ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাইশে শ্রাবণ

প্রকাশিত: ২০:১১, ৬ আগস্ট ২০২০

বাইশে শ্রাবণ

আজ বাইশে শ্রাবণ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের তিরোধান দিবস। আজ নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে স্মরণ করা হবে কবিকে। তবে বহিরঙ্গে নয়, অন্তরঙ্গে নানা ভার্চুয়াল মাধ্যমে। তাঁকে বিশেষভাবে স্মরণ করার জন্য দুটি দিন রয়েছে- পঁচিশে বৈশাখ এবং বাইশে শ্রাবণ। বাংলাদেশ ও ভারতে এ দুটি দিনেই তাঁকে বিশেষভাবে স্মরণ করা হয়। কিন্তু এমন কোন দিন নেই যেদিন তাঁকে আমরা স্মরণ করি না। বাংলা ভাষা ও বাঙালী সংস্কৃতির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন। আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তাঁর নাম। তাঁকে আমরা ভালবাসি শুধু কবি, সঙ্গীত রচয়িতা বা সুরস্রষ্টা হিসেবেই নয়, আমাদের মাতৃভাষার উন্নয়নে তিনি একা যে কাজ করে গেছেন মাতৃভাষাকে বিশ্ব অঙ্গনে পরিচিত করানোর জন্য তাঁর যে অবদান, সেইজন্যও আমরা তাঁকে ভালবাসি, শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাই। তাঁর প্রতি বাংলাভাষী মানুষের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। তৎকালীন পাকিস্তান আমলে তাঁকে বাদ দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। নিষিদ্ধ করা হয়েছিল তাঁর গান। এ দেশের মানুষ সে চেষ্টাকে প্রতিহত করেছে। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার ব্যাপারে প্রথম থেকেই অনীহা প্রকাশ করে এবং ভাষা ও সংস্কৃতি থেকে এ দেশের মানুষকে সরিয়ে দেয়ার নানা কূটকৌশল বেছে নেয়। সে সময় এ বিষয়ে নানা অপচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলন গুলি করে নিস্তব্ধ করে দেয়ার চেষ্টাও করা হয়। এসবের এক পর্যায়ে নিষিদ্ধ করা হয় রবীন্দ্রসঙ্গীত। কিন্তু এ দেশের মানুষ তাদের সব অপচেষ্টা নস্যাত করে দিয়েছে। এ দেশের মানুষ নানা সঙ্কটে, বিপর্যয়ে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছে। তারা রক্ষা করেছে তাদের সংস্কৃতিকে, তাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে। নানা দুর্যোগ-দুর্বিপাক সত্ত্বেও সব সময় সঙ্গে রেখেছে রবীন্দ্রনাথকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে দীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। এ জন্য পাড়ি দিতে হয়েছে দীর্ঘ চড়াই-উতরাইয়ের পথ। এ সময় আমাদের সঙ্গে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর লেখা, তাঁর গান আমাদের প্রেরণা দিয়েছে, সাহস যুগিয়েছে। তাঁর গান আমাদের দেশপ্রেমে অধিকতর সঞ্জীবিত ও উদ্বুদ্ধ করেছে, দেশ জননীর দুর্যোগে দেশের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে নিতে সাহস যুগিয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাঁর গান ‘আমার সোনার বাংলা’ আমাদের জাতীয় সঙ্গীত, আমাদের প্রাণের সঙ্গীত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ আমাদের ভাষাকে যেমন বিশ্ব অঙ্গনে নিয়ে গেছেন, তেমনি আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতির সঙ্গে বাইরের সংযোগ ঘটিয়ে দিয়ে গেছেন। তিনি আমাদের ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি হলেও তাঁকে বলা হয় বিশ্বকবি। তাঁর কাব্যে প্রতিফলিত হয়েছে বিশ্বমানবতা, বিশ্বজনীনতা, মানবিকতা ও মানবতা। তিনি ছিলেন সম্পূর্ণরূপে কূপমন্ডুকতার বিরুদ্ধে, কুসংস্কার ও গোঁড়ামির বিরুদ্ধে। রবীন্দ্রনাথ কাব্যে ও জীবনে ছিলেন সকল প্রকার সঙ্কীর্ণতার উর্ধে, মানবাধিকারে পক্ষে, অসাম্প্রদায়িক চিন্তাচেতনা এবং গণতান্ত্রিক ধারার পক্ষে। সর্বদাই ছিলেন যুদ্ধের বিরুদ্ধে, শান্তির পক্ষে সোচ্চার। প্রজা ও কৃষকের উন্নতির চিন্তা থেকেই নিজের নোবেল পুরস্কারের টাকা দিয়ে তিনি কৃষি ব্যাংক স্থাপন করেছিলেন। যথার্থ শিক্ষার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিশ্বভারতী, শান্তিনিকেতন। তাঁর শিল্প-সাহিত্য, গান চিরদিন চিরক্ষণ আমাদের প্রেরণা দিচ্ছে, উদ্বুদ্ধ করছে, আপ্লুত করছে। আজ প্রয়াণ দিবসে তাঁর স্মৃতির প্রতি আমাদের সর্বোত্তম শ্রদ্ধা জানাই।
×