ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রফতানি বন্ধের আবেদন

কাঁচা চামড়া কেনার আগ্রহ ২০ জুতা কোম্পানির

প্রকাশিত: ২২:১৯, ৭ আগস্ট ২০২০

কাঁচা চামড়া কেনার আগ্রহ ২০ জুতা কোম্পানির

এম শাহজাহান ॥ সরাসরি লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশের শীর্ষ স্থানীয় ২০ জুতা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে কাঁচা চামড়া রফতানি বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে সম্প্রতি সরকারের কাছে আবেদন করা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে লেখা ওই আবেদনে বলা হয়েছে, ট্যানারি ও আড়তগুলোর পাশাপাশি জুতা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি লবণযুক্ত চামড়া নির্ধারিত মূল্যে কিনে নিতে প্রস্তুত রয়েছে। ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশে চামড়াজাতপণ্যের বড় বাজার তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে চামড়ার তৈরি জুতা, ব্যাগ, বেল্ট, পার্সসহ বিভিন্ন সামগ্রী। চামড়ার তৈরি সব জিনিসের বাজারমূল্য ভাল এবং রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা হচ্ছে। সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে নিজেদের কাঁচামাল প্রাপ্তি সহজলভ্য করতে শীঘ্রই চামড়াজাত পণ্য সামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কাঁচা চামড়া কিনতে শুরু করবে। জানা গেছে, সাভারের ট্যানারিগুলো থেকে ক্রাস্ট ও ফিনিশড লেদার কিনে নিয়ে দেশের শতাধিক প্রতিষ্ঠান চামড়া ও চামড়াজাতপণ্য তৈরি করছে। প্রতিবছর চামড়ার চাহিদা বাড়ছে। দেশে ও বিদেশে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে চামড়ার তৈরি জুতা, ব্যাগ, বেল্ট ও পার্সসহ বিভিন্ন সামগ্রী। গরুর চামড়ার তৈরি একটি বেল্ট কিনতে একজন ভোক্তাতে ব্যয় করতে হয় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। আর চার হাজার টাকার নিচে কোন জুতা নেই অভ্যন্তরীণ বাজারে। এসব সামগ্রী বিদেশে রফতানি করে আসে বিপুল অঙ্কের ডলার। দেশে বাজার তৈরির পাশাপাশি রফতানিতে এ্যাপেক্স ফুটওয়্যার, বে ইম্পোরিয়াম, পিকার্ড বাংলাদেশ, জেনি সুজ, এবিসি ফুটওয়্যার, রাইডার লেদার ব্যাগস এ্যান্ড লাগেজ, ইয়োকো লেদার এবং ঢাকা লেদার কর্পোরেশন অন্যতম উদাহরণ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। এ্যাপেক্স, বে ও জেনি সুজের সারাদেশের বিভিন্ন মার্কেট বিপণিবিতান ও শপিংমলে নিজস্ব শোরুম রয়েছে। চামড়ার জুতা থেকে শুরু করে চামড়ার তৈরি হরেক রকম পণ্যসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে এসব শোরুমে। এর পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের তৈরিকৃত জুতা, ব্যাগ, পার্স ও বেল্ট ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হচ্ছে। এ্যাপেক্স ফুটওয়্যার ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের এলডব্লিউজি নিরীক্ষায় গোল্ড সার্টিফিকেট সনদ পেয়েছে। এর ফলে সারাবিশ্বে রফতানি হচ্ছে এ্যাপেক্সের তৈরি পণ্যসামগ্রী। সাভারের হেমায়েতপুরে প্রতিষ্ঠানটির আন্তর্জাতিকমানের নিজস্ব ট্যানারি রয়েছে। জানা গেছে, জুতা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি কাঁচা চামড়া রফতানি বন্ধে আবেদন করেছে সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকটি সংগঠন। তাদের আবেদন গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ো পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশীয় শিল্পের স্বার্থ রক্ষা এবং চামড়ার নির্ধারিতমূল্য দুটোই কার্যকর দেখতে চায় সরকার। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, কাঁচা চামড়ায় সরকার নির্ধারিত মূল্য কার্যকর হবে। ট্যানারিগুলোর পাশাপাশি জুতা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কাঁচা চামড়া কিনতে চায়। তিনি বলেন, দেশেই চামড়ার তৈরি জুতাসহ সব ধরনের পণ্যসামগ্রীর বড় বাজার সৃষ্টি হয়েছে। এর বাইরে বিদেশে রফতানি হচ্ছে চামড়াজাত পণ্যসামগ্রী। আর এই শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল চামড়া। তাই দেশীয় শিল্পের স্বার্থ রক্ষায় সরকার সবকিছু করবে। এদিকে করোনা মহামারীসহ নানা সঙ্কটের কারণে এ বছর ৩০ শতাংশ কোরবানি কম হয়েছে। এতে করে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী কাঁচা চামড়া সংগ্রহ প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় ট্যানারিগুলো থেকে ফিনিশড ও ক্রাশড চামড়া সরবরাহ নিশ্চিত না হলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমদানিতে যেতে হবে। এ কারণে কাঁচা চামড়া রফতানি বন্ধ করে দেশেই তা প্রক্রিয়াজাতকরণে সরকারের সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে।
×