ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

৭৮ আহতের মধ্যে আছেন নৌবাহিনীর ২১ জন

বৈরুত বিস্ফোরণে ৪ বাংলাদেশী নিহত

প্রকাশিত: ২২:৩৩, ৬ আগস্ট ২০২০

বৈরুত বিস্ফোরণে ৪ বাংলাদেশী নিহত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় তিন বাংলাদেশী নিহত এবং ৭৮ জন আহত হওয়ার খবর দিয়েছে বাংলাদেশ মিশন। তবে গভীর রাতে বাসস জানায়, উক্ত বিস্ফোরণে চার বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। এর আগে বৈরুতে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) আব্দুল্লাহ আল মামুন বুধবার বলেন, নিহতরা লেবাননে বসবাস করে আসছিলেন। আহতদের মধ্যে বেশিরভাগই চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এখন হাসপাতালে আছেন ৮/১০ জনের মতো। খবর বিডিনিউজ ও বাসসর। আহতদের মধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২১ সদস্য রয়েছেন, যারা সেখানে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে নিয়োজিত ছিলেন। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা ‘সঙ্কটাপন্ন’ জানিয়ে আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘নৌবাহিনীর সাতজন এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছেন, বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন।’ মঙ্গলবার বিকেলে বৈরুত বন্দরের একটি বিস্ফোরকদ্রব্যের গুদামে ভয়াবহ বিস্ফোরণে পুরো লেবানন ও আশপাশের এলাকা কেঁপে ওঠে, ক্ষতিগ্রস্ত হয় বহু বাড়িঘর। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে (ইউনিফিল) মেরিটাইম টাস্কফোর্সের অধীনে লেবাননে নিয়োজিত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ বিএনএস ‘বিজয়’ তখন বৈরুত বন্দরেই নোঙর করা ছিল। বিস্ফোরণের ধাক্কায় জাহাজেরও ক্ষতি হয়েছে। লেবানন সরকার জানিয়েছে, বিস্ফোরণের ধ্বংস্তূপ থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১০০ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, আহত হয়েছেন চার হাজারের বেশি মানুষ। উদ্ধার কাজ এখনও চলছে, ফলে হতাহতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ২০১৩ সালে একটি জাহাজ থেকে জব্দ করা ২ হাজার ৭৫০ টন এ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বন্দরের একটি ওয়্যারহাউজে মজুদ করে রাখা হয়েছিল। কোনভাবে সেখানে আগুন লাগার পর ভয়ঙ্কর ওই বিস্ফোরণ ঘটে। স্থানীয় সময় ৬টার পর পর ওই বিস্ফোরণে বৈরুত ছাড়াও আশপাশের অনেক শহর কেঁপে ওঠে। কম্পন অনুভূত হয় ২৪০ কিলোমিটার দূরের দ্বীপরাষ্ট্র সাইপ্রাসেও, সেখানকার বাসিন্দারা এ ঘটনাকে ভূমিকম্প বলে মনে করেছিলেন। ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, বৈরুতের বন্দর এলাকা থেকে বড় গম্বুজ আকারে ধোঁয়া উড়ছে, এর কিছুক্ষণের মধ্যে বিকট বিস্ফোরণে গাড়ি, ভবন উড়ে যেতে দেখা যায়। বিস্ফোরণের ধাক্কায় বাড়িঘরের জানালার কাঁচ ও বেলকনি ভেঙ্গেও অনেকে আহত হন। বৈরুত বন্দরের যেখানে বিস্ফোরণ ঘটেছে, তার ৫ কিলোমিটারের মধ্যেই বাংলাদেশ দূতাবাসের অবস্থান। আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভূমিকম্প হলে যেমন ঝাঁকুনি হয় তেমনটা অনুভূত হয়েছিল আমাদের এখানে। তবে দূতাবাস ভবনের কোন ক্ষতি হয়নি। মিজানুরের বাড়িতে মাতম ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা মাদারীপুর থেকে জানান, কালকিনি উপজেলার শিকারমঙ্গল ইউনিয়নের কাজীকান্দি গ্রামের লেবাননে নিহত মিজানুর রহমান খান (২৫) এর বাড়িতে বইছে শোকের মাতম। পরিবারের ভরণপোষণের একমাত্র বড় সন্তানকে হারিয়ে পুরো পরিবারসহ গ্রামের মানুষ এখন নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে। বুধবার বিকেলে নিহতের বাড়ি গিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে লেবাননের বৈরুত শহরে যায় মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার শিকারমঙ্গল ইউনিয়নের কাজীকান্দি গ্রামের জাহাঙ্গীর খানের ছেলে মিজানুর রহমান খান। সেখানে একটি হোটেলে চাকরি করত মিজান। মঙ্গলবার লেবাননে বোমা বিস্ফোরণে মারা যায় মিজানুর। দেশের বাড়িতে মিজানুরের মারা যাওয়ার খবর এলে পুরো পরিবারসহ গ্রামের মানুষ শোকে নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে। ঢাকায় একটি কারখানায় মিজানুরের মা চাকরি করে কিছু টাকা জমায়। এছাড়া আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে এবং দুই লাখ টাকা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে মোট ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে মিজানুর লেবাননে যায়। পরিবারের সদস্যদের একটু সুখের আশায় লেবননে পাঠানো হয় মিজানুরকে। ভাই-বোনের মধ্যে মিজানুর সবার বড়। মিজানুররা তিন ভাই ও এক বোন। তার স্ত্রী ও তিন বছরের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। ঢাকায় কারখানায় কাজ করা অবস্থায় মিজানুরের মায়ের দুই হাতের ৬টি আগুল পুড়ে যায়। তিনি এখন অসুস্থ অবস্থায় গ্রামের বাড়িতেই থাকছেন। বাবা কৃষি কাজ করে কোন মতে পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে আছে। বাগরুদ্ধ কণ্ঠে মিজানুরের বাবা জাহাঙ্গীর খান বলেন, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে আমার সঙ্গে শেষ কথা হয়েছে। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি আমাদের মিজান বোমা বিস্ফোরণে মারা গেছে। আমি আমার সন্তানের লাশ দ্রুত দেশে ফেরত চাই। কালকিনি উপজেলার শিকারমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সিরাজুল ইসলাম মৃধা বলেন, মিজানুরের মারা যাওয়ার কথা শুনেছি। ওর পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহযোগিতাসহ যত ধরনের সহযোগিতা লাগবে আমি তা করব। লাশ দ্রুত দেশে আনার জন্যেও আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করব।
×