ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সিনহা হত্যা ॥ ৪ জনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ

আত্মসমর্পণের পর ওসি প্রদীপসহ ৭ জন রিমান্ডে

প্রকাশিত: ২২:৪১, ৭ আগস্ট ২০২০

আত্মসমর্পণের পর ওসি প্রদীপসহ ৭ জন রিমান্ডে

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ টেকনাফের বাহারছড়ায় সংঘটিত মেজর (অব) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় প্রত্যাহারকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, ফাঁড়ি ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৭ আসামি বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রথম দফায় কক্সবাজার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। অপর দুই আসামি এ সময় আত্মসমর্পণ করেনি। আত্মসমর্পণের পর সাত আসামির পক্ষে জামিন চাওয়া হলে আদালত আবেদন নাকচ করে দিয়ে ৭ জনকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেয়। কিন্তু পরে তদন্ত সংস্থা র‌্যাবের পৃথক আবেদনে দ্বিতীয় দফায় আদালত বসে। রুদ্ধদ্বার আদালত কক্ষে শুনানি শেষে ৭ আসামির পৃথক পৃথক রিমান্ড মঞ্জুর হয়। এদের মধ্যে আসামি ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, গুলিবর্ষণকারী সাব ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীকে, এএসআই নন্দলালকে ৭ দিন করে এবং অপর চার আসামি যথাক্রমে কনস্টেবল সাফানুর করিম, কং কামাল হোসেন, কং আবদুল্লাহ আল মামুনকে ২ দিন করে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। র‌্যাবের পক্ষে এদের প্রত্যেককে ১০ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করা হয়। কিন্তু আদালত ৭ জনের মধ্যে ৩ জনকে রিমান্ড ও ৪ জনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেয়। আদালতের নির্দেশের পর প্রথম ৩ জনকে র‌্যাব জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছে। বাকি ৪ জনকে রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী এ হত্যাকা- পরবর্তী ঘটনা কিভাবে এবং কোন্দিকে মোড় নিচ্ছে তা নিয়ে বিভিন্ন মহল মুখিয়ে আছে। বৃহস্পতিবার ৭ আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করলে নানা জল্পনাকল্পনার অবসান ঘটে। তবে ২ আসামি প্রথম দফায় কেন আত্মসমর্পণ করেননি তার কোন ব্যাখ্যা আদালতে মেলেনি। কিন্তু আসামি পক্ষের আইনজীবী জানিয়েছেন, মামলার ৮ ও ৯ নম্বর আসামি যথাক্রমে এসআই টুটুল ও কনস্টেবল মোঃ মোস্তফা নামের কোন সদস্য কক্সবাজার জেলা পুলিশে নেই। প্রশ্ন উঠেছে, এ দুই আসামির নাম বিভ্রাটের কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা? এদিকে, এ হত্যাকা- নিয়ে সাতদিনের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি এ ঘটনা নিয়ে কি রিপোর্ট দিচ্ছে সেদিকেও কৌতূহল রয়েছে নানা মহলের। ওসি প্রদীপ কারাগারে যাওয়ায় টেকনাফের কয়েকটি এলাকায় সন্ধ্যার আগে মিষ্টি বিতরণের ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, টেকনাফ থানায় যোগদানের পর ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নিয়ন্ত্রিত পুলিশ বাহিনী ইয়াবাসহ মাদক কারবারিদের নিয়ন্ত্রণে ১৪৪টি এনকাউন্টারের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ রয়েছে, এনকাউন্টারে কিছু নিরীহ মানুষও প্রাণ হারিয়েছে। তবে একথা সত্য যে, বেশকিছু ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী জড়িত অনেকে এনকাউন্টারে নিহত হয়েছে। প্রথম দফায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেন টেকনাফ থানা থেকে প্রত্যাহারকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই নন্দলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন ও এএসআই লিটন মিয়া। অপর দুজনের বিষয়ে সরকার পক্ষে কোন বক্তব্য দেয়া হয়নি। তবে আসামি পক্ষ জানিয়ে দিয়েছে এসআই টুটুল ও কনস্টেবল মোঃ মোস্তফা নামের কোন পুলিশ সদস্য নেই। প্রথম দফায় ৭ আসামি নিয়ে শুনানির পর তদন্ত সংস্থা র‌্যাবের পক্ষে আদালতে আসামিদের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন পেশ করা হয়। প্রথম দফায় নির্দেশনা প্রদানের পর র‌্যাবের আবেদন পেলে আদালত কিছু সময়ের জন্য মুলতবি হয়। এরপর সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে দ্বিতীয় দফায় আদালত বসে। এ সময় আদালত কক্ষের পরিস্থিতি ছিল রুদ্ধদ্বার। আদালত র‌্যাবের আবেদন নিয়ে শুনানির পর ৭ আসামির প্রত্যেককে ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর হয়। উল্লেখ করা যেতে পারে, গত ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির অদূরে একটি চেকপোস্টে নিজ প্রাইভেট কার থেকে নেমে আসার নির্দেশ দেয়ার পর ফাঁড়ি ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী মেজর (অব) সিনহাকে পর পর কয়েক রাউন্ড গুলি করে হত্যা করেন। এছাড়া সিনহার সঙ্গে থাকা সহযোগী ক্যামেরাম্যান সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে পায়ে গুলি করেন। এ ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতির যাতে কোনরকম অবনতি না ঘটে সে লক্ষ্যে গত বুধবার সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ও পুলিশের আইজি বেনজীর আহমেদ কক্সবাজার যান এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। দুই সংস্থার শীর্ষ এই দুই প্রধান পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এর পর বুধবার বিকেলের দিকে নিহত মেজর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস কক্সবাজার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত টেকনাফ থানাকে এ মামলা রেকর্ড করার নির্দেশ দেয়ার পাশাপাশি তদন্তভার র‌্যাবের হাতে অর্পণ করেন। ওই দিনই রাত ১০টার পর টেকনাফ থানায় মামলাটি রেকর্ড হয়। ওই মামলায় ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, টেকনাফ থানার ওই সময়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশের নির্দেশে মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদকে গুলি করে হত্যা করেছে পরিদর্শক মোঃ লিয়াকত আলী। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের প্রত্যাহারকৃত ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলী। এরপর আসামিদের তালিকায় রয়েছেন টেকনাফ থানা থেকে প্রত্যাহারকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, শামলাপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই নন্দলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর ফরিদ, কামাল হোসেন, আবদুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া, এসআই টুটুল এবং কনস্টেবল মোঃ মোস্তফা। শেষোক্ত দুই আসামির নাম বিভ্রাটের ঘটনা ঘটেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ সূত্র নিশ্চিত করেছে, ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে প্রথমে ওই পুলিশ ফাঁড়ির ১৬ সদস্যকেই প্রত্যাহার করে নেয়া হয় জেলা পুলিশ লাইনে। এরপর ৪ আগস্ট ওসি প্রদীপ কুমার দাশ অসুস্থজনিত কারণ দেখিয়ে সকালে থানা থেকে বেরিয়ে যান। যাওয়ার আগে থানায় একটি জিডি করেন। ওসির দায়িত্ব অর্পণ করেন ইন্সপেক্টর (তদন্ত) এবিএম দোহাকে। এ ঘটনার পর পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে ওসির দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেন এবিএম দোহাকে। এরপর ৫ আগস্ট তিনি আর জনসম্মুখে আসেননি। তবে কক্সবাজারেই ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে তিনি চট্টগ্রামে আসেন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে প্রদীপ কুমার দাশ নগরীর দামপাড়া বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হতে চান। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সিএমপি কমিশনার মাহবুবর রহমানকে অবহিত করেন। কমিশনারের নির্দেশে প্রদীপ কুমার দাশকে সিএমপি হেডকোয়ার্টারে নিয়ে আসা হয়। সেখানে প্রদীপ কুমার তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় আত্মসমর্পণের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। ফলে সিএমপি কর্তৃপক্ষ তাকে যথেষ্ট পরিমাণ নিরাপত্তা দিয়ে বেলা পৌনে ২টার দিকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা করিয়ে দেয়। বিকেল ৫টা নাগাদ ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে কক্সবাজারে পৌঁছানো হয়। এর আগে কক্সবাজার আদালতে এই হত্যা মামলার অপর ৬ আসামিকে হাজির করা হয়। পরবর্তীতে প্রদীপ ও লিয়াকতসহ ৭ আসামি কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ হেলাল উদ্দিনের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এর আগে এসব আসামিকে হস্তান্তর করা হয় তদন্ত সংস্থা র‌্যাবের হাতে। বিকেল ৫টার পর র‌্যাব এই ৭ আসামিকে আদালতে সোপর্দ করে। এ সময় আদালত প্রাঙ্গণ ছিল জনাকীর্ণ। ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রয়োজনীয় আইনজীবী ও সরকার পক্ষের প্রসিকিউটর ছাড়া অন্যদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এমনকি গণমাধ্যম কর্মীদেরও আদালতে প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়নি। আসামিদের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা জামিন চাইলে আদালত তা নাকচ করে দিয়ে সকলকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেয়। এরপর তাদেরকে কড়া নিরাপত্তায় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। মামলায় আসামিদের পক্ষে এ্যাডভোকেট মোঃ জাকারিয়া এবং বাদী পক্ষে এ্যাডভোকেট রাখাল চন্দ্র মিত্র ও রাষ্ট্রপক্ষে কোর্ট ইন্সপেক্টর মামলার শুনানিতে অংশ নেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আদালতের নির্দেশে র‌্যাব ইতোমধ্যে এ মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেছে। সিএমপি কমিশনারের বক্তব্য ॥ সিএমপি কমিশনার মোঃ মাহবুবর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বৃহস্পতিবার সকালে দামপাড়ায় পুলিশের বিভাগীয় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হতে চান। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে তিনি অবগত হন। পরে তাকে সিএমপি হেডকোয়ার্টারে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি এ হত্যাকা- সংক্রান্তে মামলার আসামি হিসেবে আত্মসমর্পণের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। এর পর তাৎক্ষণিকভাবে তাকে কক্সবাজারে প্রেরণের আয়োজন শুরু হয়। যথেষ্ট নিরাপত্তা দিয়ে তাকে চট্টগ্রাম-আরাকান সড়ক দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পথিমধ্যে যেসব থানার অবস্থান রয়েছে সব থানাকে স্কট দিয়ে নিরাপত্তা সহকারে ওসি প্রদীপকে কক্সবাজারে পৌঁছে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে। বিকেল ৫টা নাগাদ ওসি প্রদীপকে নিয়ে নিরাপত্তা গাড়িসমূহ কক্সবাজারে পৌঁছায়। হত্যাকান্ড সংক্রান্তে এজাহারের বর্ণনা ॥ নিহত মেজর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বুধবার বিকেলে কক্সবাজার আদালতে দায়েরকৃত মামলার আর্জিতে জানিয়েছেন- গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের নির্দেশে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোঃ রাশেদ খানকে গুলি করেছেন পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী। ঘটনার কিছুক্ষণ পর ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি এসেই তখনও জীবিত থাকা মেজর সিনহাকে উদ্দেশ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তার শরীরে লাথি মারেন। মৃত্যু নিশ্চিত হলে একটি ‘ছারপোকা’ নামের গাড়িতে তুলে মেজর সিনহাকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। আর্জিতে বলা হয়েছে, ৩১ জুলাই রাতে একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভিডিও চিত্র ধারণ শেষে রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার দিকে মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিজস্ব প্রাইভেট কার নিয়ে টেকনাফ শামলাপুর পুলিশ চেকপোস্টে পৌঁছলে ১নং আসামি লিয়াকত ও ৩নং আসামি এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত গাড়ির গতিরোধ করলে মেজর সিনহা পরিচয় দেন। এর পরও সিনহার সঙ্গে থাকা ক্যামরাম্যান সিফাতকে টেনেহিঁচড়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে ফেলা হয়। এ সময় সিফাত দুই হাত উঁচু করে গাড়িতে বসে থাকা অবস্থায় সিনহার পরিচয় দেয়। পরিচয় দেয়ার পরও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। বলেন ‘তোর মতো অনেক মেজর দেখেছি’ বলে সিনহাকেও গাড়ি থেকে নামিয়ে ফেলা হয়। সাব ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে এ সময় ফোন দিলে ওসি তার নির্দেশনা প্রদান করেন। এর পর লিয়াকত আলী ‘ঠিক আছে স্যার শেষ করে দিতেছি’ বলেই মুহুর্তেই কয়েক রাউন্ড গুলি করলে সিনহা মাটিতে পড়ে যান। এ সময় সিনহা জীবন রক্ষার্থে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করলে সহযোগী পুলিশ সদস্যরা তাকে চেপে ধরে পুনরায় মাটিতে ফেলে দেয়। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য ১নং আসামি এসআই লিয়াকত আরও এক রাউন্ড গুলি করেন। মৃত্যু নিশ্চিত করে টেকনাফ থানা পুলিশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক সিনহাকে মৃত ঘোষণা করেন। হত্যা মামলার দায়িত্বে র‌্যাব ॥ সিনহা হত্যাকান্ড নিয়ে আদালতের নির্দেশে টেকনাফ থানা বুধবার রাতে তা গ্রহণ করে। বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার সকল বিবরণী র‌্যাবের কাছে প্রেরণ করা হয়। র‌্যাবের পক্ষ থেকে মামলার তদন্তভার দেয়া হয়েছে এএসপি জামিলকে। তদন্ত কর্মকর্তা থানা থেকে মামলা সংক্রান্ত কাগজপত্র পাওয়ার পর তার কার্যক্রম শুরু করেছেন বলে র‌্যাব সূত্রে জানানো হয়েছে। সিনহাকে হত্যার ক্লু এখনও অজানা ॥ মেজর (অব) সিনহাকে টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর চেকপোস্টে গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশ কেন গুলি করে হত্যা করেছে তার নেপথ্য তথ্য এখনও অজানা। কোন সূত্রই এ বিষয়ে কোন বক্তব্য দিতে পারছে না। কয়েক প্রত্যক্ষদর্শী শুধু জানিয়েছেন, সিনহা তার প্রাইভেট কারের দরজা খুলে হাত তুলে দাঁড়ালে পুলিশ তাকে গুলি করে। এর পর আরও দুটি গুলি করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। ঘটনার ১০ মিনিট পর টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ অকুস্থলে পৌঁছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি গুলিবিদ্ধ সিনহার শরীরে কয়েকবার লাথি মারেন। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, এসআই লিয়াকত কি কারণে সিনহাকে গুলি করেছেন। ওসি প্রদীপ কুমার দাশ দশ মিনিটের মধ্যেই বা কিভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছুলেন। এর আগে তিনি কোথায় ছিলেন। গুলিবিদ্ধ সিনহার শরীরে ক্ষিপ্তভাবে কেনইবা লাথি মারলেন, এসবের ক্লু এখনও অনুদঘাটিত। আশা করা হচ্ছে র‌্যাবের তদন্তে এসব তথ্য বেরিয়ে আসবে। ৬ আসামি ছিল পুলিশ নিয়ন্ত্রণে ॥ সিনহা হত্যাকান্ডকে ঘিরে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার পর টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর পুলিশ ফাঁড়ির সকল সদস্যকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে নিয়ে আসা হয়। তাদেরকে কড়া নিরাপত্তা ও নজরদারিতে রাখা হয়। এর বাইরে ছিলেন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। বুধবার তিনিসহ অপর ৯ জনের বিরুদ্ধে নিহত সিনহার বোন আদালতে মামলার আর্জি পেশ করলে ম্যাজিস্ট্রেট তা টেকনাফ থানাকে গ্রহণের নির্দেশ দেন। বুধবার রাতেই মামলা টেকনাফ থানায় নথিভুক্ত হয়। এর আগেই অর্থাৎ ৪ আগস্ট সকালে পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে ওসি প্রদীপ কুমার দাশ থানায় একটি জিডি করেন এই মর্মে যে, তার চিকিৎসার প্রয়োজন। এ জন্য তিনি ছুটি চান। দায়িত্ব দেন ওসি তদন্তকে। রাতেই পুলিশ সুপার ওসি তদন্তকে টেকনাফ থানার দায়িত্ব গ্রহণের নির্দেশ দেন। এর পর বৃহস্পতিবার সকালে তিনি চট্টগ্রামে এসে চিকিৎসার জন্য পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি হতে চান। পরে তিনি আসামি হিসেবে আত্মসমর্পণের ইচ্ছা প্রকাশ করলে তাকে ব্যাপক নিরাপত্তা দিয়ে কক্সবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়।
×