ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জোয়ারের পানিতে ডুবছে বরিশাল

প্রকাশিত: ১৫:৪০, ৬ আগস্ট ২০২০

জোয়ারের পানিতে ডুবছে বরিশাল

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘু চাপ এবং পূর্ণিমার প্রভাবে বরিশালের মেঘনা, নগরীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কীর্তনখোলাসহ জেলার অধিকাংশ নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদীর পানি উপচে নগরীসহ অধিকাংশ জেলা ও উপজেলার নদী তীরবর্তী নিন্মাঞ্চল ডুবে গেছে। জানা গেছে, নগরীর নিন্মাঞ্চলসহ জেলার মেহেন্দিগঞ্জ, হিজলা, মুলাদীসহ বিভিন্ন উপজেলায় নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে এসব অঞ্চলের নিন্মাঞ্চলের বাসা-বাড়ি, রাস্তা ঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে নগরীর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কীর্তনখোলায় জোয়ারের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নগরীর পলাশপুর, রসুলপুর, চরেরবাড়ি কেডিসি, হাটখোলা, কলাপট্টি, শহরের প্রাণকেন্দ্র সদররোড, প্রেসক্লাব গলি, ব্যাপ্টিস মিশন, আমানতগঞ্জসহ নগরীর নিন্মাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। সেই সাথে বাসা-বাড়িতে পানি উঠতে শুরু করেছে। এদিকে বৃহস্পতিবার দিনভর হাল্কা ও মাঝারি ধরনের বৃষ্টি রয়েছে গোটা বরিশালজুড়ে। অপরদিকে জেলার মেহেন্দিগঞ্জ ও হিজলা উপজেলার পাশদিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনায় জোয়ারের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় মেহেন্দিগঞ্জের ১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৬টি ইউনিয়নের নিন্মাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, বাসা-বাড়ি, স্কুল, কলেজে জোয়ারের পানি ঢুকে কৃত্রিম বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। একইসাথে হিজলা ও মুলাদী উপজেলার পুকুর ও ঘেরের মাছসহ কয়েকশ’ হেক্টর ফসলি জমির বীজতলা তলিয়ে গেছে। এছাড়াও বরিশালের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় প্রবল স্রোতে ভাঙ্গনের শঙ্কা বেড়েছে নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের মাঝে। ইতোমধ্যে বরিশাল সদর উপজেলার লামচরি, বাবুগঞ্জের রহমতপুর, মেহেন্দিগঞ্জের শ্রীপুর, মুলাদী ও হিজলা উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় নদী ভাঙ্গনে ফসলি জমি, বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট বিলীন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরিশাল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলে যেমন নদ-নদীর সংখ্যা বেশি, তেমনি বর্ষা মৌসুমে ভাঙ্গনের হারটাও একটু বেশি থাকে। তবে এই মুহুর্তে বরিশাল জেলায় যেমন কোন ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ নেই, তেমনি কোন এলাকায় প্রবল ভাঙ্গনও দেখা দেয়নি। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সবশেষ হিসেব অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত কীর্তনখোলার পানি বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার, বাকেরগঞ্জের বুড়িশ্বর নদীর পানি বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার, আবুপুরের নয়াভাঙ্গুনি নদীর পানি বিপদসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার, ভোলার দৌলতখানের সুরমা-মেঘনা নদীর পানি বিপদসীমা ১১৪ সেন্টিমিটার, ভোলার তেঁতুলিয়া নদীর পানি বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার, মির্জাগঞ্জের বুড়িশ্বর বা পায়রা নদীর পানি বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার, আমতলীর বুড়িশ্বর/পায়রা নদীর পানি বিপদসীমার ৭ সেন্টিমিটার, ঝালকাঠির বিষখালী নদীর পানি বিপদসীমার ২২ সেন্টিমিটার, বেতাগীর বিষখালী নদীর পানি বিপদসীমার ১৪ সেন্টিমিটার, বামনার বিষখালী নদীর পানি বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার, পাথরঘাটার বিষখালী নদীর পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার, উমেদপুরের কচা নদীর পানি বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার বানারীপাড়া ও উজিরপুরের সন্ধ্যা, মেহেন্দিগঞ্জের কালাবদর ও তেঁতুলিয়া এবং ঝালকাঠির রাজাপুরের বিষখালী নদীর তীরবর্তী এলাকায় কিছুটা ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরিশালের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মাসুম জনকণ্ঠকে বলেন, পূর্ণিমা ও উজানের পানির চাঁপের কারণে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সরাসরি মেঘনার সাথে সম্পৃক্ত নদীগুলোর পানি বেশি বেড়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক মাহফুজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও হালকা বৃষ্টিপাতের কারণে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, লঘুচাপটি আরও ঘনীভূত হচ্ছে এবং আগামী ২/৩দিন লঘুচাপের কারণে বজ্রপাতসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
×