ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এসেছে ২৬০ কোটি ডলার

জুলাইয়ে রেমিটেন্সে রেকর্ড

প্রকাশিত: ২২:১৮, ৫ আগস্ট ২০২০

জুলাইয়ে রেমিটেন্সে রেকর্ড

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে কোরবানির ঈদ ঘিরে রেমিটেন্সে উর্ধগতি আশা করা হয়েছিল, প্রত্যাশা ছাপিয়ে তা নতুন রেকর্ডও গড়েছে। নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে মোট ২৬০ কোটি (২.৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক মাসে এত বেশি রেমিটেন্স আগে কখনই আসেনি। গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে রেমিটেন্স বেড়েছে ৬৩ শতাংশ। আর গত জুন মাসের চেয়ে বেশি এসেছে ৪২ শতাংশ। এর আগে এক মাসে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছিল গত জুন মাসে ১৮৩ কোটি ২৬ লাখ ডলার। আর গত বছরের জুলাই এসেছিল ১৫৯ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। জানা গেছে, বিশ বছর আগে ২০০১-০২ অর্থবছরের পুরো সময়ে রেমিটেন্স এসেছিল ২৫০ কোটি ১১ লাখ ডলার। এখন এক মাসের রেমিটেন্সই তার চেয়ে বেশি। সদ্যসমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট রেমিটেন্স এসেছে ১ হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ (১৮.২০ বিলিয়ন) ডলার। বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ঈদকে কেন্দ্র করে জুলাই মাসে বেশি রেমিটেন্স আসবে, এটা প্রত্যাশিত ছিল। তবে, আড়াই বিলিয়ন ডলারের বেশি আসবে, এটা কারও ধারণার মধ্যে ছিল না। সত্যিই সবাইকে অবাক করে দিয়েছেন আমাদের প্রবাসীরা।’ আহসান মনসুর বলেন, ‘এই মহামারীকালে পরিবার-পরিজনের প্রয়োজনে সর্বশেষ জমানো টাকা দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। অনেকে আবার দেশে ফিরে আসার চিন্তা-ভাবনা করছেন; তাই যা কিছু আছে সব আগেই দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এ সব কারণেই রেমিটেন্স বেড়েছে। এরপর কী হবে, সেটাই চিন্তার বিষয়। আমার ধারণা, চলতি আগস্ট মাস থেকেই রেমিটেন্স কমে যাবে।’ রেমিটেন্সের এই গতি বাড়ার পেছনে হুন্ডি বন্ধ হওয়াও একটি কারণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রবাস থেকে বাংলাদেশীদের পাঠানো অর্থের একটি অংশ দেশে আসে অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আসে না বলে ওই অর্থটি হিসাবের বাইরে থেকে যায়। তবে এখন করোনাভাইরাসের কারণে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সব কিছু বন্ধ থাকায় হুন্ডিও প্রায় বন্ধ। সেই কারণে ব্যাংকের মাধ্যমেই অর্থ পাঠাতে হচ্ছে বলে হিসাবও বাড়ছে। এছাড়া রেমিটেন্সের গতি ধরে রাখতে গত অর্থ বছরে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করেছিল সরকার। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরেও এই ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হয়েছে। সেটাও রেমিটেন্স বাড়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হয়, কেননা বৈধ পথে অর্থ পাঠালেই কেবল এই প্রণোদনা পাওয়া যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ (১৮.২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। এই অঙ্ক আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোট ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন রেমিটেন্স এসেছিল। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৬ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা, যা ছিল আগের বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল আরও বেশি; ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। রিজার্ভ ৩৭.৩ বিলিয়ন ডলার ॥ রেমিটেন্সের উপর ভর করে বাংলাদেশের বিদেশী মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভও সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থান করছে। সোমবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। প্রতিমাসে ৪ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসেবে এই রিজার্ভ দিয়ে নয় মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। এক বছর আগে গত বছরের ২৯ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার। এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ বেড়েছে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, গত ২৪ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২ জুলাই সেই রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। এরপর ৭ জুলাই এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) মে-জুন মাসের ৭২ কোটি ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে প্রবাসীরা বেশি রেমিটেন্স পাঠানোয় সেই রিজার্ভ ২৯ জুলাই ৩৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। আকুর জুলাই-আগস্ট মেয়াদের আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে। তার আগ পর্যন্ত রিজার্ভ ৩৭ বিলিয়ন ডলারের উপরেই অবস্থান করবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ-এই নয় দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পর পর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করতে হয়।
×