও উৎপাদনে যাচ্ছে মধ্যপাড়া পাথর খনি

প্রকাশিত: ১৮:২৩, ৮ আগস্ট ২০২০

৪ মাস বন্ধের পর আবারও উৎপাদনে যাচ্ছে মধ্যপাড়া পাথর খনি

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ করোনার কারনে ৪ মাস বন্ধের পর আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই আবারও উৎপাদনে যাচ্ছে দেশের একমাত্র পাথর খনি মধ্যপাড়া। এরই মধ্যে এক বছর বাড়ানো হয়েছে পাথর উত্তোলনের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জামর্নিয়া ট্রেস্ট কনসোরটিয়াম (জিটিসি)-এর চুক্তির মেয়াদ। কর্তৃপক্ষ বলছে, ইতোমধ্যেই শ্রমিকরা কাজে যোগদান করেছেন। শিগগিরই শুরু হবে উত্তোলন। এ বছরের ২৬ মার্চ থেকে করোনায় লকডাউনের কারণে বন্ধ হয়ে যায় মধ্যপাড়া পাথর খনির উত্তোলন কার্যক্রম। এই খনি থেকে বোল্ডার পাথর সরবরাহ বন্ধ থাকায়, পদ্মাসেতু ও রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। এদিকে কাজে যোগদানের জন্য মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে সেখানকার শ্রমিকরা। এমন অবস্থায় পাথর উত্তোলন শুরু করতে শ্রমিকদের কাজে যোগদানের জন্য বলা হয়। এরপরই শ্রমিকরা কাজে যোগদান করে। দেশের একমাত্র পাথর খনি দিনাজপুরের মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসিএল) বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে ২০০৭ সালের ২৫ মে। প্রথম অবস্থায় খনি থেকে দৈনিক দেড় হাজার থেকে ১ হাজার ৮শ টন পাথর উত্তোলন হলেও পরে তা নেমে আসে মাত্র ৫শ টনে। এমন অবস্থায় উৎপাদন বাড়াতে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৯২ লাখ মেট্রিক টন পাথর উত্তোলনের বিপরীতে ১৭১ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে খনির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় বেলারুশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি)-কে। চুক্তির চাহিদাপত্র অনুযায়ী, খনিতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও মালামাল সরবরাহ করবে কোম্পানি। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে যন্ত্রাংশ ও মালামাল পাওয়া না যাওয়ায় খনিতে পাথর উত্তোলনের ব্যাঘাত ঘটেছে এবং প্রায় ২ বছর পাথর উত্তোলন বন্ধ ছিল জানিয়ে ২০১৭ সালে চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য পেট্রোবাংলা বরাবরে আবেদন করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি। জিটিসি ও খনি সূত্রে জানা যায়, মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় বিস্ফোরক সরবরাহ না করায়, ২০১৪ সালে ২ মাস খনির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ২ মাস পর আবারও উৎপাদন শুরু হলে, মাইনিং ইকুইপমেন্ট ও উৎপাদন যন্ত্র সরবরাহ না করায় ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০১৬ সালে বিদেশ থেকে উৎপাদন যন্ত্র আমদানি করে ভূ-গর্ভে নতুন স্টোপ তৈরি করা হয়। ২০১৭ সালের জুন মাস থেকে আবারও পুরোদমে পাথর উত্তোলন শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রয়োজনীয় বিস্ফোরক অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট সরবরাহ না থাকায় উৎপাদন বন্ধ ছিল। ২০১৮ সালের ২ জুন বিস্ফোরকের অভাবে ৮ দিন পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকে। পরে আবারও পাথর উত্তোলন শুরু হলে পাথর উত্তোলন যন্ত্র ক্রিপ্ট মোটর গিয়ারবক্সের প্রিনিয়াম নষ্টের কারণ দেখিতে ২০১৯ সালের ৩ এপ্রিল রাত থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখে চুক্তিবদ্ধ এই প্রতিষ্ঠানটি। পরে প্রয়োজনীয় মালামাল আমদানি করে মেরামত শেষে ৫ মাস ১১ দিন পর ওই বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে পাথর উত্তোলন শুরু করা হয়। এরপর চলতি বছরের ২৬ মার্চ থেকে করোনা পরিস্থিতিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২৬ মার্চ থেকে খনি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়ে প্রায় ৮শ শ্রমিক। তারা বিভিন্ন সময়ে খনিতে উত্তোলন শুরু ও বকেয়া বেতন-ভাতা প্রদানের দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করে। এ সময় তারা মূল বেতনের ৫ শতাংশ বৃদ্ধি প্রদান, ছুটিকালীন বেতন-ভাতা প্রদান, অনতিবিলম্বে খনি থেকে পাথর উত্তোলন শুরু, শ্রমিকদের ঝুঁকি ভাতা প্রদান, ৪ শিফটে পাথর উত্তোলন, শ্রমিকদের জীবনবীমা প্রদানেরও দাবি জানায়। মধ্যপাড়া পাথর খনি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, 'কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমাদের যেসব দাবি-দাওয়াগুলো আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে আলোচনায়। সেই মোতাবেক আমরা কাজে যোগদান করেছি।' এদিকে উৎপাদনের দায়িত্বে থাকা বেলারুসের কোম্পানি জামর্নিয়া ট্রাস্ট কনসোরটিয়াম (জিটিসি)-এর সঙ্গে এক বছর বাড়ানো হয়েছে চুক্তির মেয়াদ। বিষয়টি জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি)-এর মহাব্যবস্থাপক জামিল আহমেদের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, 'শ্রমিকরা কাজে যোগদান করেছে। এখন পরিকল্পনা করে পাধর উত্তোলন শুরু হবে। আর যেদিন থেকে উত্তোলন শুরু হবে সেদিন থেকে এক বছর পর্যন্ত আমরা পাথর উত্তোলন করতে পারবো।' মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (এমজিএমসিএল)-এর মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) আবু তালেব ফারাজী জানান, ইতোমধ্যেই আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকরা কাজে যোগদানের কথা জানিয়েছে। এখন উত্তোলনের ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি পরিকল্পনা করবে, এরপর তারা আমাকে জানাবে। উল্লেখ্য, ১৯৭৩-৭৪ সালে জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ এই পাথর খনিটি আবিষ্কার করে। ১৯৭৬-৭৭ সালে এসএনসি, কানাডা সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা করে। ১৯৮৪-৮৫ সালে অস্ট্রেলিয়ান গ্রাউন্ড ওয়াটার কোম্পানি লিমিটেড হাইড্রোজিওলজিক্যাল সমীক্ষা করে। ১৯৯৪ সালের মার্চ মাসে খনি নির্মাণের জন্য পেট্রোবাংলা ও নামনাম কোম্পানির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং একই বছরের অক্টোবর মাসে ফিজিক্যাল কার্যক্রম শুরু হয়। দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের গুড়গুড়ি মৌজায় অবস্থিত দেশের একমাত্র পাথর খনি মধ্যপাড়া। মধ্যপাড়া পাথর খনিতে মাটির ১২৮ মিটার গভীরতার প্রায় ১.২০ বর্গ কিমি এলাকাজুড়ে পাথর রয়েছে। খনিটিতে উত্তোলনযোগ্য মজুদের পরিমাণ ১৭৪ মিলিয়ন টন।
×