ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুপ্রীমকোর্টে দুই ধরনের আদালত চলবে

প্রকাশিত: ২৩:২১, ৭ আগস্ট ২০২০

সুপ্রীমকোর্টে দুই ধরনের আদালত চলবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইনজীবী ও মামলা মোকদ্দমার স্বার্থে সুপ্রীমকোর্টে দুই ধরনের আদালত চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সুপ্রীমকোর্টের ফুলকোট সভায় হাইকোর্ট বিভাগে ভার্চুয়াল ও শারীরিক উপস্থিতিতে উভয় ধরনের আদালত পরিচালনা করা হবে। আগামী রবিবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। একই সঙ্গে অবকাশকালীন ছুটি বাতিলের পক্ষে মত দিয়েছেন অধিকাংশ বিচারপতি। তবে এ বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত জানাননি প্রধান বিচারপতি। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত ফুলকোর্ট সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে ফুলকোর্ট সভায় উভয় বিভাগের বিচারপতিরা ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ভার্চুয়াল পূর্ণ আদালতে বৈঠকে যোগ দেয়া বেশির ভাগ বিচারপতি চলামান কোভিড-১৯ এর কারণে যে শূন্যস্থান রয়েছে তার পুনরুদ্ধার করতে আদালতের পরবর্তী ছুটি হ্রাস করার প্রস্তাব দিয়েছেন। এখন প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের শারীরিক ও ভার্চুয়াল উভয় কাজ পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট বিচারকদের সঙ্গে বেঞ্চ গঠন করবেন। ফুলকোর্ট বৈঠকে আপীল বিভাগের কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা হয়নি। কারণ এই আপীল বিভাগে সব বিচারপতি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ভার্চুয়াল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। বৈঠক সূত্রে জানা যায় আপীল বিভাগের মামলা করা বিচারপতিরা বয়স্ক। করোনাকালীন সময়ে তাদের আরও স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, অধিকাংশ বিচারপতিই দুই ধরনের আদালত পরিচালনার ইচ্ছা পোষণ করেন। একই সঙ্গে উচ্চ আদালতের যে ছুটি আছে তা কমানোর পক্ষেও মতামত প্রদান করেন। অধিকাংশ বিচারপতি ছুটি না নেয়ার পক্ষে। যাতে করে বয়স্ক বিচারপতি ও জুনিয়র বিচারপতি উভয়ের সুবিধা হয় তার জন্যই দুই ধরনের বিচার পরিচালনার পক্ষে মতামত প্রদান করেন বিচারপতিরা। এছাড়া আদালতের যে সব বিচারপতি বয়স্ক তারা ভার্চুয়াল আর কমবয়স্ক বিচারপতিরা শারীরিক উপস্থিতির মাধ্যমে বিচারকাজ পরিচালনা করবেন। পাশাপাশি আইনজীবীদের বিয়য়গুলোও তুলে ধরা হয়েছে। আইনজীবীদের মধ্যে একটি বড় অংশ আছেন যারা ৫০ বছরের বেশি বয়স হয়েছে। অনেক আইনজীবী শারীরিকভাবে আদালতে আসতে পারবে না। সভায় দুই মাসের ভ্যাকেশন নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ২০২০ সালের অবকাশকালীন ছুটি বাতিলের পক্ষে মত দিয়েছেন অধিকাংশ বিচারপতি। তবে এ বিষয়ে এখনও কোা সিদ্ধান্ত জানাননি প্রধান বিচারপতি। সভা সূত্র জানায়, হাইকোর্ট বিভাগের কিছু বিচারপতি শারীরিক উপস্থিতিতে আদালত পরিচালনার ইচ্ছা পোষণ করেন। যারা শারীরিক উপস্থিতিতে আদালত পরিচালনা করতে ইচ্ছুক নয়, তাদের ভার্চুয়াল বেঞ্চ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় ফুলকোর্ট সভায়। এর আগে গত বুধবার থেকে দেশের সব অধস্তন আদালতে শারীরিক উপস্থিতির মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক হয়েছে নিম্ন আদালতের বিচার কার্যক্রম। এক্ষেত্রে সুপ্রীমকোর্ট প্রশাসন ১৪টি দিক নির্দেশনা প্রদান করে। যার মধ্যে রয়েছে, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সাময়িকভাবে বিচারকবৃন্দ ও আইনজীবীবৃন্দ ক্ষেত্রমতো সাদা শার্ট বা সাদা শাড়ি/সালোয়ার কামিজ ও সাদা নেক ব্যান্ড /কালো টাই পরিধান করবেন। এ ছাড়া জেলা জজ / মহানগর দায়রা জজ /চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট আদালত ভবনের প্রবেশপথে এবং প্রকাশ্য স্থানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা হিসেবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বেসিন স্থাপন সাবান পানির ব্যবস্থা করবেন। আদালতে উপস্থিত প্রত্যেকে যথাসম্ভব নিজ নিজ নাক, মুখ এবং চোখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকবেন। আবেদন তামাদির মেয়াদ ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন আদালতে ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলা, আবেদন, আপীলসহ এ সংশ্লিষ্ট সব আবেদন দায়েরের তামাদির মেয়াদ আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়িয়েছে আপীল বিভাগ। এদিকে নদী দখল ফৌজদারি অপরাধ, নদী দখলকারী ব্যক্তিকে নির্বাচন এবং ব্যাংক ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় সংশোধন করেছে আপীল বিভাগ। এই তিনটি বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনাকে আদালতের অভিমত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সব আবেদন দায়েরের তামাদির মেয়াদ আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়িয়েছে আপীল বিভাগ। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপীল বিভাগের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদেশের সময় আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন, রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত এ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ হাসান আরিফ, সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন প্রমুখ। সংবিধানে প্রদত্ত ১০৪ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে এ আদেশ দেন আদালত। আদালত আদেশে বলেন, যেসব ফৌজদারি, দেওয়ানি ও প্রশাসনিক আদালত বা ট্রাইব্যুনালে মামলা-মোকদ্দমা, আবেদন, আপীল, রিভিশনের মেয়াদ গত ২৬ মার্চ তামাদি হয়েছে সেসব মামলা-মোকদ্দমা, আবেদন, আপীল, রিভিশনের মেয়াদ আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলো। বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও সংক্রমণের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সুপ্রীমকোর্টসহ দেশের সব অর্ধস্তন আদালতের স্বাভাবিক বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। গত ৯ মে রাষ্ট্রপতি ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনার অর্ডিন্যান্স জারি করেন। উক্ত অর্ডিন্যান্সের আলোকে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনার জন্য গত ১০ মে সুপ্রীমকোর্ট, উচ্চ আদালত এবং অর্ধস্তন আদালতের জন্য পৃথক পৃথক প্র্যাকটিস নির্দেশনা জারি করা হয়। নদী দখলে হাইকোর্টের দেয়া রায় সংশোধন করেছে আপীল বিভাগ ॥ কোন নদী, জলাশয়ের জায়গা বিক্রি করা যাবে না বা লিজ দেয়া যাবে না বলে রায় দিয়েছে আপীল বিভাগ। আদালত বলেছেন, সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে সরকারকে অবশ্যই অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। তবে নদী দখল ফৌজদারি অপরাধ, নদী দখলকারী ব্যক্তিকে নির্বাচন এবং ব্যাংক ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায় সংশোধন করেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এই তিনটি বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনাকে আদালতের অভিমত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আদালত বলেছেন, আইন প্রণয়ন করার সম্পূর্ণ এখতিয়ার জাতীয় সংসদের। আদালত সংসদকে আইন করতে নির্দেশ দিতে পারে না। তবে কোন আইন সংবিধান পরিপন্থী হলে তা বাতিল করতে পারে। কোন আইন সংশোধনের জন্য আদালত মতামত দিতে পারে। তুরাগ নদের তীরের অবৈধ দখল ও নদী ভরাট বন্ধে সম্প্রতি প্রকাশিত আপীল বিভাগের রায়ে এসব কথা বলা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপীল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করলেও সম্প্রতি এই রায় প্রকাশিত হয়েছে। এ রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরশেদ বুধবার হাতে পেয়েছেন। হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (HRPB) ২০১৬ সালে ঢাকার তুরাগ নদের তীরে অবৈধ দখল উচ্ছেদ ও মাটি ভরাট বন্ধে নির্দেশনা চেয়ে জনস্বার্থে রিট দায়ের করলে দীর্ঘ শুনানি শেষে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী এবং বিচারপতি মোঃ আশরাফুল কামালের আদালত রায় দেন।
×