ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রূপালী ইলিশে বাজার ভরপুর

প্রকাশিত: ১৯:৪৫, ৭ আগস্ট ২০২০

রূপালী ইলিশে বাজার ভরপুর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ এবার ভাদ্র মাসের আগে স্বাদের রূপালী ইলিশ মাছে ভরে গেছে বাজার। কোরবানি ঈদের পর সরবরাহ আরও বেড়েছে। গোটা রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে যেনো চলছে ইলিশ উৎসব। অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে এবার বাজারে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বড়সাইজের ইলিশের দেখা পাচ্ছে ভোক্তারা। এক থেকে দেড়কেজি সাইজের ইলিশ মিলছে হরহামেশা। আর বেশি দাম দিলে ডালির বরফের স্তুপ থেকে দুই থেকে সোয়া দুইকেজি ওজনের ইলিশ তুলে দিচ্ছেন বিক্রেতা। এককেজি ওজনের প্রতিটি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৮শ থেকে ৯শ’ টাকায়। এর বেশি ওজন হলে প্রতিকেজিতে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা গুনতে হচ্ছে একজন ক্রেতাকে। অন্যদিকে, মাঝারি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা কেজি। একেবারে জাটকা ইলিশ এখন আর বাজারে তেমন দেখা যায় না। ইলিশ মাছের দাম কম হওয়ায় স্বস্তি দেশী মাছেও। তবে শাক-সবজির দাম চড়া। সবজির বাজারে গিয়ে ভোক্তাদের বেশি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৬০-২০০ টাকায়। এছাড়া গড়ে ৬০ টাকার নিচে কোন সবজি নেই বাজারে। বেড়েছে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। প্রতিহালী ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। ওই হিসেবে একডজন ডিমে ভোক্তাকে ১২০ টাকা দিতে হচ্ছে। তবে চাল, ডাল, আটা, চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। কমেছে পেঁয়াজ, আদাসহ বেশিরভাগ মসলাপতির দাম। জানা গেছে, জাটকা নিধণে সরকারী কঠোর পদক্ষেপ, প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ, জেলেদের পুনর্বাসন এবং সাগর ও নদীতে কোস্টগার্ডের তৎপরতা থাকায় দেশের ইলিশের উৎপাদন কয়েকগুন বেড়েছে। বাঙালির পাত থেকে হারিয়ে যাচ্ছিল ইলিশ। এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। ফিরে এসেছে স্বাদের ইলিশ। বাজারে স্বস্তায় বিভিন্ন সাইজের ইলিশ পাওয়ায় খুশি ভোক্তারা। ঐতিহ্যগতভাবে ভাতে-মাছে বাঙালির প্রিয় খাবার এই ইলিশ মাছ। রাজধানীর বাসাবাড়ির কিচেনগুলোতে এখন ইলিশ ভাজার মৌ মৌ গন্ধ পাওয়া যায়। দাম কম হওয়ার কারণে বাঙালির পাতে পড়ছে ইলিশ মাছ। খিলগাঁও রেলগেইটের সামনে ১০-১৫ জন মাছ বিক্রেতা ডালিভরে বিক্রি করছেন ইলিশ মাছ। এখানে ৫০০ গ্রাম থেকে আড়াইকেজি সাইজের ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় ইলিশ বেচাকেনার উৎসব যেন মাছের দোকানগুলোতে। বিক্রেতারা বলছেন, গত একদশকের মধ্যে এত ইলিশ মাছ তারা আর দেখেন নি। এবারকার ইলিশের সাইজের আকারও বেশ বড়। এছাড়া সরবরাহ বাড়ায় দামও তুলনামূলক অনেক কম। একই দৃশ্য দেখা গেলে পুরান ঢাকার কাপ্তান বাজারে। ওই বাজারে যারা নিয়মিত দেশী মাছ বিক্রি করতেন তাদের ডালিতেও দেখা যাচ্ছে ইলিশ মাছ। তারা জানালেন, বাজারে ইলিশ মাছের সরবরাহ ও চাহিদা থাকায় আপাতত ইলিশই বেচাকেনা করা হবে। ওই বাজার থেকে ইলিশ মাছ কিনছিলেন ওয়ারীর বাসিন্দা নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, দাম কম ও সাইজ ভাল হওয়ায় একসঙ্গে চারটি ইলিশ কেনা হয়েছে ৩ হাজার ৪শ’ টাকা দিয়ে। প্রতিটি এককেজির সামান্য বেশি হবে বলে জানালেন তিনি। গত কয়েক বছরে বাজারে এত ইলিশ দেখা যায়নি বলে দাবি করলেন তিনি। এদিকে, সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে, বাজারেও ভরপুর। এ কারণে বাজারে এই রূপালি মাছের দামও কিছুটা কম বলে জানিয়েছেন রাজধানীর পাইকারি মাছ বিক্রেতারা। এদিকে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখনও বন্যা অব্যাহত আছে। নদী, খাল, হাওরে পানি বেশি, যে কারণে জেলের জালে দেশি মাছ কম ধরা পড়ছে। বাজারে দেশি মাছ কম। তবে ইলশের কারণে দেশী মাছের দাম বাড়েনি। এদিকে বাজারে এখন সবজির দাম চড়া। কাঁচা মরিচের ঝাঁজ আরও বেড়েছে। প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৬০-২০০ টাকায়। এছাড়া নতুন উঠা শিম শিম ২০০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। এছাড়া বেগুন ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা, গাজর ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুরমুখি ৭০ টাকা, কাকরল, ঝিঙ্গা, ধুন্দল ৬০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, ঢেঁড়শ ৫০ টাকা, পেপে ৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে প্রতি পিছ বাঁধাকপি ও ফুল কপি ৫০ টাকা, লাউ মাঝারি আকারের ৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কাওরান বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. জসিম বলেন, বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে দেশের অধিকাংশ সবজিক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এখন যেসব উঁচু এলাকা আছে সেখানে সীমিত পরিসরে বিভিন্ন সবজি আবাদ হচ্ছে। চাহিদার তুলনায় বাজারে এসব সবজির সরবরাহ কম। আর এ কারণেই ভোক্তাকে এখন বেশি দাম দিয়ে সবজি কিনতে হচ্ছে। সবজির দাম বেড়ে যাওয়ায় অস্বস্তি বিরাজ করছে ভোক্তাদের মাঝে।
×