জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ভারতে করোনায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়াল। দেশটির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সাবেক এক মন্ত্রী মারাও গেছেন করোনা আক্রান্ত হয়ে। আর যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, নবেম্বরের মধ্যে করোনায় ৩ লাখ মৃত্যু হবে। সব রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়ে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ লাখ ছাড়াল। একদিনে রেকর্ড ২০৬০ জন মারা গেছেন। এছাড়া চীনে সুস্থ হলেও ৯০ ভাগ মানুষের ফুসফুসে ক্ষত দেখা দিয়েছে। খবর বিবিসি, সিএনএন, আলজাজিরা, রয়টার্স, এএফপি, এনডিটিভি ও ওয়ার্ল্ডোমিটার ডট ইনফোর।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের মতে, শুক্রবার পর্যন্ত সারাবিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ৯২ লাখ ৯৩ হাজার ৫০৩ জনে দাঁড়িয়েছে। মারা গেছে সাত লাখ ১৮ হাজার ৩২৮ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছে এক কোটি ২৩ লাখ ৮৫ হাজার ৮৩৪ জন। চিকিৎসাধীন আছে ৬১ লাখ ৮৯ হাজার ৩৪১ জন। যাদের মধ্যে ৬৫ হাজার ২৬১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। একদিনে আক্রান্ত হয়েছে দুই লাখ ৮০ হাজার ৯১৭ জন। ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছে ছয় হাজার ৪৫৮ জন।
ভারতে শনাক্তে রেকর্ড ॥ ভারতে কোভিড-১৯ সংক্রমণ দ্রুতগতিতে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ৬২ হাজার ৫৩৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। একদিনে মারা গেছে ৮৯৯ জন। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, মোট শনাক্ত ২০ লাখ ২৭ হাজার ৭৪ জন। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের পর তৃতীয় দেশ হিসেবে ভারতে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়িয়ে গেল। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশটিতে ৪১ হাজার ৫৮৫ জন মারা গেছেন। বড় বড় শহর ছাড়িয়ে ভারতে এখন মফস্বল শহর ও গ্রামে করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। দেশটিতে শেষ ১০ লাখ রোগী শনাক্ত হয়েছে মাত্র ২০ দিনে। এই সময়ে এমনকি যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রাজিলে সংক্রমণ বিস্তারের গতি এতটা দ্রুত ছিল না। ভারতে গত কয়েক সপ্তাহে ভাইরাস শনাক্তে পরীক্ষার সুযোগ বাড়ায় রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে শনাক্ত বিবেচনায় ১৩০ কোটি মানুষের দেশে মৃত্যুও হার এখনও অনেক কম। একজন বিশেষজ্ঞ ভারতে ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরুর অবস্থাকে ধীরে জ্বলতে থাকা ধোঁয়ার কুণ্ডলীর সঙ্গে তুলনা করেছেন। যেটা দীর্ঘ সময় ধরে আস্তে আস্তে ছড়িয়েছে এবং এখন গতি বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র ৪৩ দিনে এবং ব্রাজিল ২৭ দিনে সংক্রমণ শেষ ১০ লাখে পৌঁছেছিল। এদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের সাবেক পরিবহনমন্ত্রী ও সিপিএম নেতা শ্যামল চক্রবর্তী মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি কলকাতার একটি হাসপাতালে মারা যান। কলকাতার গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, কিডনি রোগে ভুগছিলেন শ্যামল চক্রবর্তী। কয়েকদিন তার চিকিৎসা চলছিল। তার ডায়ালাইসিস চলছিল। এরইমধ্যে দুইবার হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তার নিউমোনিয়াও ছিল। ৩ আগস্ট থেকে তিনি ভেন্টিলেশনে ছিলেন।
বিশেষজ্ঞদের হুঁশিয়ারি ॥ করোনায় বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র। ইতোমধ্যে সেখানে এক লাখ ৬২ হাজার ৮১২ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তবে এরমধ্যে আরও বেশি উদ্বেগের পূর্বাভাস দিয়েছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, নবেম্বরের পর অর্থাৎ ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৩ লাখে গিয়ে ঠেকবে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এমন আশঙ্কাজনক পূর্বাভাসটি দিয়েছে ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা যদিও বলছে, আগামী ১ ডিসেম্বরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় প্রাণহানির সংখ্যা ৩ লাখে দাঁড়াবে তারপরও মানুষ মাস্কের ব্যাপারে খুঁতখুঁতে হলে এই সময়ে ৭০ হাজার জীবন বাঁচানো সম্ভব। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ম্যাট্রিক্স এ্যান্ড ইভালুয়েশনের পরিচালক ডাঃ ক্রিস্টোফার মুরে বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রে একটা নাটকীয় পরিবর্তন লক্ষ্য করছি। যদি দেখা যায় সংক্রমণের কারণে মানুষ মাস্ক পরে আর সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছে তাহলে কিন্তু সংক্রমণ কমবে। যদিও তাদের মুখে মাস্ক পরতে দেখা যাচ্ছে না। অধ্যাপক ডাঃ ক্রিস্টোফার মুরে আরও জানাচ্ছেন, সংক্রমণ কমলেও মানুষ যদি এসব সুরক্ষা সংক্রান্ত বিধি মেনে না চলে তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। আর যদি মানুষ মাস্ক পরাসহ সামাজিক দূরত্ব রক্ষার মতো স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলে তাহলে অনেক প্রাণ বাঁচানো সম্ভব।
সব রেকর্ড ভেঙ্গে দিল যুক্তরাষ্ট্র ॥ কোভিড-১৯ মহামারীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দীর্ঘ সময় ধরে দেশটিতে দাপট দেখাচ্ছে এই ভাইরাস। আক্রান্তের সংখ্যা এরইমধ্যে ৫০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত মহামারীতে একক কোন দেশে এত সংখ্যক মানুষের আক্রান্তের ঘটনা এটিই প্রথম। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫০ লাখ ৩২ হাজার ৮০৫ জন। মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ৬২ হাজার ৮১২ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২৫ লাখ ৭৭ হাজার ৩৪৯ জন। গুরুতর অসুস্থ হয়ে এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছে ২৭ লাখ ৩৯ হাজার ৪৭২ জন। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্যাশবোর্ডে দেখানো হয়েছে, একদিনে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৪ হিসেবে দৈনিক মৃত্যুর এই সংখ্যাটি তিন মাসের মধ্যে সর্বাধিক। যুক্তরাষ্ট্র সবশেষ দুই হাজারের বেশি মৃত্যু দেখেছিল গত ৮ মে। নতুন মৃত্যু নিয়ে দেশটিতে মোট মৃতের সংখ্যা এখন বিশ্বে সর্বাধিক। একদিনে সংক্রমণ ধরা পড়েছে আরও ৫৮ হাজার ৬১১ হাজার মানুষের দেহে।
চীনে সুস্থদের ফুসফুসে ক্ষত ॥ চীনের উহানে করোনা আক্রান্ত যেসব রোগী সুস্থ হয়েছেন, তাদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগেরই ফুসফুসে মারাত্মক ক্ষত তৈরি হয়েছে। সেই ক্ষত নিয়েই তারা বেঁচে আছেন। তাদের ফুসফুসের ভেন্টিলেশন বা শ্বাস-প্রশ্বাস এখনও সুস্থ মানুষের পর্যায়ে আসেনি। বুধবার প্রকাশিত এক রিপোর্টে এ কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, উহান ইউনিভার্সিটির ঝোংনান হাসপাতালের একটি টিম রোগীদের ওপর ফলোআপ রিপোর্ট করেছেন। এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন ওই হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটের পরিচালক পেং ঝিয়োং। এপ্রিল থেকে সুস্থ হওয়া রোগীর ওপর তারা ফলোআপ রিপোর্ট করেন। এক বছরের ওই কর্মসূচীর প্রথম দফার পর্যবেক্ষণ শেষ হয়েছে জুলাইয়ে। এ সময়ে যেসব রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে তাদের গড় বয়স ৫৯ বছর। প্রথম দফার পর্যবেক্ষণের ফল অনুযায়ী, রোগীদের শতকরা ৯০ ভাগের ফুসফুসে এখনও বড় রকম ক্ষত রয়েছে। চীনের রাষ্ট্র পরিচালিত গ্লোবাল টাইমসে রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে। খবরে বলা হয়, পেং ঝিয়োংয়ের টিম রোগীদের ৬ মিনিটের একটি হাঁটার পরীক্ষা করেছেন। তাতে তারা দেখেছেন, করোনা থেকে সুস্থ হওয়া রোগীরা ৬ মিনিটে মাত্র ৪০০ মিটার হাঁটতে পারেন, যেখানে একই সময়ে একজন সুস্থ মানুষ হাঁটতে পারেন ৫০০ মিটার। বেজিং ইউনিভার্সিটির ডং ঝি মেন হাসপাতালের চিকিৎসক লিয়াং টেঙসিয়াও বলেছেন, হাসপাতাল থেকে তিন মাস আগে ছেড়ে দেয়া হয়েছে এমন অনেক মানুষ এখনও অক্সিজেন মেশিনের ওপর নির্ভর করেন। অর্থাৎ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য তাদের অক্সিজেন মেশিনের সাহায্য নিতে হয়। ৬৫ বছরের ওপরে বয়স এমন সুস্থ করোনা রোগীদের ফলোআপ রিপোর্টে দেখা গেছে, ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেহে যে এন্টিবডি তা শতকরা এক শ’ রোগীর মধ্যে শতকরা ১০ ভাগই অদৃশ্য হয়ে গেছে। কোভিড-১৯ নিউক্লিক এসিড টেস্টে তাদের শতকরা ৫ ভাগ নেগেটিভ ফল দেখিয়েছে। ইমিউনোগ্লোবিন এম (আইজিএম) টেস্টে তারা পজিটিভ রেজাল্ট দেখিয়েছেন। ফলে তাদের আবার কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: