ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদের সময়ে চাঞ্চল্যকর কোন অপরাধ সংঘটিত হয়নি বলে দাবি

সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের রেকর্ড

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ৮ আগস্ট ২০২০

সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের রেকর্ড

শংকর কুমার দে ॥ ঈদের সময়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করায় মানুষজনের জানমাল নিরাপত্তায় অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল রেকর্ড করেছে পুলিশ। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে চাঞ্চল্যকর বা গুরুত্বপূর্ণ এমন কোন বড় ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়নি বলে পুলিশের দাবি। জঙ্গী হামলার যে আশঙ্কা করা হয়েছিল তার ওপর ব্যাপক নজরদারি করে জঙ্গীবিরোধী অভিযানের মাধ্যমে তা নস্যাৎ করে দেয়া হয়েছে। চামড়া সন্ত্রাস, জাল টাকার কারবার, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, খুনখারাবি, অজ্ঞান-মলম পার্টি, মাদক ব্যবসা, প্রতারণা- এ ধরনের ঈদ মৌসুমি অপরাধ সংঘটিত হতে দেয়া হয়নি। ঈদ ঘিরে সব ধরনের অপরাধমূলক তৎপরতা বন্ধে পুলিশ, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, র‌্যাব ও আনসারের প্রতিটি ইউনিটকে মাঠে নামানো হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রয়োজনীয় ওয়াচ টাওয়ার, সিসিটিভি ক্যামেরা ও চেক পোস্ট স্থাপন, টহল টিম গঠন করে মহাসড়কে টহল জোরদার করার মাধ্যমে জানমাল নিরাপত্তায় ব্যাপক তৎপরতায় ছিল র‌্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতি ও ঈদ মৌসুমের কারণে কিছু কিছু অপরাধ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা সত্ত্বেও বিচ্ছিন্ন দু’একটি ধর্তব্য নয় এমন অপরাধের ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের কোন অপরাধের ঘটনা ঘটতে দেয়া হয়নি। বিশেষ করে সড়ক-মহাসড়কে, আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মলম-অজ্ঞান পার্টির তৎপরতার ওপর নজরদারি ও অভিযান পরিচালনা করা হয়। ঈদের সময়ে ঢাকাসহ সারাদেশে অজ্ঞান-মলম পার্টির সদস্য গ্রেফতার করা হয়েছে শতাধিক সংখ্যক। সুযোগসন্ধানী দুর্বৃত্তরা নাশকতা চালানোরও সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে সাদা পোশাকে এবং ভার্চুয়ালি নজরদারি জোরদার করা হয়েছিল। ঢাকাসহ সারাদেশের সব পুলিশ ইউনিটগুলোকে টহল বাড়ানোরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে যাতে কোরবানির পশু পরিবহনকে কেন্দ্র করে কোন ধরনের চাঁদাবাজি না হতে পারে, চামড়া সন্ত্রাসী ও চামড়া পাচারকারীসহ এসব ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে পুলিশ কর্মকর্তাদের বিশেষভাবে নির্দেশ দেয়ার কারণে এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হতে পারেনি বলে পুলিশের দাবি। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, ঈদ সামনে রেখে দেশে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছে জঙ্গীরা- এমন তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পুলিশের সকল ইউনিটকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশ দেয়ার পর জঙ্গীবিরোধী অভিযান চালানোর কারণে জঙ্গী হামলার মতো কোন ধরনের ঘটনা ঘটতে দেয়া হয়নি। ঈদের দুদিন আগে জঙ্গী হামলা সংক্রান্ত একটি চিঠি পুলিশের সকল ইউনিটে পাঠানো হয়েছে এবং চিঠিতে বলা হয়েছে, করোনার সুযোগ কাজে লাগিয়ে নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে জঙ্গীরা, আসন্ন ঈদের আগে কিংবা পড়ে তারা বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে। জঙ্গীদের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে পুলিশের যে কোনো শাখা, বিমানবন্দর, দূতাবাস, শিয়া-আহমদিয়া উপাসনালয়, চার্চ, প্যাগোডা ও মন্দির, গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর স্থানগুলোতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয় ঈদ সময়ে। বিষয়টিকে মাথায় রেখে দেশব্যাপী পুলিশের সব ইউনিটকে কঠোরভাবে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। আত্মগোপনরত জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর কাছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার খবর পৌঁছানোর কারণে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে জঙ্গী হামলা চালানোর সাহস করেনি জঙ্গীরা। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একজন কর্মকর্তা বলেন, ঈদের সময়ে ঢাকা মহানগরসহ দেশের সব পশুর হাটে ভ্রাম্যমাণ কোন দোকান বসতে না দেয়া হয়নি এবং এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে দুর্বৃত্তরা যাতে পশুর হাটে খাবারের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে মানুষকে অজ্ঞান করে সব কিছু লুটে নিতে না পারে সেই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পশুর হাটের নিরাপত্তার জন্য জরুরী প্রয়োজনে গরু নিয়ে হাটে আসা ট্রাকের নম্বর ও ড্রাইভারের নাম-পরিচয় এবং তার ছবি তুলে পুলিশ সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সাদা পোশাকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াও ওয়াচ টাওয়ার ও পুলিশ কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছিলম, যা অতীতের চেয়ে ভিন্ন মাত্রার। প্রতিটি থানায় ও কন্ট্রোলরুমে মানি এসকর্ট টিম স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছিল যাতে পশু বিক্রির টাকা ছিনতাই প্রতিরোধে, জাল টাকার বিস্তার রোধকল্পে ও পশুর হাটে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, পকেটমার ও অন্যান্য অপরাধীকে তৎপরতা বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেয়ার কারণে অজ্ঞান-মলম পার্টির সদস্যসহ অনেক অপরাধী ধরা পড়েছে। র‌্যাবের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, চামড়া সন্ত্রাস প্রতিরোধে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে র‌্যাব যার ফলে ঈদকালীন চামড়া ব্যবসায়ীদের নগদ অর্থ নিয়ে নিরাপদ স্থানে রাত যাপন, চামড়া কেনাবেচার ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট তৈরি বন্ধ করে জোর জবরদস্তিমূলক কর্মকা- করতে দেয়া হয়নি। কাঁচা চামড়া পাচার রোধে ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথগুলোতে চেকপোস্ট এবং নদীপথে নৌ-টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে যা এখনও অব্যাহত আছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার স্বার্থে কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে কোন প্রকার সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি, জোর জবরদস্তি না হয় সেজন্য ঈদকালীন যে র‌্যাব তৎপরতা ছিল তা এখনও র‌্যাবের তৎপরতা অব্যাহত থাকার ফলে এই ধরনের অপরাধ সংঘটিত হতে পারেনি। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ঈদের সময়ে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চালক, হেলপার ও যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ এবং সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে টিকেট কালোবাজারি ও যাত্রী হয়রানি যাতে না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে এবারের ঈদের সময়ে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা, পণ্যবাহী ট্রাকে যাত্রী পরিবহন বাস ও ট্রেনের ছাদে করে ভ্রমণ বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ, প্রতিটি বাস টার্মিনালে ওয়াচ টাওয়ার এবং প্রতিটি বাস, লঞ্চ টার্মিনাল এবং রেলওয়ে স্টেশনে পুলিশ কন্ট্রোল রুম স্থাপন করার ফলে এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা গেছে এবারের ঈদকালীন। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেছেন, রাজধানীর প্রতিটি আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় পুলিশের কঠোর নজরদারি, স্বর্ণের দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি ও ভাড়াটিয়াদের নিরাপত্তায় সচেতনতামূলক প্রচার, ঈদের ছুটিতে আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকায় অপরাধমূলক কর্মকা- প্রতিরোধের লক্ষ্যে মোবাইল পেট্রল, ফুট পেট্রল ও চেকপোস্টের মাধ্যমে দৃশ্যমান পুলিশিং নজরদারি বাড়ানো, জঙ্গীবিরোধী নজরদারি ও অভিযানের ফলে এবারের ঈদের সময়টা কেটেছে অপরাধ শূন্য অবস্থায় শান্তি ও স্বস্তিতে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ কোন বড় ধরনের অপরাধ সংঘটিত হতে দেয়া হয়নি, যা ঈদকালীন অপরাধ শূন্যের অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি।
×