স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্রথমদিনে চারজন- বিশ্বনাথ ঘোষ, নাজমুল ইসলাম রাসেল, সুমন রেজা এবং এমএস বাবলু। দ্বিতীয়দিনে প্রায় দ্বিগুণ, মানে সাতজন- রবিউল হাসান, আনিসুর রহমান জিকো, শহীদুল আলম সোহেল, সোহেল রানা, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, সুশান্ত ত্রিপুরা এবং টুটুল হোসেন বাদশা। বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা মাঠে নামার আগেই লড়ছেন মরণঘাতী এক অদৃশ্য শুত্রুর বিরুদ্ধে, যার নাম করোনাভাইরাস।
বহুদিন পর আবারও জাতীয় দলের ক্যাম্প শুরু হয়েছে গাজীপুরের একটি রিসোর্টে। বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ বাছাইকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের প্রস্তুতিপর্বের অংশ এটি। এই প্রাথমিক ক্যাম্পে ডাক পেয়েছিলেন ৩৬ ফুটবলার। তবে বসুন্ধরা কিংস নিজেদের তিন ফুটবলারকে ক্যাম্পে যাবার অনুমতি দেয়নি। এছাড়া ফ্লাইট সমস্যার কারণে আপাতত দেশে ফিরতে পারছেন না ডেনমার্ক থেকে জামাল ভুঁইয়া এবং ফিনল্যান্ড থেকে তারিক কাজী।
করোনাভাইরাসের কারণে ক্যাম্প শুরুর ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। তাদের পরিকল্পনা মোতাবেক ডাক পাওয়া ফুটবলার তিন ধাপে ক্যাম্পে যোগ দিচ্ছেন। প্রথম ধাপে ১২ জন করে। তারা আগে নিজেদের উদ্যোগে করোনা টেস্ট করাবেন। তারপর বাফুফের উদ্যোগে করাবেন। উভয়ক্ষেত্রেই নেগেটিভ ফলাফল হলে তবেই মিলবে গাজীপুরের ক্যাম্পে যাওয়ার ছাড়পত্র। কিন্তু এই টেস্ট করাতে গিয়েই ঘটেছে বিপত্তি। একের পর এক ফুটবলারের রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ আসছে। বুধবার ক্যাম্পে যোগ দেয়ার প্রথমদিনে ১২ ফুটবলারের চারজন করোনা পজিটিভ হয়েছিলেন। দ্বিতীয়দিনের ১২ জনের মধ্যে করোনা পজিটিভ হন সাতজন। এ নিয়ে দুইদিনে ১১ ফুটবলারের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হলো।
২৪ জনের জায়গায় দুইদিনে ক্যাম্পে উঠতে পেরেছেন মাত্র ১৩ জন। দ্বিতীয়দিন যে সাতজন করোনায় আক্রান্ত হন তারা সবাই ব্যক্তিগত উদ্যোগে করা পরীক্ষা করান। দলের ৪৫ শতাংশ ফুটবলারই এখন কোভিড নাইন্টিনে আক্রান্ত।
আগামী শনিবার বাকি সাত খেলোয়াড়ের করোনা পরীক্ষা করা হবে। এই অবস্থায় দল নিয়ে বিপদেই পড়েছে বাফুফে। তাই শেষদিনের পরীক্ষার ফল দেখেই সিদ্ধান্ত হবে স্কোয়াডের সদস্য বাড়বে কিনা। জাতীয় দলের ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রুপু বলেছেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হলে এখন কী করার আছে? সবাইকে সাবধানে থাকতে হবে। এখন শেষদিনের পরীক্ষা বাকি আছে। তারপর দেখা যাক কি হয়।’ জাতীয় দলের প্রাথমিক ক্যাম্পে ডাক পাওয়া ফুটবলাররা যে যার বাড়িতে থাকলেও কোচ জেমি ডে হোয়াটসএ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে সবার শরীরচর্চা ও খাওয়া-দাওয়া পর্যবেক্ষণ করেছেন। তারপরও তাদের প্রায় অর্ধেকই করোনা পজিটিভ। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে বাফুফে কর্মকর্তাদের। এখন সবাই তাকিয়ে শনিবারের দিকে। শনিবার যে খেলোয়াড়রা রিপোর্ট করবেন তারা হলেন- তৌহিদুল আলম সবুজ, মামুনুল ইসলাম, তপু বর্মণ, আশরাফুল ইসলাম রানা, রায়হান হাসান, নাবিব নেওয়াজ জীবন ও ইয়াসিন খান। এত ফুটবলার করোনোয় আক্রান্ত হলেও কোচ জেমি এখনই এ নিয়ে আতঙ্কিত হচ্ছেন না, ‘আসলে আমি এমনটি আঁচ করেছিলাম। কারণ বাংলাদেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ভাল নয়। অবশ্যই এটা খারাপ খবর। তবে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ দেখছি না। আমাদের হাতে যথেষ্ট সময় আছে। এর মধ্যে অনেকে করোনামুক্ত হয়ে ফিরবে বলেই বিশ্বাস আমার। ভালদিক হলো করোনা পজিটিভ হলেও কারও মধ্যেই করোনার উপসর্গ নেই’। জেমি আরও বলেন, ‘প্রথম ম্যাচ থেকে আমরা এখনও ১০ সপ্তাহ দূরে। আমাদের জন্য ৬ সপ্তাহ প্রয়োজন হবে খেলোয়াড়দের ফিট করতে। তাই আগামী এক-দুই সপ্তাহের মধ্যেই খেলোয়াড়রা সুস্থ হয়ে ফিরতে পারবে।’ এ অবস্থায় নতুন কোন খেলোয়াড় ডাকতে চান না জেমি, ‘দরকার হবে না। কারণ কাউকে ডাকলে তাদেরও একই অবস্থা হতে পারে। তাছাড়া আমি খুবই আশাবাদী যে, পজিটিভ হওয়া ফুটবলাররা তাড়াতাড়ি সেরে উঠবে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’ শনিবার বাকি ফুটবলাররা ক্যাম্পে ওঠার জন্য বাফুফে ভবনে আসবেন। এদের মধ্যে কতজন পজিটিভ হন সেটাই এখন দেখার বিষয়।