ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চামড়ার ন্যায্যমূল্য

প্রকাশিত: ১৮:৫৮, ৭ আগস্ট ২০২০

চামড়ার ন্যায্যমূল্য

চামড়াশিল্পের উন্নয়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সদিচ্ছা ও কার্যকর উদ্যোগের কমতি ছিল না। কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ, রফতানির অনুমতি, ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে অর্থের ব্যবস্থা ইত্যাদি। তারপরও চামড়ার দামে ঘটেছে অনাকাক্সিক্ষত বিপর্যয়। এবারও মূল্যবান চামড়াকে প্রায় মূল্যহীন করে তোলার অপপ্রয়াস চলেছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। ফলে বঞ্চিত ও ক্ষুব্ধ মানুষ অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে রাজশাহীতে নদীতে ফেলে দেয়া হয়েছে চামড়া। চট্টগ্রামে রাস্তার ওপর চামড়া ফেলে দিয়ে চলে গেছেন বিক্রেতারা। এটি যে চরম দুঃখজনক, তাতে কোন সন্দেহ নেই। ব্যবসায়ী, রফতানিকারক ও ট্যানারি মালিকরা মোটেও সুবিবেচনার পরিচয় দেননি, সেকথা বলাই বাহুল্য। সাধারণ কোরবানিদাতা, খামারি, মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার স্বার্থে চামড়ার ন্যায্যমূল্য পাওয়া জরুরী ছিল। এতে সব পক্ষেরই লাভ হতো। দুটো পয়সার মুখ দেখত মৌসুমি চামড়া ক্রেতা ও ফড়িয়া শ্রেণীর লোক। কিন্তু দেখা যাচ্ছে চামড়া ব্যবসায়ীরা লোভের তাড়নায় সরকারের কথা শোনেননি, সরকারের নির্ধারিত দাম কোরবানিদাতাদের দেননি, এমনকি সরকার যে এত সুবিধা করে দিল, তারও কোন মর্যাদা তারা রাখলেন না। ব্যবসায়ী, রফতানিকারক ও ট্যানারি মালিকরা কি চান দেশে চামড়াশিল্পের উন্নতি হোক? এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষ বছরে অন্তত একবার কিছু পয়সার মুখ দেখুক! এটি অত্যন্ত বৈষম্যমূলক যে, চামড়াজাত রকমারি পণ্যের বাজারমূল্য সাধারণ মানুষের নাগালে নেই। অপরপক্ষে পানির দামেও বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না কোরবানিতে পশুর চামড়া! অবশ্যই এর একটা বিহিত করা আবশ্যক। এটা সত্য যে, বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনার কারণে চামড়ার চাহিদা বর্তমানে কিছুটা কম। তার ওপর ট্যানারি মালিকরা বলছেন, গত বছরের চামড়াই তারা এখনও বিক্রি করতে পারেননি। আন্তর্জাতিক চাহিদা কম থাকা এবং এ বছরের শুরু থেকেই করোনা দুর্যোগ শুরু হওয়ায় সংশ্লিষ্ট দেশে তারা চামড়া পাঠাতে পারেননি। তারপরও এখনও দেশে ও বিদেশে চামড়ার যে চাহিদা রয়েছে, তাতে চামড়ার মূল্য এভাবে পড়ে যাওয়া কতটা সঙ্গত- সে প্রশ্ন থেকে যায়। দেশে বার্ষিক চামড়ার জোগানের অর্ধেকই আসে কোরবানির সময়। এ সময় চামড়া বেচাকেনায় এমন পরিস্থিতি কেন হলো, তা অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। এর পেছনে সুপরিকল্পিত সিন্ডিকেট রয়েছে কি? প্রসঙ্গত চামড়াশিল্প দেশীয় কাঁচামালভিত্তিক রফতানিমুখী শিল্প। জাতীয় প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, বৈদেশিক মুদ্রা আয় এবং মূল্য সংযোজনের নিরিখে এটি একটি সম্ভাবনাময় খাত। চামড়াশিল্পে সারা বছর ধরে ব্যবহৃত কাঁচামালের প্রায় অর্ধেক জোগান আসে কোরবানির পশুর চামড়া থেকে। এ সময় কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান নিশ্চিত করা সম্ভব হলে একদিকে মূল্যবান কাঁচামাল সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে এবং কোরবানিকৃত পশুর চামড়া বিক্রির মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আর্থিকভাবে উপকৃত হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের দাম বেশি। কেননা, কৃত্রিম চামড়ার কারণে প্রকৃত চামড়াজাত জুতাসহ অন্যবিধ পণ্য দ্রব্য বর্তমানে বিলাসপণ্য হিসেবে পরিগণিত হয়ে থাকে। আমরা ঈদের আগে সম্পাদকীয়তে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিলাম, এতিমখানার কর্তৃপক্ষ, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সংগৃহীত বা প্রাপ্য চামড়ার ন্যায্যমূল্য পাবেন তো? আশঙ্কাই সত্য হলো। কিন্তু এজন্য দায়ী কে বা কারা? আগামীতে দেশের স্বার্থে চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করায় সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, এমনটাই পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা।
×