ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মানুষের উন্নত জীবন ধারা নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য

প্রকাশিত: ২২:১৬, ৫ আগস্ট ২০২০

মানুষের উন্নত জীবন ধারা নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য আবারও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে দায়ী করে বলেছেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর দেশের জনগণ তাদের সব সম্ভাবনা হারিয়ে ফেলে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার কাজ করে যাচ্ছে। মানুষের উন্নত জীবন ধারা নিশ্চিত করাই আমার মূল লক্ষ্য। জাতীয় শোক দিবস ২০২০ উপলক্ষে আওয়ামী লীগের মাসব্যাপী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে গত রবিবার সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে কৃষক লীগের উদ্যোগে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচী এবং অনাথদের মাঝে ঈদ উপহার, মৌসুমি ফল ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠান উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কলে যুক্ত হয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা উপহার দেন। কিন্তু দেশী-বিদেশী চক্র যারা দেশের এই স্বাধীনতা চায়নি এবং এতে বিশ্বাসও করত না, এমনকি স্বাধীনতা অর্জনে কোনরূপ সহযোগিতা পর্যন্ত করেনি, তারাই ষড়যন্ত্র করে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। বিদেশে থাকায় আমি ও আমার ছোট বোন শেখ রেহানা ১৫ আগস্টের সেই ঘটনা থেকে প্রাণে বেঁচে যাই। স্বাধীনতার পরে জাতির পিতার গতিশীল নেতৃত্বে দেশ যখন আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিক সেই সময়ই তাকে হত্যা করা হয়। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের পর দেশের জনগণের সকল সম্ভাবনা হারিয়ে যায়। বর্তমান সঙ্কটকালে সরকার ও দলের পক্ষ থেকে অসহায় মানুষের দ্বারে দ্বারে খাবার পৌঁছে দেয়ার প্রচেষ্টা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গরিব, এতিম ও অসহায়দের মুখে খাবার তুলে দেয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। মহামারীর সময়ে সরকার জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাদের রক্ষায় সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ সময় তিনি দলের প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে বঙ্গবন্ধুর জীবনী পড়ার এবং তার আদর্শ বাস্তবায়নে ব্রতী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এ জন্য জাতির পিতা সম্পর্কে সবাইকে জানতে হবে। বঙ্গবন্ধুর জীবনী পড়লে তার আদর্শ বাস্তবায়নে কাজ করতে পারবেন। দুঃসময়ে জনগণের পাশে দাঁড়ানোয় আওয়ামী লীগ এবং এর সকল সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার এই সময়ে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোও ভাল কাজ করছে। তিনি শোকের মাসে তার পরিবারের সদস্যদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বলেন, ‘এই মাসে আমি আমার সবাইকে হারিয়েছি, তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।’ এ সময় তিনি বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি মহামারীর মধ্যে শোকের মাস আগস্টের শুরুতে রক্তদান ও প্লাজমা সংগ্রহ কর্মসূচী শুরু করায় কৃষক লীগকে ধন্যবাদও জানান। প্রধানমন্ত্রী ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে অব্যাহতভাবে কাজ করার জন্য দলের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়ে বলেন, বাঙালীর কল্যাণ নিশ্চিত করতে এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গঠন করতে বঙ্গবন্ধু তার জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। আমরা যদি বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারি, তবেই জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। তার সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ সরকারের লক্ষ্য জনগণের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করে তাদের একটি সুন্দর জীবন উপহার দেয়া। জনগণ যাতে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা এবং বসবাসের জায়গা পায় সে লক্ষ্যে আমরা আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করেছিল। কিন্তু ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ এক অন্ধকার যুগে আচ্ছন্ন ছিল। আমরা ২০০৯ সালে জনগণের বিশাল রায়ে পুনরায় ক্ষমতায় আসি। এরপর থেকে কৃষক-শ্রমিকসহ দেশের সর্বস্তরের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। অনুষ্ঠানে নিজ বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগস্ট এলেই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকে পুরো জাতি, তার নিরাপত্তা নিয়ে সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, এ আগস্ট মাসে জাতির পিতা ও তার পরিবারের সদস্যদের বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড সংঘঠিত হয়েছিল। ১৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে টার্গেট করে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। তাই বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নিরাপত্তা নিয়ে সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাদুর্যোগ মোকাবেলায় যখন সরকার সফলতা দেখাচ্ছে, তখন ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি কুচক্রী মহল এ সফলতার দুর্গে ফাটল ধরানোর অপচেষ্টা করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানা প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতা জয় করে মহাদুর্যোগের এ সময়ে জনগণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এবং তার নির্দেশে দলীয় নেতাকর্মীরা মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। কেউ যেন না খেয়ে মারা না যায় সেদিকে খেয়াল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। যে কোন দুর্যোগ এড়িয়ে না গিয়ে শেখ হাসিনা সুদক্ষ নাবিকের মতো হাল ধরেন। আর মিডিয়ার কল্যাণে টিকে থাকা বিএনপি সরকারের সমালোচনায় লিপ্ত হয়েছে। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। কৃষকলীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ রোকেয়া সুলতানা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি। প্রধানমন্ত্রীকে মোদি-মমতার ঈদ শুভেচ্ছা ॥ পবিত্র ঈদ-উল- আজহা উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের জনগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী গত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি বার্তা পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানান। মোদির বার্তাকে উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঈদ-উল- আজহার উৎসব, যা ভারতের বেশ কয়েকটি অংশেও পালিত হয়, আমাদের গভীর ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক সংযোগের কথা মনে করিয়ে দেয়। তিনি বলেন, আমরা আশা করি, এই উৎসবটি আমাদের নিজ নিজ সমাজে শান্তি ও সহনশীলতার চেতনা আরও বাড়িয়ে তুলবে এবং আমাদের দু’দেশের মধ্যে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ককে উৎসাহিত করবে।’ প্রেস সচিব বলেন, নরেন্দ্র মোদি ঈদ উপলক্ষে শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের সকল মানুষের সুস্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধি কামনা করেছেন। চলমান করোনাভাইরাস মহামারী সম্পর্কে বলতে গিয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী, শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে তার প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু উভয় দেশ কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলা করে চলেছে, আমরা আপনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অধীনে বাংলাদেশে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে তার জন্য প্রশংসা করি।’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী আস্থা ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা এই চ্যালেঞ্জিং সময় পাড়ি দিতে সক্ষম হব। স্বাস্থ্য খাতে সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ আপনাদের যে কোনও উদ্যোগে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছি।’ এদিকে ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এ শুভেচ্ছা জানান। চিঠিতে মমতা বলেন, ‘পবিত্র ঈদ-উল- আজহা উপলক্ষে আপনাকে, আপনার পরিবারকে এবং আপনার মাধ্যমে সকল বাংলাদেশীকে আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।’ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে আরও বলেন, ‘ঈদ-উল-আজহা ত্যাগের উৎসব। বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতবর্ষ তথা পশ্চিমবঙ্গেও এই দিনটি যথাযথ মর্যাদা সহকারে পালিত হয়। আশা করব এই উৎসব আপনার খুব ভাল কাটবে।’ মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘ভৌগোলিকভাবে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ ভিন্ন হলেও আমরা পরস্পরের একান্ত আপন। দুই বাংলার ভাষা ও সংস্কৃতি এক। তাই উৎসবের আনন্দও ভাগ করে নিতে এই পত্রের অবতারণা।’ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনার নেতৃত্বে আমাদের পরম প্রতিবেশী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আরও শ্রীবৃদ্ধি হবে, এই কামনা করছি।’ চিঠিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছা ॥ প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। পাশাপাশি শুভেচ্ছার নিদর্শনস্বরূপ ঈদের দিন প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর মোহাম্মদপুরের গজনভি রোডে অবস্থিত শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন কেন্দ্রে (মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ার-১) অবস্থানরত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের ফুল, ফল ও মিষ্টি উপহার পাঠান। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী ব্যক্তিগত সচিব-২ গাজী হাফিজুর রহমান লিকু, উপ-প্রেস সচিব কে এম সাখাওয়াত মুন এবং সহকারী প্রেস সচিব এবিএম সারওয়ার-ই-আলম সরকার সকালে তাদের হাতে এই উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যরা স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ঈদ ও পহেলা বৈশাখের মতো প্রতিটি জাতীয় দিবস ও উৎসবে তাদের স্মরণ করায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তারা বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্ট হত্যাযজ্ঞের শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
×