ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বন্যার্তদের পুনর্বাসন

প্রকাশিত: ২০:১২, ৬ আগস্ট ২০২০

বন্যার্তদের পুনর্বাসন

এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল বন্যার পানিতে ভাসছে। ক্রমান্বয়ে বাড়ছে নদ-নদীর জল স্রোত। বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও দুর্গত এলাকা মোটেও সমস্যামুক্ত নয়। বন্যার পানিতে ভাসমান পরিস্থিতির উন্নতি কবে হবে তাও নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। পাহাড়ী ঢল আর উজান থেকে নেমে আসা পানির স্রোতে প্লাবিত এলাকার অসহায় মানুষের যে দুর্দশা, তাও বন্যার সমূহ বিপর্যয়কে আরও ভয়াবহ করে তুলছে। দুর্গত এলাকার মানুষের নিত্য জীবন প্রবাহের যে অসহনীয় চিত্র, তাও বাংলাদেশের এক চরম ক্রান্তিকাল। কারণ এখনও আমরা করোনা দুর্যোগকে সামলাতে পারিনি। সেখানে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে বসেছে বিপর্যস্ত বন্যার সঙ্কট। কবে যে বন্যাসহ বর্ষার প্রকোপ থামবে তেমন সম্ভাবনা এখন অবধি নেই। বৃষ্টি ও বন্যা পরিস্থিতিকে আরও মারাত্মক অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেয়া যায় না। ঢাকার চারপাশের চারটি নদীর পানি বাড়তে থাকায় মহানগরীর আশপাশে বন্যার আশঙ্কা পরিলক্ষিত হচ্ছে। কয়েকটি নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করারও খবর রয়েছে। নতুন করে ভারি বৃষ্টিপাতে উজান থেকে পানি নামার ঢল দৃশ্যমান হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি যথাসম্ভব সামাল দিয়েই বর্তমান অবস্থা মোকাবেলা করতে হবে। এক্ষেত্রে সব থেকে জরুরী বন্যার্তদের প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে যাওয়া। চলতি মাসের মধ্যভাগ পার হতে পারে বন্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে। তবে নদী তীরবর্তী মানুষের ঘর-বাড়ি, সহায়-সম্পদ পানির প্রবহমান স্রোতে তলিয়ে যাওয়ার দুর্ভোগও প্রতীয়মান হচ্ছে। দেশের ৩১ শতাংশের বেশি নিম্নাঞ্চল পানিতে নিমগ্ন হওয়ার কারণে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ছাড়াও ফসলী জমির যে জঘন্য দৃশ্য বন্যার এক অবর্ণনীয় সঙ্কট। এর মধ্যে আবার পানিবন্দী হওয়া পরিবারের সংখ্যাও কয়েক লাখ। যে কোন দুর্যোগে বিপর্যস্ত মানুষ সাহায্য-সহযোগিতা পেতে আশ্রয় কেন্দ্রের ব্যবস্থা থাকলেও অনেকেই সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। সেটা সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর জন্য অসহনীয় দুর্দশা। সরকারী সাহায্য-সহযোগিতা ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। তবে দুর্গত এলাকার সব মানুষের দ্বারে পৌঁছাচ্ছে কি না তা বলা মুশকিল। ঢাকার আশপাশে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতিতে মানুষ, গৃহপালিত পশু-পাখি থেকে আরম্ভ করে সবজির ফসলি জমিও দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্গত এলাকার প্রায় প্রতিটি জায়গায় এমন দৃশ্য প্রতীয়মান হচ্ছে। শুধু দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ালেই সব সমস্যার সমাধান হবে না। বৃষ্টির পানি আর নদীর জল¯্রােতে চাষযোগ্য জমির যে অবর্ণনীয় দুর্দশা সেখান থেকেও সংশ্লিষ্টদের বের করে আনতে হবে। প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা দিয়ে ফসলি জমিকে বাঁচাতে হবে। বন্যার পানি কমতে শুরু করলে যথার্থ ব্যবস্থাপনায় সার, বীজ সরবরাহ করে সংশ্লিষ্ট কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো সব থেকে জরুরী। বিনা মূল্যে অথবা স্বল্প মূল্যে সার-বীজ কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। খাদ্য সম্পদের প্রয়োজনীয় উপকরণ রক্ষা করতে না পারলে চাহিদামতো খাদ্যপণ্যের জোগান দেয়া মুশকিল হয়ে পড়বে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং কর্র্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে যথেষ্ট নজরদারির আবশ্যকতা রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার জনগোষ্ঠীর জীবনে কোরবানি ঈদের কোন আনন্দ বার্তা এবার যেতে পারেনি। বন্যার পানি থেকে উদ্ধার পাওয়াই যেখানে অতি প্রয়োজনীয় একটি বিষয়, সেখানে কোরবানির আনন্দ অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। করোনা, বন্যা এবং ঈদ এবার যেন অন্য রূপে সংশ্লিষ্টদের জীবনে ভিন্ন মাত্রা নিয়ে এসেছে, যা কোনভাবেই সুখপ্রদ নয়।
×