ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টাঙ্গাইলের গোবিন্দাসী-বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কে গরু-ছাগল ও মানুষের বসবাস

প্রকাশিত: ১৮:০৭, ৮ আগস্ট ২০২০

টাঙ্গাইলের গোবিন্দাসী-বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কে গরু-ছাগল ও মানুষের বসবাস

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল ॥ সাজেদা বেগম। বয়স আশির ওপরে। ঘরে পানি উঠেছে। আশ্রয় নিয়েছেন টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী-বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কের পাশে। সেখানে পলিথিন দিয়ে একটি ছাউনি তৈরি করে রয়েছেন। খেয়ে না-খেয়ে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সড়কেই তাঁর বসবাস। সাজেদা বেগম বলেন, ‘কেউ দিলে খাই। না দিলে না খাইয়া থাকি। খাইয়াও দিন যাইতাছে, না খাইয়াও দিন যাইতাছে।’ শুধু সাজেদা বেগম নন, তার মতো পাঁচ শতাধিক বন্যা কবলিত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে এ সড়কে। সড়কটিই এখন তাদের ঠিকানা। তাদের সবার বাড়ি গোবিন্দাসী ও নিকরাইল ইউনিয়নের যমুনা তীরবর্তী বিভিন্ন গ্রামে। দেখা যায়, রাস্তার পাশে কেউ পলিথিন দিয়ে, আবার কেউ টিন দিয়ে কোন মতে ডেরা তৈরি করে বসবাস করছেন। অনেক ডেরার নিচে গরু, ছাগল ও মানুষের পাশাপাশি বসবাস। স্থানীয় সূত্র জানায়, এসব মানুষের বেশির ভাগই যমুনার ভঙ্গনে বাড়িঘর ও জমিজমা হারিয়েছেন। সব হারিয়ে কেউ সড়কের পাশে সরকারি জায়গায় অথবা আশপাশের গ্রামে অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে অথবা কিনে বসবাস করছেন। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দুই ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক পরিবার সড়কটিতে আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে আশ্রয় নেয়া দিনমজুর রহিজ উদ্দিন জানান, এক মাস ধরে এখানে থাকলেও তিনি পাঁচ কেজি চাল ও দুই কেজি চিড়া ছাড়া আর কিছুই পাননি। অন্যদেরও অবস্থা তাঁর মতোই। কৃষক মোস্তফা শেখ জানান, ১৫ বছর আগে তাঁর ছয়আনী পাড়া গ্রামের বাড়ি যমুনায় ভেঙ্গে যায়। তারপর এসে আশ্রয় নেন এই রাস্তার পাশেই সরকারি জায়গায়। সেখানে প্রতিবছর বন্যায় পানি ওঠে। তাই প্রতিবছরই এই রাস্তায় আশ্রয় নিতে হয়। সড়কে আশ্রয় নেয়া খানুরবাড়ি গ্রামের মোহর ব্যাপারী জানান, যমুনা পারের মানুষের ভাঙ্গন আর বন্যা নিত্যসঙ্গী। বাড়িতে পানি উঠলেই উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে হয়। সেখানে খেয়ে না খেয়ে তাদের দিন কাটে। গৃহবধূ রাহেলা বেগম বলেন, প্রতি বছর বন্যার সময় চলার জন্য কিছু পয়সা সঞ্চয় রাখি। এবার সঞ্চয়ের টাকা করোনার সময়েই শেষ। তাই খুব কষ্টে চলন লাগতাছে। সড়কটির নিকরাইল ইউনিয়নের মাটিকাটা এলাকায় আশ্রয় নেয়া মালেকা বেগম বলেন, তিন-চার মাস আগে করোনা রোগ আইছে। তহন থিকা কামকাজ নাই। এহন আবার বন্যা। অভাব অনটন আমাগো জানের ওপর দিয়া যাইতাছে। গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার জানান, গোবিন্দাসী-বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কে আশ্রয় নেয়া তাঁর ইউনিয়নের বন্যা কবলিতদের একাধিকবার ত্রাণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় সংসদ সদস্যের পক্ষ থেকেও সহায়তা করা হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির বলেন, নদী ভাঙ্গনের শিকার অনেক মানুষ এলাকায় রয়েছে। বন্যার পানি উঠলে তাঁরা গোবিন্দাসী-বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কে আশ্রয় নেন। তাঁদের স্থায়ীভাবে সরকারি জমিতে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
×