ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে কোরবানির হাটে বিক্রেতার মুখে হাসি

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পশু সরবরাহ ছিল কম

প্রকাশিত: ২২:২৬, ৫ আগস্ট ২০২০

উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পশু সরবরাহ ছিল কম

ওয়াজেদ হীরা ॥ কোরবানির ঈদ শেষ তবে আনন্দের আবহ এখনও বইছে। মুসলমানদের অন্যতম এই ধর্মীয় উৎসবে রাজধানীর হাটগুলোতে শেষ মুহূর্তে তীব্র সঙ্কট দেখা দেয় কোরবানির পশুর। পশুর হাটগুলোতে পশুর চেয়ে মানুষই বেশি দেখা গেছে। যদিও দেশে পর্যাপ্ত কোরবানি যোগ্য পশু ছিল। তবে বিক্রি নিয়ে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সরবরাহ ছিল কম। মূলত, করোনা ভীতি ও বন্যার মতো দুর্যোগের কারণে বিক্রি হবে কিনা সেই উৎকণ্ঠায় শুরুর দিকে ঢাকার হাটগুলোতে অন্য বছরের চেয়ে কম গরু নিয়ে আসেন ব্যাপারীরা। সেই সঙ্গে দু’একদিন আগে রাজধানীর হাটে আসা পশুবাহী ট্রাক মহাসড়কের যানজটে আটকে যায়। সব মিলে পরিস্থিতি পাল্টে যায় রাজধানীর হাটগুলোর, আর দেখা যায় পশু সঙ্কট। এতে শুরুর দিকে লোকসানে বিক্রি করা খামারিরা শেষের দিকে চড়া মূল্যের দামে কিছুটা পুষিয়ে নিয়েছেন। আর শেষের দিকে অনেকেই পশু পায়নি তারা কিনেছেন অধিক মূল্যে। পশুর হাটে বেচাকেনার পরিস্থিতি ও সার্বিক তথ্য বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এছাড়াও একাধিক ব্যাপারীরাও জানিয়েছেন কয়েকটি কারণে এবার পশুর হাটে সঙ্কটের কথা। গরু বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ১০টা থেকে ভোর ৩টার মধ্যে রাজধানীর গরুর হাটগুলো থেকে বেশির ভাগ গরু বিক্রি হয়ে যায়। ঢাকার বড় গরুর হাট গাবতলী, আফতাবনগর ও ধূপখোলা মাঠ, হাজারীবাগ হাটসহ বিভিন্ন হাটের কয়েকজন গরুর ব্যাপারী জানান, এবার ভাল দামে গরু বিক্রি করতে পেরে তারা অনেক খুশি। গত দু’বছর অনেক গরু ব্যাপারীর লোকসান হয়েছে। জানা গেছে, শুরু থেকেই করোনায় ভয় পেয়ে বসেছিল মানুষদের। ফলে এবার গ্রামের হাটগুলো অনেক আগে জমে উঠলেও এ বছর জমজমাট ছিল না ফলে রাজধানীর হাট জমবে কিনা সেটি নিয়ে ব্যাপারীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল। এ জন্য প্রতিবছর ২০-৩০টি করে গরু নিয়ে আসা ব্যাপারীরা লোকসান শঙ্কায় গরু আনেন কম। আবার খামারিরাও ঢাকায় না এসে নিজের এলাকায় গরু বিক্রির চেষ্টা করেছেন। করোনায় মানুষের অর্থনৈতিক মন্দা ও চাকরি হারানোর কারণে বিক্রেতাদের ধারণ ছিল এ বছর অনেকেই পশু কম কোরবানি দেবেন। আবার রাজধানীতে হাটও ছিল কম। যার ফলে অনেকেই বেশি গরু রাজধানীমুখী করতে চায়নি। এবার শুরুর দিকে ক্রেতাদের আনাগোনাও কম ছিল ॥ শুরুর দিকে বাজারে পর্যাপ্ত গরু থাকলেও অন্য বছরের মতো হাটে ক্রেতাদের সমাগমও দেখা যায়নি। ফলে ঢাকায় আসা বিক্রেতারা প্রতিবেশী বা বন্ধু অন্য বিক্রেতাদের ঢাকায় আসতে নিষেধও করেছেন। নাটোরের ব্যাপারী কুদ্দুস মিয়া গত বছরও স্থানীয় বাজার থেকে কিনে কোরবানির হাটে আনেন ৫১ গরু। বিক্রি হয়েছিল। এ বছর শুরু থেকেই স্থানীয় হাটে দাম কম থাকায় গরু বেশি কেনেননি। তবে রাজধানীর হাটে আসেন। গরু আনেন মাত্র ১৫টি। শুরুর দিকে বিক্রি হচ্ছিল না তাই অজানা আশঙ্কায় তার অন্য সহযোগীদের নিষেধও করেন তিনি। কুদ্দুস মিয়া বলেন, ‘গ্রামেগঞ্জের হাট ভাল ছিল না, ঢাকায় শুরু দিকে ভাল ছিল না। তাই যারা আসার জন্য ফোন করছে হাটে যেমন অবস্থা তা বলছি। শেষের দিকে হাট ভাল হইছে।’ ফরিদপুরের ব্যাপারি জুলহাস মিয়া গত বছরের চেয়ে ২০টি গরু কম আনে এ বছর। মাত্র ১২টি গরু নিয়ে আফতাব নগর হাটে উঠেন। শুরুর দিকে ৫টি গরু বিক্রি করেন প্রতি গরুতে ১৫-৩০ হাজার পর্যন্ত লোকসান দেন। বেশি সঙ্কট ছিল ছোট ও মাঝারি গরু ॥ বরাবরই ছোট ও মাজারি আকৃতির গরুর চাহিদা বেশি থাকে আর বাজারে এ বছর শেষের দিকে একেবারেই ছিল না। বড় গরু থাকলেও অনেকেই বাজেটের সঙ্গে মেলাতে পারছিল না বলে কিনে নাই। বাজারে অধিকাংশ ক্রেতাই গিয়েছে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকার মধ্যে গরু কিনতে তবে বাজারে তখনও দেড় থেকে দুই লাখের উপরে গরু ছিল অনেক। করোনা ও বন্যায় গত বছরের চেয়ে কোরবানি কম হয়েছে ॥ করোনা আর দেশের ৩৩ জেলায় বন্যা থাকায় এবার দেশে ৫ শতাংশের মতো কম পশু কোরবানি হয়েছে। অর্থসঙ্কট থাকায় এবার অনেকেই কোরবানি করতে পারেননি। এবার সারাদেশে কোরবানি হয়েছে ১ কোটি পশু। গতবার এ সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৬ লাখ। কোরবানির সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় কর্মকর্তাদের মন্ত্রীর ধন্যবাদ ॥ কোরবানির সময় ঢাকাসহ সারাদেশের জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। করোনাকালীন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে যাতে কোন ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম না হয়, সে ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন মন্ত্রী। মঙ্গলবার সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে ঈদ পরবর্তী মত বিনিময়কালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এ সব কথা বলেন। খামারি-ব্যাপারীদের মুখেই শেষ হাসি ॥ রাজধানীর হাট শুরুর পর থেকেই অনেক বিক্রেতারা লোকসানও গুনেছেন। এরপরও যারা ধৈর্য ধরে শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন শেষ হাসি তারাই হেসেছেন। কেউ কেউ আগের ক্ষতিও পুষিয়ে নিয়েছেন। বলা যায়, বৃহস্পতিবার রাত থেকে তারা বিক্রেতারা ভাল দাম পাওয়া শুরু করেন। বিভিন্ন হাটে পশুর সঙ্কট দেখা দেয়ায় যে পশুগুলো হাটে ছিল তার মূল্য বেড়ে যায়। ক্রেতারা এক হাট থেকে অন্য হাটে ছুটে বেড়ান কাক্সিক্ষত পশুর খোঁজে।
×