ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শেষ করতে মনিটরিং হবে

এলজিআরডি প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানো যাবে না

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ৮ আগস্ট ২০২০

এলজিআরডি প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বাড়ানো যাবে না

মশিউর রহমান খান ॥ ইচ্ছেমতো বাড়ানো যাবে না প্রকল্প ব্যয় ও বাস্তবায়নের মেয়াদকাল। বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা প্রধানদের জবাবদিহী করতে হবে। সংস্থা প্রধানদের কাছে প্রতিটি স্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীরও কাজের অগ্রগ্রতি সময়মতো তুলে ধরতে হবে। দীর্ঘমেয়াদে চলা যেসব প্রকল্প রয়েছে তার কারণ চিহ্নিত করে তা দ্রুত শেষ করতে উদ্যোগ নেয়া হবে। যে কোন প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজনৈতিক প্রভাব দূর করতে প্রয়োজনে সরাসরি হস্তক্ষেপ করবে মন্ত্রণালয়। বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সকল সংস্থার মোট চলমান ছোট বড় ২শ’ ৫৬টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্পের কাজে গতি ফেরাতে এ বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় সরকার পল্লী উনয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। মূলত যে কোন প্রকল্প বছরের পর বছর চলতে দেয়া সম্পূর্ণরূপে বন্ধের অংশ হিসেইে এমন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি), ঢাকা ওয়াসাসহ মোট চারটি ওয়াসা কর্তৃপক্ষ, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর ও ১৩টি সিটি কর্পোরেশনসহ সকল সংস্থার গত অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। চলতি অর্থবছরে তা বাড়িয়ে ৩৬ হাজার কোটি টাকা প্রদান করে। নতুন ও পুরাতন সকল প্রকল্পের সর্বশেষ তথ্য আপডেট রাখতে ও প্রকল্প কাজ পরিদর্শন করতে সংশ্লিষ্ট সকল স্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তদের ঘন ঘন মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন করতে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এছাড়া নাগরিকদের জীবন মান উন্নয়নে সরকারের নেয়া প্রকল্প সময় মতো ও মানসম্পন্নভাবে শেষ করতে প্রতিটি কাজে জবাবদিহী প্রতিষ্ঠা করতে এ বিশেষ নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এখন থেকে সরকার কোন প্রকল্পের বেঁধে দেয়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তার যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ৮ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত লেগে যায়। ফলে একটি সরকারের আমলে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও তার মন্ত্রণালয় কি কি কাজ সমাপ্ত করতে পেরেছে তার মূল্যায়ন করা হয়। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেও কোন কোন প্রকল্প সময় মতো করা সম্ভব হচ্ছে না। নির্দিষ্ট সময়ে কোন প্রকল্পের কাজ করতে না পারায় সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহী করতে হয়। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সকল প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। জানা গেছে, এখন থেকে দীর্ঘমেয়াদে করা চলমান সকল প্রকল্প কাজ চিহ্নিত করা হবে ও গুরুত্ব বুঝে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। বার্ষিক কর্মপরিকল্পনার ওয়াদা অনুযায়ী তার পূর্ণ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে কি না তাও নিয়মিত মনিটরিং করা হবে। একইসঙ্গে গাফিলতি পাওয়া গেলে কারণ অনুসন্ধান করে বিশ্লেষণপূর্বক তা সময় মতো শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সূত্র জানায়, গত বছর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী বেশ কিছু বিষয়ে দীর্ঘসূত্রতা ও ওয়াদা অনুযায়ী লক্ষ্য পূরণ করতে পারে নি। যা এ সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অমলে প্রতিটি মন্ত্রণালয় তার স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একটি অর্থবছরে কি কি করবে তার জন্য চুক্তিবদ্ধ হতে নির্দেশ দিয়েছে। এবার এ চুক্তির সফল বাস্তবায়নে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। জানা গেছে, দেশের উন্নয়নে নেয়া যে কোন প্রকল্পে নিম্নমানের কাজ করে দুর্নীতি না হয়। এছাড়া কোন প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের সময় যদি সুবিধা ভোগকারী নাগরিকদের জন্য ক্ষতির কারণ হয় তাহলে সেই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত প্রকৌশলী, ঠিকাদার থেকে শুরু করে যারাই যুক্ত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর বাইরে গুণগত মানসম্পন্ন কাজ করতে গিয়ে কেউ যদি বাধার সম্মুখীন হতে হয় বা কোন প্রভাবশালী কাজ ব্যাহত করে তাহলে তা মোকাবেলার দায়িত্ব তার মন্ত্রণালয় নেবে। এ বিষয়ে কারও সঙ্গে সমঝোতা না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের অধীনে বর্তমানে ছোট বড় মোট ২৫৬টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। গত রবিবার সচিবালয়ে সব প্রকল্প সহ ২০১৯-২০ অর্থবছরে করা সংস্থাগুলোর বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি অনুযায়ী কি কি করা হয়েছে তা তুলে ধরা হয়। বৈঠকে নতুন করে চলতি অর্থবছরের জন্য চুক্তি সম্পাদন করা হয়। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম তার মন্ত্রণালয়ের সকল কাজে গতি আনতে বদ্ধপরিকর। সরকারের এ নির্দেশ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক কোন বাধা আসলেও তা দূর করতে প্রয়োজনে মন্ত্রণালয় তাতে হস্তক্ষেপ করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তাই প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সাহসের সঙ্গে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প কাজ শেষ করতে প্রকল্প পরিচালক ও বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণলয়। অপরদিকে কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন নির্দিষ্ট সময়ে তা বাস্তবায়ন করতে না পারলে কেন তা করা হলো না তার যুক্তিযুক্ত কারণ উল্লেখ করতে হবে। এছাড়াও কোন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীর গতি লক্ষ্য করা গেলে তা নিরসনে সময়মতো শেষ করতে নজরদারি বাড়াতেও সে সব বাধা দূর করতে হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম এমপি জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সকল সংস্থার মোট চলমান ছোট বড় ২শ’ ৫৬টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। আমাদের দেশে যে কোন প্রকল্প হাতে নিলেই তা নির্দিষ্ট সময়ে শেষ করতে দেখা যায় না। কোন কোন ক্ষেত্রে তো ৮-১০ বছরেও শেষ হয় না। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কাল ও ব্যয় বেড়ে যায়। যার ফলে নাগরিকগণ দুর্ভোগের শিকার হয় ও সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মন্ত্রী বলেন, এখন থেকে নির্দিষ্ট সময়েই সকল প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রকল্পের প্লানিং করতে যদি বছরের পর বছর চলে যায় তাহলে জাতি তার সুফল পাবে কবে? তাই প্রকল্প নিলে তা অবশ্যই সময়মতো তা বাস্তবায়ন করতেই হবে। এছাড়া আমাদের অধীনস্থ সকল সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের করা বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা প্রধানদের জবাবদিহিতা করতে হবে।
×