ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লবণ দেয়া কাঁচা চামড়া সরকার নির্ধারিত দামে বেচাকেনা হবে

প্রকাশিত: ২১:৫১, ৬ আগস্ট ২০২০

লবণ দেয়া কাঁচা চামড়া সরকার নির্ধারিত দামে বেচাকেনা হবে

এম শাহজাহান ॥ আগামী তিন মাস পর্যন্ত লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া সরকার নির্ধারিত দামে বেচাকেনা হবে। জেলা পর্যায়ের চামড়া আগামী সপ্তাহ নাগাদ ঢাকায় আসা শুরু হতে পারে। এছাড়া সারাদেশে কমিউনিটি পর্যায়ে কোরবানির চামড়া সংরক্ষণে একটি প্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছে সরকার। এই প্রজেক্টের আওতায় তিন মাস পর্যন্ত কাঁচা চামড়া লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করতে পারবেন মৌসুমি ব্যবসায়ী, স্থানীয় মসজিদ মাদ্রাসা ও স্থানীয় প্রতিনিধিরা। পরবর্তীতে দরকষাকষির মাধ্যমে চামড়া বেচাকেনা কিংবা রফতানির সুযোগ পাবেন সংরক্ষণকারীরা। কাঁচা চামড়া রফতানির সুযোগ না দেয়ার জন্য অনুরোধ করে চিঠি দিয়ে দিয়েছে এ খাত সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সংগঠন। তবে এখনও রফতানির অনুমতি চেয়ে কেউ আবেদন করেনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। কেস টু কেস ভিত্তিতে এবার রফতানির সুযোগ পাবেন ব্যবসায়ীরা। করোনা মহামারীর কারণে এ বছর কোরবানি কম হওয়ায় ৩০ শতাংশ চামড়া কম সংগৃহীত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জানা গেছে, সরকার নির্ধারিত দামের প্রত্যাশায় বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও রংপুর জেলার বিভিন্ন জায়গায় কমিউনিটি পর্যায়ে লবণ দিয়ে চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যে এসব চামড়া ট্যানারিগুলোতে বিক্রি করতে চায় মৌসুমি ব্যবসায়ী ও স্থানীয় ফড়িয়ারা। ইতোমধ্যে এসব চামড়া নির্ধারিত দামে বেচার বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নজরে আনা হয়েছে। তবে এর আগেই ট্যানারি মালিক ও আড়তদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে চামড়া রক্ষায় গঠিত কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি, কেন্দ্রীয় তদারকি কমিটি ও এ সংক্রান্ত বিভাগীয় ও মনিটরিং কমিটি। কমিটির কাছে আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সরকার নির্ধারিত মূল্যেই সারাদেশের চামড়া কেনা হবে। আগামী সপ্তাহ নাগাদ ঢাকার বাইরের চামড়াগুলো আসা শুরু হতে পারে। তবে কোরবানির পরে তিন মাস পর্যন্ত এসব চামড়া সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এদিকে কোরবানির দিন যারা লবণহীন চামড়া তড়িঘড়ি করে বিক্রি করে দিয়েছেন কিংবা যারা বেচতে না পারে ফেলে দিয়েছেন তারা ঠকেছেন বলে মনে করছে সরকার। কারণ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এবার আগে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। সরকারের নির্দেশনায় বলা হয়েছিল- কোরবানির পরই চামড়া লবণ দিয়ে ভালভাবে সংরক্ষণ করে রাখুন। কমিউনিটি পর্যায়ে চামড়া সংরক্ষণে প্রকল্প ॥ কমিউনিটি পর্যায়ে চামড়া সংরক্ষণে একটি প্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগামী কোরবানি ঈদের আগে এই প্রকল্পের আওতায় সারাদেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে চামড়া সংরক্ষণে অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। তিন মাস পর্যন্ত লবণযুক্ত চামড়া এসব অবকাঠামো বা গুদামে সংরক্ষণ করা যাবে। এতে করে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফড়িয়া ও স্থানীয় মানুষ কোরবানির চামড়া সংরক্ষণ ও মজুদকরণে এগিয়ে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে একটি ডিজাইন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রথম পর্যায়ে সরকারী উদ্যোগে চামড়া সংরক্ষণ প্রকল্পে অর্থায়ন করা হবে। পরবর্তীতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা নেয়া হতে পারে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন শিল্প খাত উন্নয়নে দুটি টেকনোলজি সেন্টার স্থাপন করা হচ্ছে। এর মধ্যে চামড়া শিল্প রয়েছে। এ খাত উন্নয়ন ও গবেষণায় টেকনোলজি সেন্টার কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। এসব প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। জানা গেছে, কমিউিনিটি পর্যায়ে চামড়া সংরক্ষণে উপজেলা এমনকি যেসব এলাকায় বেশি চামড়া পাওয়া যায় সেখানে ইউনিয়ন পর্যায়ে অবকাঠামো নির্মাণ করে দেয়া হবে। এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য কোরবানির কাঁচা চামড়ার সঠিক দাম নিশ্চিত করা। এতে করে চামড়া নিয়ে প্রতিবছর যেসব কারসাজি হয়ে থাকে তা বন্ধ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তিন মাস পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত মূল্যে চামড়া বেচাকেনা হবে ॥ আগামী তিন মাস পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত মূল্যে ট্যানারি মালিক ও আড়তদাররা মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফড়িয়াদের কাছ থেকে চামড়া কিনবেন। ইতোমধ্যে আড়দদার ও ট্যানারি মালিকদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হয়েছে। এছাড়া সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে কাঁচা চামড়া রফতানির সুযোগ না দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ট্যানারি এ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান মোঃ শাহিন আহমেদ জানিয়েছেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যে ট্যানারিগুলো চামড়া কিনতে প্রতিশ্রুতবদ্ধ। লবণযুক্ত চামড়া নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হবে, এ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই।
×